somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিন যায়, কথা থাকে...যে কথা ছিলো মনে! :)

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘কই যাবেন?’ রিক্সাওয়ালার প্রশ্নের উত্তরে বললাম- 'এই তো সামনেই।' ‘সবাই তো সামনেই যায়, পিছনে তো যায় না’— রিকশাওয়ালার সূক্ষ্ম রসবোধে হা হা করে হেসে উঠলাম।
.
অফিস থেকে লাঞ্চে যেতে রিকশায় উঠেছিলাম, তখনই এই কথোপকথন। সত্যিই কি আমরা সবসময় সামনে যাই, পেছনে যাই না? হ্যাঁ, এটা সত্যি যে রিকশায় করে পেছনে যাওয়া সম্ভব না হলেও মনের পর্দায় কিংবা কল্পনায় আলাদিনের চাদরে ভেসে হলেও অনেকে জীবনের পেছনের স্মৃতির সাগরে ফিরে যান অনেক সময়।
...
এই তো সেদিনের কথা, মা-বাবা বাসায় তিন গোয়েন্দার বই আর বন্ধুদের সঙ্গে বই আদান-প্রদান নিষিদ্ধ করায় সে কী মন খারাপ! কী করা যায় এখন? বুদ্ধি বের হলো একদিন। স্পেস শিপ ল্যান্ডিংয়ের মতো যেদিন উপরের তলার বন্ধু পলিথিনের ভেতর বই ঢুকিয়ে বারান্দায় ল্যান্ডিং করাল তিন গোয়েন্দার আনকোরা নতুন বই, সেদিনের আনন্দ দেখে কে! তার বদলে উপরে চলে গেল আমার শখের টিনটিনের আরেকটি বই।
.
‘আর্থ, ফায়ার, উইন্ড, ওয়াটার, হার্ট...গো ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট’— স্কুলে বা বন্ধুমহলে পাঁচজনের দল করে হাতে দড়ি দিয়ে বাঁধা আংটি বানিয়ে অ্যাডভেঞ্চারের গল্পগুলো মনে পড়ে? এ যেন সেদিনের কথা!
.
এখনো মনে পড়ে বাবার হাত ধরে বইমেলায় যাওয়ার কথা। প্রতিবারই অ্যাস্ট্রোনমির কিছু না কিছু বই কেনা হতো, সেগুলো পড়ে পড়ে পুরো মাথাটাই বিগড়ে যেত— বৃষ্টিস্নাত কত রাত গেছে, মেঘের গুরুগুরুকে স্পেসশিপের আওয়াজ কল্পনা করে জানালার শিক ধরে রাতের অন্ধকারের দিকে মিনিটের পর মিনিট তাকিয়ে থাকতাম এলিয়েনদের দেখব বলে!
.
ছোটবেলা খুব দুষ্টু ছিলাম বলে সব ভাইয়ের মধ্যে বাবার কানমলা আমিই সবচেয়ে বেশি খেতাম। একদিনের কথা মনে পড়ে। তখন এসএসসি রেজিস্ট্রেশনের সময়। ফরমের ফটোকপিতে নাম লিখতে গিয়ে মো. না মোহাম্মদ লিখব, তা নিয়ে দোটানায় পড়ে গিয়েছিলাম। কে যেন একবার বলেছিলেন, পাসপোর্টে আমাদের বাঙালিদের নামের আগে এত বেশি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (MD) লেখা থাকে যে বিদেশের পাসপোর্ট কর্মকর্তারা খুব ধন্দে পড়ে যান। তারা ভেবে পান না আমাদের মতো গরিব দেশে এত এত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আসে কোথা থেকে! তাই সেই গোবেচারাদের জেরার পর জেরা করে যান। এ কথাটা আমার মনে এমনভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে বাবার শত কানমলায়ও মো. লিখতে রাজি হইনি, মোহাম্মদ লিখেছিলাম।
.
সেই মোহাম্মদ লিখেও পার পাইনি। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর একদিন আমাদের নামের শুরুতে পুরো ‘মোহাম্মদ’ দেখে এক আত্মীয় মন্তব্য করে বসেছিলেন— ‘তুই শেষ! আর জীবনে তোকে বাইরের ভিসা দেবে না কোনো অ্যাম্বাসি।’ সেই আমারই ইউকের হিথরো বিমানবন্দরের চেকিং পয়েন্ট পার হতে সময় লেগেছিল সব মিলিয়ে ৫ মিনিট! অথচ মনে পড়ে ভারতের দিল্লি বিমানবন্দরে আমাকে কীভাবে আপাদমস্তক চেকিং করে হেনস্তা করা হয়েছিল।
.
এখনো মনে পড়ে সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় পালানোর কথা। পরীক্ষার সময় মেরিট লিস্টে নাম উঠেছিল। ভেবেছিলাম পরে ভুজুং-ভাজুং দিয়ে মা-বাবাকে বুঝিয়ে ভর্তি হব না। কারণ বিদেশে অ্যাস্ট্রোনমি পড়তে যাওয়ার খুব শখ ছিল। আমার কোনো এক আত্মীয় মা-বাবাকে বুঝিয়েছিলেন, যারা অ্যাস্ট্রোনমি পড়ে, তারা একেকটা পাগল। সারা দিন গ্রহ-নক্ষত্র নিয়ে মাথা ঘামায় বলে সংসার-টংসার করা হয়ে ওঠে না। সেই ভয়ে আমার ওই সাবজেক্টে অনার্স করার জন্য বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এল।
.
‘মামা, আয়া পড়সি।’ রিকশাওয়ালার কথায় সম্বিত ফিরল। হাতে ভাড়া ধরিয়ে দিতেই মাঝবয়সী রিকশাওয়ালা বলে উঠলেন— ‘আসসালামু আলাইকুম।’ চমকে উঠলাম। এখন পর্যন্ত কোনো রিকশাওয়ালাকে তো সালাম দিতে শুনিনি। তার ওপর এ রকম শুদ্ধ সালাম!
.
শুদ্ধ সালামের কথা মনে হতেই মনে পড়ে গেল আমাদের দেশের শত রকমের সালাম কালচারের কথা— ‘স্লামালাইকুম’, ‘সালামালাইকুম’, এমনকি আজকাল অনেকে ‘স্লাকুম’ পর্যন্ত বলে বসেন!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×