somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারীর চোখের প্রতি কেন এতো আক্রোশ ?

২২ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখ যে মনের কথা বলে ,
চোখে চোখ রাখা হল দায় ... এটি এক সময়ের জনপ্রিয় একটি গান । নারীর চোখ নিয়ে কতো কবিতা আছে, কতো গান আছে, আছে কতো উপমা । নারী রূপের বর্ণনায় চোখের কথা উঠে এসেছে বারংবার । জীবনানন্দ থেকে শুরু করে নজরুল,কবি গুরু হয়ে পাড়া মহল্লার উঠতে ছেলে বুড়ো সবাই কম বেশি নারীর চোখের সৌন্দর্যে কোন না কোন সময় মুগ্ধ হয়েছে । কতো কবি চুপে চুপে মরে যাওয়ার আগে নারীর চোখের সৌন্দর্য বর্ণনা করে গেছেন । একটি প্রতিমা তৈরি করতে যতো সময় লাগে - সেই প্রতিমার দৃষ্টি দিতে সময় লাগে তার চেয়েও অনেক অনেক গুণ বেশি । কেননা নিখুঁত দৃষ্টি আকতে পারলেই প্রতিমা নিখুঁত হয় । কারীগরের কৃতিত্ব ফুটে উঠে ।
তবুও নারীদের চোখ এতো আক্রোশের শিকার কেন ? দিনে দিনে এর মাত্রা সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে । কি করে একটি পুরুষ জলজ্যান্ত এক নারীর চোখ ইলেকট্রিক টেস্টার দিয়ে তুলে ফেলতে পারে ? কি করে বা তাতে সেই পুরুষের পরিবারের সবাই এসে হাত লাগায় । সহযোগিতা করে চোখ তুলে ফেলতে ।

আমি জানি এরা মানুষ না । এরা পশুও না । এদের কোন সংজ্ঞা দিয়েই সংজ্ঞায়িত করা যাবে না । আপনাদের কি মনে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক রুমানা মঞ্জুরের কথা ? যার দু'চোখ তুলে নিয়েছিল তারই স্বামী হাসান সাঈদ । যাকে কিনা রুমানা ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন । হাসান সাঈদ ও নিশ্চয়ই প্রেম করার সময় রুমানার চোখের উপমা খুঁজেছে । কবিতা লিখেছে , গান শুনেছে । কিন্তু কি নির্মম ভাবে সেই হামলে পরেছে হায়েনার মতো রুমানার চোখের উপর । খুবলে তুলে ফেলেছে ।

ঈদের দিন আমরা সবাই যখন একে অন্যের সঙ্গে কোলাকোলি ঈদের আনন্দ ভাগাভাগিতে ব্যস্ত ঠিক তখন সাভারের জিঞ্জিরায় সুখীর স্বামী যে কিনা পশুর চেয়েও অধম নিকৃষ্ট এক জানোয়ার রবিউল তার ভাই বোনের সহযোগিতায় গত শুক্রবার ইলেকট্রিক টেস্টার দিয়ে তাঁর একটি চোখ তুলে নেয়। অধিক শোকে যেমন মানুষ পাথর হয়ে যায় । সুখীর অবস্থা এখন টিক তেমনি । কোন কথা বলছে না । যে চোখটি সামান্য ভাল আছে সেটি গলে শুধু কষ পরছে । অশ্রুও শুকিয়ে গেছে হয়তো । চোখ হারিয়ে এখন অনেকটাই নির্বাক সুখী। একটিতে চোখ উপড়ানোর যন্ত্রণা, অন্যটিতে আর কখনো দেখতে না পারার আশঙ্কায় ভুগছেন তিনি। মেয়ের উপর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তার পিতা তাকে নিজের কাচে নিয়ে এসেছিল । কিন্তু নারী নিজের সংসারই যার কাছে সব । সেই সুখী পিতা মাতার অমতে আবার ও স্বামীর ঘরে গিয়েছিল সংসার করবে বলে । কিন্তু সংসার করা আর তার হল না । চরম নির্যাতন সহ্য করে অন্ধ হয়ে হাসপাতালে ভুগছে । সুখীর একটি চোখ অক্ষিগোলক থেকে টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। সেখানে প্লাস্টিকের একটি চোখ বসানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, বাঁ চোখের মূল স্নায়ুটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই চোখে যেন তিনি দেখতে পান সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সুখী ঘটনায় এতটাই বিহ্বল, চিকিৎসকদের কথার তেমন কোনো উত্তর দেননি।
এ চোখ দিয়েইতো সুখী এই জানোয়ারটিকে ভালবেসেছে ,সংসার করেছে, রান্না করেছে, সন্তান পালন করেছে সে কথা কি শয়তানটির একবার ও মনে হয়নি ?

নারীর উপর কেন এ অমানুষিক নির্যাতন ? কেন এ হামলা ? রুমানার স্বামী হাসান সাঈদ তো জেলে আত্মহত্যা করছে । পুলিশ হেফাজতে থাকা সুখীর স্বামী রবিউল কি করবে ? সুখির উপর এই নির্যাতনের ত্বরিত সঠিক বিচার হওয়া প্রয়োজন । দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে নারী । সে দেশে নারীর উপর এ ধরনের নির্যাতন কিছুতেই সহ্য করা যায় না । রবিউল নামের জানোয়ারটি শুধু সুখির চোখ তুলে ফেলেনি সে চোখ তুলে ফেলেছে গোটা রাষ্ট্র, সমাজ, সভ্যতার । এ আঘাত শুধু সুখীকে করা হয়নি করা হয়েছে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত,সুফিয়া কামাল, শেখ হাসিনা,খালেদা জিয়াসহ পুরো নারী জাতীকে । আমি পুরুষ হয়ে লজ্জা, ঘেন্নায়, নতজানু হয়ে আছি । নিজের কন্যা নিজের স্ত্রীর দিকে তাকাতে পারছিনা । নিজেকে দোষী বলে মনে হচ্ছে । যদিও একটি পশুর নির্যাতনের দায় ভার আমার না । আমি নিজেকে দোষী মনে করছি রাষ্ট্রের ব্যর্থতায় । আমি নিজেকে দোষী মনে করছি রাষ্ট্রের সীমাহীন মৌনতায় । নির্যাতনকারীর কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক

হে রাষ্ট্রে তুমি কবে মানুষের মতো
মানুষের অনুভূতি বুঝতে পারবে ;
হে রাষ্ট্রে কবে তুমি সকল জানোয়ারকে
নিবাসনে পাঠিয়ে তোমার উপস্থিতি জাহির করবে ?
হে রাষ্ট্র তুমি তো বোবা,কালা বধির নও
হে রাষ্ট্র তুমি কবে আবার সচল হবে ?

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:০২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×