somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোজা ও শারীরিক সমস্যা

০৮ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেখতে দেখতে বেশকিছু রোজা হয়ে গেল। ইতিমধ্যে যারা এতদিন রোজা রেখেছেন তাঁদের শরীর মানিয়ে নিয়েছে সারা দিন না খেয়ে থাকার সঙ্গে। ফলে রোজার প্রথম দিকে যে ধরনের সমস্যা অনুভূত হতে পারে তা এখন আর হওয়ার কথা নয়, এর পরও কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর কারণ রোজা রাখা নয়, আমাদের খাদ্যাভ্যাস। ডাক্তাররা বলেন, নিয়ম মেনে রোজা পালন করলে সাধারণত সমস্যা হয় না, বরং রোজা রাখলে শরীরের উপকার হয়। এর পরও রোজাদারদের বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়।

হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা
পাকস্থলীতে খাবার হজম করার জন্য সব সময় এসিড থাকে। এই এসিডে আবার খাদ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়াও মারা যায়। কিন্তু পাকস্থলীর গাত্রে থাকা বিশেষ পিচ্ছিল আবরণ নিজেকে এসিডের হাত থেকে বাঁচায়। তবে কোনো কারনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত এসিড তৈরি হলে বা পাকস্থলীতে খাবার না থাকার সময় এসিড নিঃসরণ হলে অথবা পাকস্থলী থেকে এসিড ইসোভেগাসে (খাদ্যনালির অংশ) চলে এলে বুক জ্বলে। রোজার সময় এই হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা সমস্যাটি অনেকের হয়।

সাধারণত রোজা রাখতে রোজা রাখলে এসিড কম তৈরি হওয়ার কথা, কিন্তু ক্ষুধা পেলে ও খাবারের কথা চিন্তা করার কারণে কারো কারো এসিড নিঃসরণ রেড়ে যায়। তাদের হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা সমস্যা বেশি হয়। এ সমস্যায় এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল, ইসওমিপ্রাজল ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। সেহরি খাওয়ার সময় এজাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
তবে ওষুধ খেয়ে হার্টবার্ন দূর করার চেয়ে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে করা বেশি ভালো।

এজন্য পরিহার করতে হবে তৈলাক্ত খাবার, ভাজা-পোড়া, বাসি ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার। তা ছাড়া ধূমপান করার অভ্যাস থাকলে তা থেকে এই সময়টা বিরত থাকতে হবে। যাঁদের টক ঢেঁকুর আসে, বুক জ্বলে তাঁরা শোয়ার সময় একটু উঁচু বালিশ ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। যাঁদের আগেই হার্টবার্ন বা বুকজ্বলা সমস্যাটি আছে তাঁরা এন্টাসিড, রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল ইত্যাদি ওষুধ একটু বেশি মাত্রায় খেতে পারেন। সেহরির পাশাপাশি ইফতারের পরপর এ ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার-দাবারের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে। প্রতিদিন কতটুকু হাঁটাহাঁটি করতে হবে সে বিষয়ে ডাক্তারি নির্দেশন থাকে। কিন্তু রোজার দিনে খাবারের অভ্যাসটি অন্য সময়ের চেয়ে একবারে আলাদা, আবার শেষরাতে উঠতে হয় বলে সকালের হাঁটাহাঁটিটাও করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অন্যদিকে দুপুরের পর থেকে পেট খালি হতে থাকে বলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে থাকে অনেক ডায়াবেটিক রোগীর। ফলে ডায়াবেটিস হয়ে পড়ে অনিয়ন্ত্রিত। কারো কারো গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়, আবার কারো কমে যায়। কিন্তু রোজায় খাবার কম খাওয়া হয় বলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। যাঁরা নিয়মিত ইনসুলিন নেন, তাঁরা অনেকেই জানেন না যে রোজা রেখেও ইনসুলিন নেওয়া জায়েজ আছে। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের কতখানি ইনসুলিন নিতে হবে, কী কী খেতে হবে সে বিষয়ে নিজ নিজ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

মাথাব্যথা
রোজায় খুব কমন সমস্যা এটি। বেশ কিছু কারণে মাথাব্যথা হয়। বড় কারণ পানিশূন্যতা, ক্ষুধা, ঘুম ও রেস্ট কম হওয়া, চা কফি পান না করা। সমস্যাটি কম হবে যদি সেহরি মিস না হয়, ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পানি ও জুস জাতীয় তরল বেশি করে পান করা যায়। যাঁদের মাথাব্যথার সমস্যা রোজায় প্রতিদিনই হয়, তাঁরা সেহরিতে একটা প্যারাসিটামল খেতে পারেন। রোদে যাবেন না, ছাতা ব্যবহার করবেন। যাঁদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শমতো রোজা রাখুন।

কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য
রোজায় এ সমস্যা বেশি হয়। এর কারণ পানিশূন্যতা ও আঁশসমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া। বেশি করে শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। লাল আটা ও ঢেকিছাঁটা চাল খেতে পারলে উপকার পাবেন। এর পরও সমস্যা থাকলে ল্যাক্সেটিভ ওষুধ খেতে পারেন।

হার্ট, কিডনি ও অন্যান্য অসুখ
রোজা রাখার ফলে হার্টের অসুখ, কিডনির অসুখ বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্য হওয়ার কোনে কারণ নেই। আবার এসব অসুখ থাকালে রোজা রাখা যাবে না, তেমনটিও ডাক্তাররা বলেন না। তবে যাঁরা এসব অসুখে আক্রান্ত কিন্তু রোজা রাখছেন এবং কোনো সমস্যা বোধ করছেন তাঁদের উচিত ডাক্তার দেখিয়ে নিশ্চিত হওয়া।

- ডা. এ জেড এম আহসানউল্লাহ, এইচএমও, ইন্টারনাল মেডিসিন, বিএসএমএসইউ, ঢাকা।
- (কালের কণ্ঠ, ২৭ আগষ্ট-১০, শুক্রবার)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×