চোখ যে মনের কথা বলে ,
চোখে চোখ রাখা হল দায় ... এটি এক সময়ের জনপ্রিয় একটি গান । নারীর চোখ নিয়ে কতো কবিতা আছে, কতো গান আছে, আছে কতো উপমা । নারী রূপের বর্ণনায় চোখের কথা উঠে এসেছে বারংবার । জীবনানন্দ থেকে শুরু করে নজরুল,কবি গুরু হয়ে পাড়া মহল্লার উঠতে ছেলে বুড়ো সবাই কম বেশি নারীর চোখের সৌন্দর্যে কোন না কোন সময় মুগ্ধ হয়েছে । কতো কবি চুপে চুপে মরে যাওয়ার আগে নারীর চোখের সৌন্দর্য বর্ণনা করে গেছেন । একটি প্রতিমা তৈরি করতে যতো সময় লাগে - সেই প্রতিমার দৃষ্টি দিতে সময় লাগে তার চেয়েও অনেক অনেক গুণ বেশি । কেননা নিখুঁত দৃষ্টি আকতে পারলেই প্রতিমা নিখুঁত হয় । কারীগরের কৃতিত্ব ফুটে উঠে ।
তবুও নারীদের চোখ এতো আক্রোশের শিকার কেন ? দিনে দিনে এর মাত্রা সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে । কি করে একটি পুরুষ জলজ্যান্ত এক নারীর চোখ ইলেকট্রিক টেস্টার দিয়ে তুলে ফেলতে পারে ? কি করে বা তাতে সেই পুরুষের পরিবারের সবাই এসে হাত লাগায় । সহযোগিতা করে চোখ তুলে ফেলতে ।
আমি জানি এরা মানুষ না । এরা পশুও না । এদের কোন সংজ্ঞা দিয়েই সংজ্ঞায়িত করা যাবে না । আপনাদের কি মনে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক রুমানা মঞ্জুরের কথা ? যার দু'চোখ তুলে নিয়েছিল তারই স্বামী হাসান সাঈদ । যাকে কিনা রুমানা ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন । হাসান সাঈদ ও নিশ্চয়ই প্রেম করার সময় রুমানার চোখের উপমা খুঁজেছে । কবিতা লিখেছে , গান শুনেছে । কিন্তু কি নির্মম ভাবে সেই হামলে পরেছে হায়েনার মতো রুমানার চোখের উপর । খুবলে তুলে ফেলেছে ।
ঈদের দিন আমরা সবাই যখন একে অন্যের সঙ্গে কোলাকোলি ঈদের আনন্দ ভাগাভাগিতে ব্যস্ত ঠিক তখন সাভারের জিঞ্জিরায় সুখীর স্বামী যে কিনা পশুর চেয়েও অধম নিকৃষ্ট এক জানোয়ার রবিউল তার ভাই বোনের সহযোগিতায় গত শুক্রবার ইলেকট্রিক টেস্টার দিয়ে তাঁর একটি চোখ তুলে নেয়। অধিক শোকে যেমন মানুষ পাথর হয়ে যায় । সুখীর অবস্থা এখন টিক তেমনি । কোন কথা বলছে না । যে চোখটি সামান্য ভাল আছে সেটি গলে শুধু কষ পরছে । অশ্রুও শুকিয়ে গেছে হয়তো । চোখ হারিয়ে এখন অনেকটাই নির্বাক সুখী। একটিতে চোখ উপড়ানোর যন্ত্রণা, অন্যটিতে আর কখনো দেখতে না পারার আশঙ্কায় ভুগছেন তিনি। মেয়ের উপর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তার পিতা তাকে নিজের কাচে নিয়ে এসেছিল । কিন্তু নারী নিজের সংসারই যার কাছে সব । সেই সুখী পিতা মাতার অমতে আবার ও স্বামীর ঘরে গিয়েছিল সংসার করবে বলে । কিন্তু সংসার করা আর তার হল না । চরম নির্যাতন সহ্য করে অন্ধ হয়ে হাসপাতালে ভুগছে । সুখীর একটি চোখ অক্ষিগোলক থেকে টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। সেখানে প্লাস্টিকের একটি চোখ বসানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, বাঁ চোখের মূল স্নায়ুটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই চোখে যেন তিনি দেখতে পান সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সুখী ঘটনায় এতটাই বিহ্বল, চিকিৎসকদের কথার তেমন কোনো উত্তর দেননি।
এ চোখ দিয়েইতো সুখী এই জানোয়ারটিকে ভালবেসেছে ,সংসার করেছে, রান্না করেছে, সন্তান পালন করেছে সে কথা কি শয়তানটির একবার ও মনে হয়নি ?
নারীর উপর কেন এ অমানুষিক নির্যাতন ? কেন এ হামলা ? রুমানার স্বামী হাসান সাঈদ তো জেলে আত্মহত্যা করছে । পুলিশ হেফাজতে থাকা সুখীর স্বামী রবিউল কি করবে ? সুখির উপর এই নির্যাতনের ত্বরিত সঠিক বিচার হওয়া প্রয়োজন । দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে নারী । সে দেশে নারীর উপর এ ধরনের নির্যাতন কিছুতেই সহ্য করা যায় না । রবিউল নামের জানোয়ারটি শুধু সুখির চোখ তুলে ফেলেনি সে চোখ তুলে ফেলেছে গোটা রাষ্ট্র, সমাজ, সভ্যতার । এ আঘাত শুধু সুখীকে করা হয়নি করা হয়েছে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত,সুফিয়া কামাল, শেখ হাসিনা,খালেদা জিয়াসহ পুরো নারী জাতীকে । আমি পুরুষ হয়ে লজ্জা, ঘেন্নায়, নতজানু হয়ে আছি । নিজের কন্যা নিজের স্ত্রীর দিকে তাকাতে পারছিনা । নিজেকে দোষী বলে মনে হচ্ছে । যদিও একটি পশুর নির্যাতনের দায় ভার আমার না । আমি নিজেকে দোষী মনে করছি রাষ্ট্রের ব্যর্থতায় । আমি নিজেকে দোষী মনে করছি রাষ্ট্রের সীমাহীন মৌনতায় । নির্যাতনকারীর কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক
হে রাষ্ট্রে তুমি কবে মানুষের মতো
মানুষের অনুভূতি বুঝতে পারবে ;
হে রাষ্ট্রে কবে তুমি সকল জানোয়ারকে
নিবাসনে পাঠিয়ে তোমার উপস্থিতি জাহির করবে ?
হে রাষ্ট্র তুমি তো বোবা,কালা বধির নও
হে রাষ্ট্র তুমি কবে আবার সচল হবে ?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:০২