বাবাকে আমি একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম- তুমি কি মুক্তিযোদ্ধা? বাবা মাথা নেড়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলেছিলেন- 'না, আমি মুক্তিযুদ্ধ করিনি। তোর চাচা করেছে।'
ঘটনা ০১ঃ
চাচা হঠাৎ একদিন বাবাকে চুপি চুপি জানালেন মুক্তিযুদ্ধে যাবেন । বাবা স্কাউটিং করতেন বিধায়, ঢাকা শহরের ওলি-গলি চেনা ছিলো। পাক সেনা তখন পুরো শহর রেইড করে ছিলো। শহরের গলি-ঘুপচি চিনিয়ে বাবা চাচাকে শহরের বাইরে নিরাপদ দূরত্বে বের করে দিয়ে এলেন এক রাতে।
দিন দুই পরেই দাদার আজিমপুরের বাসাতে পাক সেনারা এলো। বাবা, বড় চাচা, এমনকি আমার দাদাকে বাসার সামনে লাইন ধরে দাঁড় করালো। দাদা পাকিস্তান বন মন্ত্রনালয় থেকে তখন অবসরে গিয়েছেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা এভাবে হেনস্থার মুখে পড়তে পারেন স্বপ্নেও ভাবেননি। যে কোন মূহুর্তে গুলি চলবে ধারণা করে বাড়ির ভিতরে কান্নার রোল উঠেছে।
কিভাবে বেঁচে এলেন উনারা আমি আজও ভালো করে জানতে পারিনি।
ঘটনা ০২ঃ
আমার চাচা তখন ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য হয়ে ঢাকা আক্রমন করতে শহরে ঢুকেছেন। ঘন ঘন তাঁরা তখন জায়গা বদলাতেন আর পাকিস্তানী সেনাদের উপর চোরা-গোপ্তা হামলা চালাতেন। বাবা খুব ভালো উর্দু জানতেন বলে চাচার মুক্তিযোদ্ধা দলটি বাবাকে পাকিস্তানী বাহিনী'র উপর নজরদারী'র দায়িত্ব দেয়।
একদিন, পাকিস্তানী বাহিনী কি করছে খবর নিতে বাবা ঘরের বাইরে বেরিয়েছেন। এক পাকিস্তানী সেনা বাবাকে থামিয়েছে।
'এই তুই বাঙ্গালী এইখানে কি করছিস?' বাবাকে প্রশ্ন করে সে।
বাবা তখন নিজের স্কাউটের কার্ড বের করে দেখিয়ে বললেন- 'আমি পাকিস্তানের সাচ্চা আদমী। লাহোরে আর্মীদের সাথে ট্রেইনিং নিয়েছি। তোমরা শহরে আসছো শুনে তোমাদের দেখতে এসেছি। কেমন আছো তুমি?'
পাকিস্তানী সৈনিক শুনে বাবার সাথে হাত মিলিয়ে বলে- 'খুব ভালো করেছো।' তারপর, ব্যারাকে ঢুকিয়ে সব কিছু ঘুরিয়ে দেখায়।
সেই রাতেই চাচারা সেই ব্যারাক আক্রমন করেন। বাবা ছিলেন ইনফরমার।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৩