somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আগে পরে কিছু নেই (গল্প)

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'তোমার নাম নীল?'
এই নিয়ে তিনবার তিনি এই প্রশ্ন করলেন। কোন একটা কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত এরকম একটা ভাব। তার ভিতরে যেন অনেক কষ্টে আমার নাম জিজ্ঞেস করার সময় বের করছেন।
'জী স্যার। আকাশের রঙে নাম। বাংলায় নীল, ইংরেজিতে 'ব্লু'। আরবীতে কি জানি না স্যার।' মেজাজটা একটু খারাপ হলেও দাঁত কেলিয়ে হাসি।
'ভাল নাম কি?'
'ভাল নাম স্যার অবনীল।'
'অবনীল কি ধরনের নাম?'
'খুব সুন্দর নাম স্যার। নীলের সাথে তৎসম উপসর্গ 'অব' যোগে অবনীল। অব উপসর্গ অল্প বোঝাতে ব্যবহার হয়। সে হিসেবে অবনীল পছন্দ না হলে আপনি আমাকে হালকা নীল ও ডাকতে পারেন। কিছু মনে করব না।'
বাংলা ব্যাকরণে আমার জ্ঞান দেখে ওনাকে বিশেষ খুশি মনে হল না।
'আমি বলতে চাইছি, মোহাম্মদ, আহমেদ কিছু নাই?'
'না স্যার। আগে পরে কিছু নাই। আমার বাবা নাম রাখছিলেন। উনি জীবন নিয়ে নানা দার্শনিক ভাবনা-চিন্তায় ব্যস্ত থাকতেন। আমার মনে হয় নামের বাকিটা রাখতে উনি ভুলে গেছিলেন। স্কুল কলেজে আমার নামই হয়ে গেছিল 'অবনীল আগে পরে কিছু নাই'। নতুন কোন স্যার-ম্যাডাম রোল কল করলেই জিজ্ঞেস করতেন, শুধু অবনীল? আগে পরে কিছু নাই? সে হিসেবে স্যার আমার বন্ধুদের নামকরণ সার্থক।'

আমার বকবকানিতে ভদ্রলোক বেশ বিরক্ত হয়েছেন মনে হচ্ছে। হয়ত রেগেও গেছেন। তবে ব্যবহারে রাগ প্রকাশ পাচ্ছে না। এই ধরনের অতি ভদ্রলোকগুলো সহজে রাগ প্রকাশ করেন না। এদের রাগিয়ে মজা। চড়-থাপ্পড়ের আশঙ্কা কম। অবশ্য রেনুর দিক থেকে একটা ভয় থেকে যায়।

ভদ্রলোক রেনুর বাবা, শিল্পপতি আখতার হোসাইন চৌধুরী। রেনু আমার প্রেমিকা। সেই হিসেবে ভদ্রলোকের সাথে আমার জটিল একটা সম্পর্ক। রেনুই আজকে আমাদের মীটিং এর আয়োজক। তার মতে আমার তার বাবার সাথে দেখা করে ভালবাসার দাবি জানানো উচিত। সেই দাবি-দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যেই আমার আগমন। অবশ্য কথাবার্তা যেদিকে যাচ্ছে তাতে দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে খুব একটা আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না।

