আজকে বাংলাদেশের একটি পত্রিকা নিউজ করেছে- লেবাননের এক ভিক্ষুকের একাউন্টে প্রায় ৬ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে। খবরটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এতো টাকা ঐ মহিলার ব্যাংকে এলো কি করে! ভিক্ষা করে এতো টাকা উপার্জন করা কি সম্ভব? সম্ভব হোক কি না হোক, এটা পড়ে পাঠকরা যে ভিক্ষা দিতে অনুৎসাহিত হবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। ভেবে দেখুন, কোন বৃদ্ধ মহিলা আপনার গাড়ির জানালায় ভিক্ষা চাইতে এসেছেন, আপনি তাঁর দিকে এই সন্দেহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন- ''এরও ব্যাংকে কোটি টাকা থাকতে পারে! দুদকে খবর দিতে হবে।''
একটা ব্যাপার খেয়াল করলে দেখা যায়, আমরা যেমন আমাদের দেশের গরীবনা চিৎকার করে ঘোষনা করি, উন্নত দেশগুলো তাদের দেশের দরীদ্র মানুষদের কথা মিডিয়ায় আসতে দেয় না কেন? কেন তারা এটা প্রচার করতে দেয় না যে তাদের দেশেও গরীব মানুষ আছে।
বছর আটেক আগের ঘটনা। আমি তখন যুক্তরাজ্যের উডগ্রীন এলাকায় বাস করি। সেই সময়ই একদিন দেখতে পেলাম লাইব্রেরীর পাশে একটি হুইল চেয়ারে মধ্যবয়সী লোক বসে আছে। চুলদাড়ি উষ্ক-খুষ্ক, গায়ের কাপড় তালিমারা ময়লা। আমি খুব অবাক হলাম। ছুটির দিন, বাইরে বেশ ঠান্ডা পড়েছে। লাইব্রেরী'র পাশেই একটা স্থান থেকে রাস্তায় গাইতে থাকা একদল স্ট্রিট সিঙ্গারের গান শুনছিলাম আর মাঝে মাঝে লোকটার দিকে লক্ষ্য রাখছিলাম- লোকটা কি করে দেখার জন্যে।
লোকটা সেইখানেই বসে আছে। মাঝে মাঝে মানুষ তার হাতে আধুলি নিক্ষেপ করে দ্রুত চলে যাচ্ছে। আমি তখন ছাত্র মানুষ। হাতে খুব একটা টাকা থাকে না। স্ট্রিট সিঙ্গারদের দলটার মেলে ধরা বাক্সে কয়েকটা আধুলি ছুড়ে দিয়ে মানুষটার পাশে এসে দাঁড়ালাম। আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার মুখটা নিচু করে ফেললো লোকটি। সেই দিন আর কিছু বললাম না। যাওয়ার সময় পকেটে যা আছে তা দিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলাম।
পরের কয়েকটি দিন যখনই সেখানে গিয়েছি, মানুষটাকে সেই একই জায়গায় হুইল চেয়ার নিয়ে বসে থাকতে দেখেছি। একদিন জিজ্ঞাসা করলাম- কি ব্যাপার, মেইট, তোমার কি অবস্থা? কথায় কথায় জানতে পারলাম- সে রিটায়ার্ড করার পর একটি ছোট বাড়িতে থাকে। কিন্তু, কোন ইনকাম নেই। তাই, মানুষের কাছে হাত পাততে হয়।
এরকম হাজারো মানুষ আছে দেশটিতে। উন্নত দেশে হোমলেস আর চাকরী না থাকাটা খুবই ভয়ংকর ব্যাপার। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ব্রিটিশ-আমেরিকান অর্থনীতিবীদ স্যার এঙ্গাস ডিটন একবার বলেছিলেন-
''তোমাকে যদি ভারতের কোন দরিদ্র গ্রামে অথবা মিসিসিপি ডেল্টা কিংবা মিলুওউকী'র কোন ছোট্ট শহরে বাস করার জন্যে বেছে নেওয়ার কথা বলা হয়, আমি বলতে পারবো না এই স্থানগুলো'র কোনটা থাকার জন্যে বেশি ভালো হবে।''
সত্যিই তাই! আপনি যদি কখনো লন্ডন শহরের ইস্ট লন্ডনে যান, জায়াগাটার ধুলো বিজড়িত ফুটপাত আর ময়লায় ভরা গলিগুলো দেখে হয়তো বিভ্রম হবে- আপনি উন্নত কোন দেশে আছেন নাকি ঢাকার গুলিস্থানে!
কেন এমন হলো? গুটি কয়েক মানুষের হাতে বিশ্বের বেশির ভাগ সম্পদ আবরিত হবার কারণেই কি এমন হচ্ছে? ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অক্সফামের একটি জরিপে বের হয়েছিলো অবাক করা একটি তথ্য। বিশ্বের ৩৮৮ জন মানুষের কাছে যে সম্পদ রয়েছে তা সবচেয়ে গরীব এমন ৩.৩ বিলিয়ন মানুষের সম্পদের সমান! আর, ২০১৭ সালে এই সংস্থা যে তথ্য দিয়েছিলো তাতে পুরো বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলো। মাত্র ৮জন ব্যক্তির কাছে যে পরিমাণ সম্পদ আছে তার পরিমাণ পৃথিবীর সবচেয়ে গরীব ৩.৬ বিলিয়ন মানুষের সম্পদের সমান! অর্থাৎ, সবচেয়ে ধনীর সংখ্যা কমলেও, সবচেয়ে দরীদ্র মানুষের সংখ্যা ৩০ লক্ষ বেড়েছে!