দেখতে দেখতে বেশকিছু রোজা হয়ে গেল। ইতিমধ্যে যারা এতদিন রোজা রেখেছেন তাঁদের শরীর মানিয়ে নিয়েছে সারা দিন না খেয়ে থাকার সঙ্গে। ফলে রোজার প্রথম দিকে যে ধরনের সমস্যা অনুভূত হতে পারে তা এখন আর হওয়ার কথা নয়, এর পরও কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর কারণ রোজা রাখা নয়, আমাদের খাদ্যাভ্যাস। ডাক্তাররা বলেন, নিয়ম মেনে রোজা পালন করলে সাধারণত সমস্যা হয় না, বরং রোজা রাখলে শরীরের উপকার হয়। এর পরও রোজাদারদের বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়।
হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা
পাকস্থলীতে খাবার হজম করার জন্য সব সময় এসিড থাকে। এই এসিডে আবার খাদ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়াও মারা যায়। কিন্তু পাকস্থলীর গাত্রে থাকা বিশেষ পিচ্ছিল আবরণ নিজেকে এসিডের হাত থেকে বাঁচায়। তবে কোনো কারনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত এসিড তৈরি হলে বা পাকস্থলীতে খাবার না থাকার সময় এসিড নিঃসরণ হলে অথবা পাকস্থলী থেকে এসিড ইসোভেগাসে (খাদ্যনালির অংশ) চলে এলে বুক জ্বলে। রোজার সময় এই হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা সমস্যাটি অনেকের হয়।
সাধারণত রোজা রাখতে রোজা রাখলে এসিড কম তৈরি হওয়ার কথা, কিন্তু ক্ষুধা পেলে ও খাবারের কথা চিন্তা করার কারণে কারো কারো এসিড নিঃসরণ রেড়ে যায়। তাদের হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা সমস্যা বেশি হয়। এ সমস্যায় এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল, ইসওমিপ্রাজল ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। সেহরি খাওয়ার সময় এজাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
তবে ওষুধ খেয়ে হার্টবার্ন দূর করার চেয়ে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে করা বেশি ভালো।
এজন্য পরিহার করতে হবে তৈলাক্ত খাবার, ভাজা-পোড়া, বাসি ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার। তা ছাড়া ধূমপান করার অভ্যাস থাকলে তা থেকে এই সময়টা বিরত থাকতে হবে। যাঁদের টক ঢেঁকুর আসে, বুক জ্বলে তাঁরা শোয়ার সময় একটু উঁচু বালিশ ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। যাঁদের আগেই হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা সমস্যাটি আছে তাঁরা এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল ইত্যাদি ওষুধ একটু বেশি মাত্রায় খেতে পারেন। সেহরির পাশাপাশি ইফতারের পরপর এ ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার-দাবারের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে। প্রতিদিন কতটুকু হাঁটাহাঁটি করতে হবে সে বিষয়ে ডাক্তারি নির্দেশন থাকে। কিন্তু রোজার দিনে খাবারের অভ্যাসটি অন্য সময়ের চেয়ে একবারে আলাদা, আবার শেষরাতে উঠতে হয় বলে সকালের হাঁটাহাঁটিটাও করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অন্যদিকে দুপুরের পর থেকে পেট খালি হতে থাকে বলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে থাকে অনেক ডায়াবেটিক রোগীর। ফলে ডায়াবেটিস হয়ে পড়ে অনিয়ন্ত্রিত। কারো কারো গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, আবার কারো কমে যায়। কিন্তু রোজায় খাবার কম খাওয়া হয় বলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। যাঁরা নিয়মিত ইনসুলিন নেন, তাঁরা অনেকেই জানেন না যে রোজা রেখেও ইনসুলিন নেওয়া জায়েজ আছে। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের কতখানি ইনসুলিন নিতে হবে, কী কী খেতে হবে সে বিষয়ে নিজ নিজ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
মাথাব্যথা
রোজায় খুব কমন সমস্যা এটি। বেশ কিছু কারণে মাথাব্যথা হয়। বড় কারণ পানিশূন্যতা, ক্ষুধা, ঘুম ও রেস্ট কম হওয়া, চা কফি পান না করা। সমস্যাটি কম হবে যদি সেহরি মিস না হয়, ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পানি ও জুস জাতীয় তরল বেশি করে পান করা যায়। যাঁদের মাথাব্যথার সমস্যা রোজায় প্রতিদিনই হয়, তাঁরা সেহরিতে একটা প্যারাসিটামল খেতে পারেন। রোদে যাবেন না, ছাতা ব্যবহার করবেন। যাঁদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শমতো রোজা রাখুন।
কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য
রোজায় এ সমস্যা বেশি হয়। এর কারণ পানিশূন্যতা ও আঁশসমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া। বেশি করে শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। লাল আটা ও ঢেকিছাঁটা চাল খেতে পারলে উপকার পাবেন। এর পরও সমস্যা থাকলে ল্যাক্সেটিভ ওষুধ খেতে পারেন।
হার্ট, কিডনি ও অন্যান্য অসুখ
রোজা রাখার ফলে হার্টের অসুখ, কিডনির অসুখ বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্য হওয়ার কোনে কারণ নেই। আবার এসব অসুখ থাকালে রোজা রাখা যাবে না, তেমনটিও ডাক্তাররা বলেন না। তবে যাঁরা এসব অসুখে আক্রান্ত কিন্তু রোজা রাখছেন এবং কোনো সমস্যা বোধ করছেন তাঁদের উচিত ডাক্তার দেখিয়ে নিশ্চিত হওয়া।
- ডা. এ জেড এম আহসানউল্লাহ, এইচএমও, ইন্টারনাল মেডিসিন, বিএসএমএসইউ, ঢাকা।
- (কালের কণ্ঠ, ২৭ আগষ্ট-১০, শুক্রবার)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



