somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাখাওয়াত হোসেন  বাবন
ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে "আমার কবিতা নামে" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

আমি "পরী'কে" ভালবাসি (ভৌতিক রহস্য গল্প ) ২য় পর্ব

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি জুতার ফিতা খুলে আছে । বসে ফিতা বাধতে বাধতে দেখলাম সিঁড়ির শেষ মাথায় দাড়িয়ে "পরী" আমার দিকে তাকিয়ে আছে । সিঁড়ির আধো আলো আধো অন্ধকারে ওকে এখন আরো বেশি রূপসী লাগছে । আশ্চর্য ! মানুষ এতো সুন্দর হয় কি করে । যেন চাদের মতো জ্বলজ্বল করছে । আমি চোখের পলক ফেলতে পারছি না । অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে ওর সৌন্দর্য দেখছি । মনে হলো যেন এ দৃশ্য দেখার জন্য আমি যুগের পর যুগ অপেক্ষা করে ছিলাম ।
কি হলো ? আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে "পরী" হেসে প্রশ্ন করলো ।
আমি লজ্জা পেয়ে চোখ সড়িয়ে নিলাম । জুতার ফিতা বাধা শেষ করে উঠে দাড়াতেই ও আবার বলল, "কই আসুন । দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।
আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম । পৌনে ২টা । ঘড়ির দুটো কাটাই থেমে আছে । কোন সন্দেহ নাই নষ্ট হয়ে গেছে । নতুন ঘড়ি । গতমাসে বড় আপা পাঠিয়েছে ইটালি থেকে । এতো তারাতারি নষ্ট হয় কি করে ? সব ক্যামন যেন লাগছে । কি করবো বুঝতে পারছি না । একদিকে মন বলছে এতো রাতে ছাদে যাওয়া ঠিক হবে না । আবার মনে হচ্ছে, গেলে কি এমন হবে ? যেতেই পারি ।
যাই না দেখে আসি /
জোছনার চাদের ছায়া ।/
কি হবে করে বল /
মিছে কায়ার মায়া ? /
- কার যেন কবিতার লাইন এটা ? মনে করতে পারলাম না । আশ্চর্য এমন সময় আমি কবিতার লাইন নিয়ে ভাবছি । এর কোন মানে হয় ? মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে মনে হয় । আমাকে সং এর মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে, "পরী" আবার বলল, কি হলো ? আপনি কি যেতে চাইছেন না ?
আমি "না" বলার জন্য মেয়েটির দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকালাম । এমন রূপবতী একটি মেয়ের ডাক কি করে উপেক্ষা করি ? কিছুতেই তা ভেবে পাচ্ছি না । অবশেষে বুকে পাথর বেধে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম, না যাবো না । যাওয়াটা ঠিক হবে না । এটাই ফাইনাল । কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারলাম না । আমার মনোভাব বুঝতে পেরে,পরী'ই বলল,ঠিক আছে তবে । আপনাকে যেতে হবে না । আমি একাই যেতে পারবো ।
বলেই ও সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে উঠে যেতে লাগল । আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে সিঁড়িতে ও'র পায়ের শব্দ শুনতে লাগলাম ।
পরক্ষনেই ভাবতে শুরু করে দিলাম । কাজটা কি ঠিক হল ? কি এমন হতো মেয়েটার সঙ্গে গেলে ? এতো করে যখন বলল । না, না । কাজটা ঠিক হলো না । অভদ্রতা হয়ে গেল । আমার সম্পর্কে কি ধারণা জন্মাল মেয়েটার মনে ? ভাববে, দাম দেখাচ্ছি । ভাব নিচ্ছি । ছি : বাবন, কাজটা তুমি ঠিক করলে না ।
এখন যদি মেয়েটার কোন বিপদ হয়, তা হলে কি সারা জীবন কি তুমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো ? পারবো না । বিষয়টা দীঘদিন বুকের ভেতর খচখচ করে তোমাকে জ্বালাবে । রাতের ঘুম হারাম করে দেবে। তুমি অনুশোচনায় ছটফট করবে । নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমি ক্রমশ হেরে যেতে লাগলাম ।

