'স্যার, আমার কাছে সমাজে চলমান বুদ্ধিজীবি'র সংজ্ঞাটা বড় অদ্ভুত মনে হয়। কেন যেন জীবিকা আয়ের মাধ্যম দিয়েই আমরা নিজেদের সংজ্ঞায়িত করে নিয়েছি। যেমন- যে রিক্সা চালায় তাকে বলি শ্রম-'জীবী'। একজন রিক্সাওয়ালা কি বুদ্ধিজীবী হতে পারে না?'
'আপনি ভুল করছেন, শাইয়্যান। যারা মেধা বা বুদ্ধি'র উপর নির্ভর করে জীবন নির্বাহ করে, তাঁরাই বুদ্ধিজীবী। যেমন- শিক্ষক, গবেষক, বিজ্ঞানী।'
'তার মানে আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, একজন রিক্সাওয়ালা তার রিক্সা চালানোর ব্যাপারে বুদ্ধি খরচ করে না? একজন ফুটবলারকে কিভাবে বল ড্রিবলিং করতে হয় তার পিছনে বুদ্ধি খরচ করতে হয় না?'
'দেখুন, শাইয়্যান, সমাজে যা প্রচলিত আমি তা-ই বলছি। আপনি দশজনকে জিজ্ঞাসা করুন, কেউই রিক্সাওয়ালাকে বুদ্ধিজীবী বলবে না। সবাই বলবে শ্রমজীবী।'
'আমার মনে হয়, স্যার, এখানে একটু ভুল হচ্ছে। একজন মানুষ তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত- মস্তিস্ক, হৃদয় এবং শরীর। আমাদের মস্তিস্ক থেকেই বুদ্ধি'র সৃষ্টি হয়। এজন্যেই আমরা বলে থাকি 'মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে'। আর, সেই বুদ্ধিকে কাজে পরিণত করা হয় শরীরের শ্রম দিয়ে। এখন, সেই শ্রম রিক্সার উপর প্রয়োগ হোক কি কলম, চক বা কি-বোর্ড কিংবা বল/ব্যাটের উপর, যে-ই এটা প্রয়োগ করবে, সে-ই শ্রমজীবী।
আর, যে এই শ্রমকে সর্বোচ্চ লেভেলে নিয়ে যেতে পারবে, তাকেই আমাদের বুদ্ধিজীবি বলতে হবে। সেজন্যেই, একজন ক্রিকেটার কিংবা রিক্সাওয়ালাও বুদ্ধিজীবী হতে পারেন। আমরা শুধু শুধু কেন শিক্ষক বা গবেষকদের বুদ্ধিজীবী হিসেবে তকমা দিয়ে যাচ্ছি!'
স্যার কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বললেন- 'এই যে কুত্তাকে দেখা যাচ্ছে, এটাও যদি বুদ্ধির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে, তাকেও আপনি বুদ্ধিজীবী বলবেন কি?'
শাইয়্যান স্মিত হেসে বললো- 'স্যার, কুকুরের বুদ্ধি আছে কে বললো? কুকুর নিজে বলেছে, নাকি মানুষ 'বুদ্ধি'-র একটা সংজ্ঞা দাঁড় করিয়ে তা কুকুরের উপর চাপিয়ে বলছে যে- 'কুকুরেরও বুদ্ধি আছে'? কুকুরের ব্যাপারটা তো অন্য রকমও হতে পারে।'
স্যার শাইয়্যানের কথাটি মেনে নিয়ে বললেন- 'আমরা মানুষেরাই কুকুরের উপর মনুষ্যত্ব চাপিয়ে দিচ্ছি।'
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:০৮