somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বানান আসর- ৩ : উ-কার না ঊ-কার

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

''কেবল আমার মত অনভিজ্ঞ ও নতুন পোড়োদের পক্ষ থেকে পণ্ডিতদের কাছে আমি এই আবেদন করে থাকি যে, ব্যাকরণ বাঁচিয়ে যেখানেই বানান সরল করা সম্ভব হয় সেখানে সেটা করাই কর্তব্য তাতে জীবে দয়ার প্রমাণ হয়।'' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বানান-বিধি ২
তিক্ত বানানে রিক্ত আমরা। তৎসম শব্দগুলো আমাদের তিক্ততা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
এক সময় সংস্কৃত ভাষাপ্রেমিকগণ মূল প্রাকৃত বাংলাকেই বাংলা সাহিত্যে নিষিদ্ধ করেছিল। বাংলাকে তারা সংস্কৃতের উপভাষা বানিয়ে ফেলেছিল। বাংলার ওপর খবরদারি করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত সংস্কৃত ভাষারই মৃত্যু হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের অবিরাম প্রচেষ্টায় এ খবরদারি অনেকটাই কেটে গিয়েছিল। বানান-বিধি ২-এ রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য দেখুন, ''সংস্কৃত ভাষা ভালো করে জানা না থাকলে বাংলা ভাষা ব্যবহারের যোগ্যতা থাকবেই না, ভাষাকে এই অস্বাভাবিক অত্যাচারে বাধ্য করা পাণ্ডিত্যাভিমানী বাঙালির এক নূতন কীর্তি। যত শীঘ্র পারা যায় এই কঠোর বন্ধন শিথিল করে দেওয়া উচিত। বস্তুত একেই বলে ভূতের বোঝা বওয়া। এত কাল ধরে সংস্কৃত ব্যাকরণের সাহায্য না নিয়ে যে বহুকোটি বাঙালি প্রতিদিন মাতৃভাষা ব্যবহার করে এসেছে এতকাল পরে আজ তাদের সেই ভাষাই বাংলা সাহিত্যে প্রবেশের অধিকার পেয়েছে।"
আজকের আলোচনা বানানে উ-কারের হ্রস্ব ও দীর্ঘ স্বর ব্যবহার নিয়ে। কোথায় উ (ু)-কার আর ঊ (ূ)-কার বসবে? বাংলা শব্দে কিন্তু দীর্ঘ ঊ(ূ)-কার নেই। তাহলে আছে কোথায়? শুধু তৎসম শব্দে। অনেক সময় এই উ-কারের প্রভেদে অর্থের পরিবর্তন হয়ে যায়। দেখুন :
দুর/দূর, কুজন/কূজন, কুল/কূল, পুত/পূত, পুর/পূর, সুতি/সূতি, অনুপ/অনূপ, অনুদিত/অনূদিত, কুট/কূট, ধুম/ধূম, আহুতি/আহূতি;ইত্যাদি অজস্র শব্দের উচ্চারণই অভিন্ন, তবু বানানের তারতম্যের কারণে অর্থ আলাদা হয়ে যেতে দেখা যায়।
বাংলায় নাকি উ-কার (ু) ব্যবহার হয় হাজারে ১৭টা আর ঊ-কার (ূ) হাজারে মাত্রই ১টা। তাই 'ঊ' ব্যবহার কিন্তু সত্যিই সীমিত। নির্বিবাদে যত্রতত্র ঊ ও তার-কার চিহ্নের 'ব্যবহার' দেখে তা বোঝার উপায় নেই কিন্তু।
সংস্কৃত বানানরীতি অনুযায়ী কিছু কিছু শব্দে ঊ ব্যবহার না করলেই নয়, তাই রয়ে গেছে। কিন্তু এ নিয়ে আমাদের আতঙ্ক যেন কিছুতেই দূর হওয়ার নয়। তাই প্রায়ই বিপদে পড়তে হয় কোথায় উ-কার দেব আর কোথায় ঊ-কার তা ভেবে না-পেয়ে। এর কি কোনো সহজ সমাধান নেই? হ্যাঁ, আছে।

