রোহিঙ্গারা মহাসমাবেশ করে তাদের মতামত জানিয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্যে ভালো খবর নয়। যে রকম কন্ঠে তারা নিজেদের মতামত জানিয়েছে, তা বেশ দৃষ্টি কটু। রোহিঙ্গারা খারাপ অবস্থায় আছে, সেইটা ঠিক আছে, কিন্তু, বাংলাদেশের ভূখন্ডে অনৈতিক কাজে ইন্ধন দেওয়াটা তাদের বন্ধ করতে হবে। এখন বাংলাদেশ কি করতে পারে? বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। তাই, শুধু রোহিংগাদের কারণে মায়ানমারের সাথে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেওয়া কোন কারণেই উচিৎ হবে না। কিন্তু, কূটনৈতিক কৌশলে বাংলাদেশ কিন্তু মায়ানমারকে একটি মার দিতে পারে। কিভাবে?
১৯১৭ সালে, বাংলাদেশ মায়ানমার থেকে প্রায় ৩৩৫ কোটি টাকার পণ্য আমদানী করে। অন্যদিকে, মায়ানমারে রপ্তানী করে প্রায় ১৮৮ কোটি টাকার পণ্য। ট্রেড গেপ প্রায় ১৪৭ কোটি টাকা। এখন বাংলাদেশ মায়ানমারের সাথে আমদানী-রপ্তানী বন্ধ করে দেয়, তাহলে কার বেশি ক্ষতি? অবশ্যই মায়ানমারের।
ট্রাম্প চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করার পর, চীন খারাপ অবস্থায় আছে। বিশ্ব বাজারে চীনের উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, অনেক বিদেশী কোম্পানী চীন ছেড়ে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোর প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। তার উপর হংকং-এর অবস্থাও ভালো যাচ্ছে। চীন সেইখানে খুবই বেকায়দা অবস্থায়। জিংজিয়াং-এর অবস্থাও ভালো নয়।
সেই সাথে মনে রাখতে হবে, আমাদের স্বাধীনতার সময় চীন পাকিস্তানকে সাহায্য করবে বললেও, তারা ভারতের পাকিস্তান আক্রমনের সময় কোন সামরিক সাহায্য দেয়নি। তখন তো চীনের অবস্থা বেশ ভালো ছিলো। এখনকার চেয়েও শক্তিশালী নেতা ক্ষমতায় ছিলেন। তারপরও তারা বাংলাদেশ-ভারত মিত্র শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে করেনি। আর, এখন যখন খারাপ অবস্থা, তখন তারা কখনোই বাংলাদেশ-মায়ানমার দ্বন্দ্বে নাক গলাবে না।
মায়ানমার আমেরিকায় ৪১৬৬ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানী করে যার মাঝে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা রেডি মেড গার্মেন্টস, চামড়া জাতীয় পণ্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকার। চীনের বলয়ে থাকার কারণে ভবিষ্যতে মায়ানমারের এই রপ্তানী অবশ্যই কমে যাবে। তাই, বলা যায়, মায়ানমারের অর্থনীতি একটি ধাক্কা খেতে পারে অচিরেই।
এখন, বাংলাদেশ যদী মায়ানমারের হারানো বাজারটির ১০%-ও ধরতে পারে, তাহলে, মায়ানমারের সাথে ট্রেড বন্ধ হবার কারণে যে ১৮৮ কোটি টাকা বাংলাদেশকে হারাতে হবে, সেইটা সহজেই পূরণ হয়ে যাবে।
তবে, কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ মায়ানমারে যা রপ্তানী করে তার বেশির ভাগই ঔষুধ জাতীয় পণ্য। বাংলাদেশকে তাই মায়ানমারের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ করার আগে, এইসব পণ্যের নতুন বাজার খুঁজতে হবে। সেই নতুন বাজার শুধু আমেরিকা হলে চলবে না। আরো, দেশ খুঁজতে হবে।
বিশ্বের ঔষুধ জাতীয় পণ্যের আমদানীকারক খুঁজলে দেখা যায়, প্রথম ১২টি দেশের ১০টিই পশ্চিমা। সবচেয়ে বেশি আমদানী করে আমেরিকা আর ১২তম হচ্ছে আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশের সাথে এইসব দেশগুলোর ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তাই, নতুন বাজার খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট করতে হবে না। চীন নিজেও ঔষুধ, আর,এম,জি, আর চামড়া জাতীয় পণ্যের রপ্তানীকারক দেশ। গত কয়েক মাসে, চীনের ঔষুধ জাতীয় পণ্যের বাজার কমেছে। বাংলাদেশ এই বাজার হাত করতে পারে। এই বাজার হারানোর ভয়ে চীন কখনোই মিয়ানমারের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারবে না।
আবারো বলছি, বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ। কিন্তু, নিজের দেশের ভিতর অশান্তি হওয়ার সম্ভাবনা ঠেকাতে বিশ্ববাণিজ্য যুদ্ধে সঠিক পক্ষে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ হতে পারে আরো শক্তিশালী। নিজের দেশের মানুষের শান্তির জন্যে কত দেশ কত কিছুই না করে। বাংলাদেশ কি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করতে পারবে না? তাই, বিশ্বে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমেই বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার
সমাধান করা উচিৎ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:২৯