'রেনু তোমার বন্ধু?'
'জী, স্যার।'
'এত স্যার স্যার বলছ কেন? আমি তো তোমার স্যার না!'
'স্যার আপনাকে দেখেই একটা ভক্তি ভাব আসছে। সেই ভক্তি ভাব থেকেই স্যার বলছি।'
'যাই হোক আর স্যার বলবে না।'
'ঠিক আছে স্যার।'
এই বার মনে হল ভদ্রলোক একটু খেপছেন।
'কি করা হয়?'
রেনুর বাবা ভাববাচ্যে চলে এসেছেন। তাহলে ইনি সেইসব ব্যক্তিদের একজন যারা রেগে গেলে ভাববাচ্যে কথা বলা শুরু করেন।
'এখনও কিছু না। বেকার। একটু লেখালেখির চেষ্টা করি, কিন্তু কেউ ছাপাতে চায় না।'
'ছাপাতে চায় না কেন?' প্রশ্নের ভঙ্গীতে এটাও বুঝিয়ে দিলেন যে, তোমার বস্তাপচা লেখা না ছাপানোরই তো কথা।
'প্রকাশকরা নতুনদের লেখা ছাপাতে চান না। তাতে তাদের ব্যবসা চলে না। অবশ্য ঠিকই করে। আমি প্রকাশক হলেও তাই করতাম। নতুন লেখকদের তাড়ানোর জন্য বিদেশী কুকুর পুষতাম।'
'প্রকাশকরা লেখক তাড়ানোর জন্য কুকুর পোষেন নাকী?' ভদ্রলোকের চোখে কৌতুক। একটু সহজ হয়েছেন মনে হচ্ছে।
'না এখনও না। আপাতত দারোয়ান দিয়েই কাজ চলছে। তবে আমার ধারণা অচিরেই কুকুর পোষা শুরু করবেন। আমরা নতুন লেখকেরা তখন দৌড়ানোর প্র্যাকটিস করে নিয়ে প্রকশকদের সাথে দেখা করতে যাবো।'
রেনুর বাবা শব্দ করে হেসে ফেললেন। বোধহয় উনি কল্পনায় আমাকে হাফপ্যান্ট-গেঞ্জি পরা অবস্থায় কুকুরের তাড়া খেয়ে দৌড়ে পালাতে দেখতে পাচ্ছেন। আমার ভবিষ্যৎ দুরাবস্থার কথা ভেবে আমিও একটু হাসি।
'তো, রেনুকে বিয়ে করলে খাওয়াবে কি?'
বিপদ সংকেত। ভদ্রতা শেষ। এবার ডাইরেক্ট অ্যাকশান।
'জী, পরিকল্পনা আছে বিয়ের পর আপনার কোম্পানিতে জয়েন করব। সেই বেতনেই আশা করি আমাদের দুজনের চলে যাবে।' বিনীত ভঙ্গীতে বলি।
'তোমার লজ্জা করল না এরকম বলতে?' রেনুর বাবার মুখ রাগে থমথমে।
'স্যার, হবু শ্বশুরের কাছে বলতে আর লজ্জা কী?' আমি আরো বিনীত ভাবে বলি।
'তোমার মতো স্কাউন্ড্রেল কে রেনু কিভাবে পছন্দ করল? আশ্চর্য!'
'সেটা বোধহয় রেনুই ভালো বলতে পারবে। ওকে একটা ফোন দিয়ে জেনে নিলে মনে হয় ভালো হবে।'
'কিছু জানাজানির দরকার নেই। Now you get lost from here.' ভদ্রলোকের ফর্সা মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে।

আমি আর ঘাঁটালাম না। কিঞ্চিৎ নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছি। এই সুন্দর বিকেলটায় সিকিউরিটি গার্ডের চড়-থাপ্পড় খাওয়ার কোন মানে হয় না। রেনুর বাবাকে লম্বা একটা সালাম জানিয়ে ওনার কথামত ওনার অফিস থেকে হারিয়ে গেলাম।

রেনুর বাবার বিশাল অফিস বিল্ডিং এর সামনে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরাই। এখন কোথায় যাওয়া যায় ভাবতে থাকি। আপাতত কয়েকদিন রেনুর সাথে দেখা করা যাবে না। রেনুর জন্য একটু কষ্ট হয়। মেয়েটা বুঝতে পারে না যে ও যেটা চাইছে সেটা সম্ভব নয়। কোন সুস্থ মানুষ রেনুর সাথে আমার মতো একটা ভ্যাগাবন্ডের বিয়েতে রাজী হবে না। তর্কের খাতিরে নাহয় ধরলাম যে, আমি যদি ভদ্রভাবে রেনুর বাবার সাথে কথা বলতাম তাহলে হয়ত উনি বিয়েতে রাজী হতেন এবং হয়তোবা বিয়ের পর আমাকে তাঁর কোম্পানিতে চাকরী দিতেন (যেটা রেনুর ধারণা)। কিন্তু আমার পক্ষে সেটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

মনটা একটু তিতা তিতা লাগে। আমি হাঁটা শুরু করি। দেখি, শফিকের ওখানে যাই। বিকেলটা খুব সুন্দর। রেনুর সাথে কিছু সময় থাকতে পারলে এটা আমার জীবনের একটা চমৎকার বিকেল হতে পারত।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×