উ-কার (ু) ব্যবহৃত হবে-
যেসব তৎসম শব্দের বানানে হ্রস্ব ও দীর্ঘ উভয় স্বর (উ, ঊ) অভিধানসিদ্ধ, সে ক্ষেত্রে এবং অ-তৎসম (তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র) শব্দের বানানে শুধু হ্রস্বস্বর (উ ু ) যুক্ত হবে। যেমন : শুটিং, চুরি, খুশি, ছুরি, টুপি, কুমির, বুড়ি, ছুঁড়ি, নিচু, চুন, পুব, ভুখা, মুলা, পুজো, উনিশ, উনচল্লিশ, কুলো, মুড়ি, ঝুড়ি ইত্যাদি।
বিধি
ক. যেসব তৎসম (সংস্কৃত) শব্দে উ ঊ উভয় শুদ্ধ সেইসব শব্দে কেবল উ এবং তার-কার চিহ্ন উ-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন : উর্ণা, উষা, ভ্রু ইত্যাদি।
খ. অনেক সংস্কৃত শব্দ বাংলায় আসার পথেই বাংলাভাষীর মুখে মুখে তার কুলীন দীর্ঘস্বর হারিয়েছে। উদাহরণ : [তৎসম >তদ্ভব] কূপ > কুয়ো, ধূলি > ধুলা/ধুলো, পূজা > পুজো, স্ফূর্তি > ফুর্তি, ভূমি > ভুঁই, ঊনবিংশ > উনিশ, ভ্রূ > ভুরু, সূত্র > সুতো, রূপা > রুপো, পূর্ব > পুব।

ঊ-কার (ূ) ব্যবহৃত হবে-
ক. তৎসম অর্থাৎ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অবিকৃত সংস্কৃত শব্দে ঊ বা ঊ-কার থাকলে কখনোই তা পাল্টানো চলবে না। কারণ এইসব শব্দের বানান ও ব্যাকরণগত প্রকরণ ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট রয়েছে। সুখের বিষয় বাংলায় এ জাতীয় শব্দ খুব কমই আছে। অল্প যে কটা আছে অনায়াসেই দেখে দেখে আয়ত্ত করে ফেলা যায়। যেমন : কূল, রূপ, ধূলি, পূর্ব, মূল, শূন্য, পূর্ণ, দূরত্ব, মূর্খ, স্বয়ম্ভূ, মুহূর্ত, মুমূর্ষু, সূর্য ইত্যাদি।

খ. স্বরসন্ধির নিয়মের কারণে ঊ-কার উৎপন্ন হতে পারে। উ-কার কিংবা ঊ-কারের পর উ-কার কিংবা ঊ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঊ-কার হয়। যেমন :
উ + উ = ঊ----------------------উ + ঊ = ঊ
কটু + উক্তি = কটূক্তি-------------লঘু + ঊর্মি = লঘূর্মি
মৃত্যু + উত্তীর্ণ = মৃত্যূত্তীর্ণ----------তনু + ঊর্ধ্ব = তনূর্ধ্ব

কিছু প্রচলিত বানান ভুল
০>'দূর্বল', 'দূর্জয়', 'দূর্ভাগ্য' এগুলো ভুল বানান। দুঃ নামক উপসর্গে হ্রস্ব উ, অতএব কঠিন অর্থে হলে দুর্বল, দুর্জয়ই হবে। দূর (far) বোঝালে দীর্ঘ ঊ-কার।
দু লেখা হবে :
১. দু/দুঃ হচ্ছে একটি উপসর্গ। উপসর্গ সর্বদা কোনো শব্দের পূর্বে বসে এবং নতুন শব্দ তৈরি করে তার অর্থে পরিবর্তন আনে। দু/দুঃ উপসর্গের অর্থ হচ্ছে মন্দ বা খারাপ বা কষ্টকর ধরনের কিছু। যেমন : দুঃসহ, দুরদৃষ্ট, দুরপনেয়, দুরাত্মা, দুঃখী, দুর্গন্ধ, দুর্ভোগ, দুর্জন, দুষ্পাচ্য, দুস্থ, দুস্তর ইত্যাদি।
২. দূ লেখা হবে :
ক. -দূর, দূরত্ব বিষয়ক একটা ধারণা বা চিন্তা থাকলে। যেমন : দূর, দূরপ্রাচ্য, দূরবর্তী, দূরান্বয় ইত্যাদি।
খ. দূত, দূর্বা, দূষণ প্রভৃতি তৎসম শব্দে ব্যাকরণগত বাধ্যবাধকতার কারণে।

০> অদ্ভূত, উদ্ভূত, আবির্ভূত, ঘনীভূত, পরাভূত, দ্রবীভূত, বশীভূত, কিম্ভূত, ভূত-ভবিষ্যৎ এসব বানানে প্রায়শ হ্রস্ব উ-কার চোখে পড়ে। পক্ষান্তরে অদ্ভুত, ভুতুড়ে প্রভৃতি বানানে দীর্ঘ ঊ-কার দিয়ে থাকেন অনেকে, যা একটি ভুল প্রয়োগ। ভুত বা ভূত দুটোই শুদ্ধ, তবে 'ভুত' বানানটি প্রমিত এবং শুধুমাত্র 'ভুতুড়ে' বানানটি শুদ্ধ। আরও লক্ষ্য করার মতো বিষয়, 'অদ্ভুত' আর 'ভুতুড়ে' শব্দের ভুত ছাড়া সমস্ত ভূতই দীর্ঘ ঊ-কার দিয়ে লিখতে হয়।

০> রৌপ্য অর্থে 'রুপা', 'রূপা' দুটি বানানই শুদ্ধ, তবে 'রুপা' বানান প্রমিত। একই কথা প্রযোজ্য 'রুপালি' ও 'রূপালি' বানানের ক্ষেত্রেও। তবে রূপ অর্থ সৌন্দর্য হওয়ায় 'সুন্দরী' অর্থে শুধুমাত্র 'রূপসী' বানানটিই শুদ্ধ, যদিও অনেকে ভুলবশত 'রুপসী' বানান লিখে থাকেন।

০> 'পূনর্বিন্যস্ত', 'পূনর্মিত্রতা' এগুলো ভুল বানান। পুন/পুনঃ হচ্ছে একটি শব্দ। এটি সর্বদা কোনো শব্দের পূর্বে বসে এবং নতুন শব্দ তৈরি করে তার অর্থে পরিবর্তন আনে। পুন/পুনঃ শব্দের অর্থ হচ্ছে পুনরায় বা আবার বা দ্বিতীয় বার। যেমন : পুনঃপুন, পুনরাগমন, পুনর্যাত্রা, পুনর্মূষিকোভব, পুনর্মিত্রতা, পুনর্বিন্যস্ত ইত্যাদি।

০> 'ভু' নয়, 'ভূ' শব্দের অর্থ হচ্ছে পৃথিবী। তাই 'ভুগোল', 'ভুমি', 'ভু-পৃষ্ঠ', 'ভুমিষ্ঠ', 'ভুপতি' এগুলো সবই ভুল বানান। লিখতে হবে 'ভূগোল', 'ভূ-পৃষ্ঠ', 'ভূমিষ্ঠ', 'ভূপতি'। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যে 'ভুবন', যার অর্থও পৃথিবী, বানান করতে হয় হ্রস্ব উ-কার দিয়ে।

পূর্বের আসরসমূহ
বানান আসর -১ : ই-কার না ঈ-কার, কখন কী হবে View this link
বানান আসর -২ : ও এবং ও-কার View this link

তথ্যসূত্র :
[১] বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান
[২] হায়াৎ মামুদ (বাংলা লেখার নিয়মকানুন, মে, ২০১০)

অনুশীলনী
১. কোন বানানগুলো শুদ্ধ, অশুদ্ধ বানানগুলো শুদ্ধ করে লিখুন :
পূব, পুর্ব, চুরি, খূশি, ছুরি, টুপি, কূমির, মূড়ি, ঝুড়ি, কূপ।
২. সংস্কৃত শব্দ বাংলায় আসার পথেই বাংলাভাষীর মুখে মুখে কি হারিয়েছে:
ক, হ্রস্বস্বর, খ. দীর্ঘস্বর?
৩. রূপান্তর প্রক্রিয়ায় কোন শব্দগুচ্ছগুলো সঠিক, অশুদ্ধগুলো সঠিকভাবে লিখুন :
কুপ > কূয়ো, ধূলি > ধুলা/ধূলো, পূজা > পুজো, স্ফূর্তি > ফুর্তি, ভুমি > ভুঁই, ঊনবিংশ > ঊনিশ, ভ্রূ > ভুরু, সূত্র > সুতো, রূপা > রুপো, পুর্ব > পুব?
৪. অশুদ্ধ শব্দগুলো শুদ্ধভাবে লিথুন:
মুর্খ, স্বয়ম্ভূ, মূহুর্ত, মূমুর্ষু, সূর্য ।
৫. কোন ২টি শব্দের ভুত ছাড়া সমস্ত ভূতই দীর্ঘ ঊ-কার দিয়ে লিখতে হয়?
ক. অদ্ভূত ও উদ্ভূত, খ. ঘনীভূত ও পরাভূত, গ. দ্রবীভূত ও বশীভূত, ঘ. অদ্ভুত ও ভুতুড়ে
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:২১
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×