হঠাৎ করেই যেন পরী'র নামের মেয়েটির প্রতি তীব্র এক আকর্ষণ অনুভব করলাম । সে আকর্ষণের তীব্রতা বলে ব্যাখ্যা করা যাবে না । বুকের ভেতরটা যেন মোচড় দিয়ে উঠতে লাগল। মনে হলে, মনে হল আমি যেন ওর জন্য জন্ম জন্মান্তর ধরে অপেক্ষা করে আছি । ওকে দেখতে না পেলে আমি মরে যাবো । নিজের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারালাম । উপড়ের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললাম, "পরী" আপনি দাঁড়ান আমি আসছি । আমি আসছি ।
বলেই দুটো করে সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে লাগলাম । পরী'র পায়ের শব্দ ততোক্ষণে ক্ষ্নীন থেকে ক্ষ্নীনতর হয়ে এসেছে । এগারো, বারো,তের, চৌদ্দ তলা আমি দ্রুত অতিক্রম করে এলাম । কিন্তু কোথাও পরিকে দেখতে পেলাম না । ও হয়তো আরো উপরে উঠে গেছে।
মেয়েটা এতো দ্রুত উঠছে কি করে ? ষোল তলায় এসে আমাকে দাড়িয়ে পরতে হলো । উপরে উঠার সিঁড়িটা অন্ধকারে ঢাকা । করিডোরের বাতিও নেবানো । ঘুটঘুটে অন্ধকার না হলেও হালকা একটা আলোর আভা ছড়িয়ে রয়েছে । কিন্তু তাতে কোন কিছুই ভাল করে দেখা যাচ্ছে না । আমি সিঁড়ির হাতলে হাত রেখে ডাক দিলাম, "পরী" আপনি কোথায় ?
প্রায় সাথে সাথেই উপর থেকে খুবই ক্ষ্নীন কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, "এই তো, আমি এখানে । চলে আসুন ।"
কি ভাবে আসবো ? কিছুই দেখতে পারছি না তো ।
সোজা উপরে উঠতে থাকুন । আমি দাঁড়িয়েছি । আপনি আসুন ।
আমি হাতরে হাতরে সিঁড়ি ধরে উঠতে লাগলাম । শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে । কপাল থেকে গালের পাশ বেয়ে টপটপ করে ঘাম পরছে । হাতের উল্টো পাশ দিয়ে গাল মুছতে মুছতে উঠতে লাগলাম । সিঁড়ি যেন আর শেষ হতে চায় না । দু'টো ফ্লোর উঠে পরিকে দেখতে না পেয়ে , বলে উঠলাম কোথায় আপনি ? এবার কোন উত্তর এলো না । আমি আবারো বললাম, এই যে শুনতে পাচ্ছেন ? পরী, কোথায় আপনি । পরী ...... পরী ... পরী .....
আমার কণ্ঠ স্বর দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এলে । কিন্তু পরি কোন উত্তর দিল না । আমি জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে পরী'র উত্তরের অপেক্ষা করতে লাগলাম । এক একটি মুহুত'কে মনে হতে লাগল এক একটি বছর । আমি আবার উঠতে লাগলাম । সিঁড়ির অন্ধকার চোখে সয়ে এসেছে । সব কিছু বেশ পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি । কত তলা উঠেছে । তার কোন হিসেব নেই । যেন অনন্তকাল ধরে উঠছি আর উঠছি । সিঁড়ি পরে সিঁড়ি । সিঁড়ি যেন আর শেষ হতে চায় না । আমি উপরে উঠছি, আর চিৎকার করে ডাকছি "পরী" আপনি কোথায় ? আপনি কোথায়। কিন্তু কেউ উত্তর দিচ্ছে না ।
আমার শরীর ভেঙ্গে আসতে লাগল । পায়ে আর চলার মতো জোড় পাচ্ছি না । মনে হচ্ছিল জ্ঞান হারিয়ে পরে যাবো । সিঁড়ি ধরে হাঁপাতে,হাঁপাতে বড় বড় করে শ্বাস নিতে লাগলাম । গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে । ঢোক গিলতে গিয়ে কাশি চলে এলো । খুব জোরে জোরে কেশে উঠলাম ।
ঠিক সে সময় পেছন থেকে কেউ আমার পিঠে হাত রাখার সঙ্গে সঙ্গে কে? কে? বলে চমকে লাফিয়ে উঠে ঘুরে তাকালাম ।
ঘুরেই দেখি "পরী" দাড়িয়ে হাসছে । কি ভয় পেয়েছেন বুঝি ?
উফ আপনি.............সত্যি, সত্যি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম । কোনরকম কথাটা বলে ঢোক গিললাম । গলার ভেতরটা ব্যথা করছে । থুতু গলা বেয়ে নামতে চাইছে না ।
আপনি হাঁপিয়ে উঠেছেন । একটু জিরিয়ে নিন । বলে "পরী" গুনগুন করে গান গাইতে লাগল,

ঘরেতে ভ্রমর এলো গুন গুনিয়ে /
আমারে কার কথা সে যায় শুনিয়ে ...../

আমি মুগ্ধ হয়ে সেই গান শুনতে লাগলাম । ধীরে ধীরে আমার সমস্ত দেহ, মনে যেন আনন্দে ছড়িয়ে পরল । আমি কষ্ট ভুলে গিয়ে মুহূর্তে চাঙ্গা হয়ে উঠলাম । "পরী" আমার হাত নিজের হাতে তুলে নিয়ে তাতে আঙুল বুলাতে বুলাতে গান গেয়ে চলল । আমি তিরতির করে কাপতে কাপতে সে গান শুনতে লাগলাম । বারবার মনে হতে লাগল আমি যেন স্বপ্ন দেখছি । এ যে বাস্তব্য নয় । এ যেন স্বপ্ন । এ যেন কোন নাটক, সিনেমার চিত্রায়ন । একটু পরেই ঘুম ভেঙ্গে দেখবো কিছুই নেই । সব স্বপ্ন । সব অবাস্তব ।
পরী আমাকে দু'হাতে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মাথা রাখল । আমিও ওকে জড়িয়ে ধরলাম । চেপে রাখলাম বুকের সাথে । অসম্ভব মিষ্টি একটা গন্ধ নাকে এসে লাগল । বুঝতে পারলাম গন্ধটা পরির চুল থেকে আসছে । মুহূর্ত,ক্ষণ.কাল কেটে যেতে লাগল এভাবে । দু'জন । দু'জনকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে রইলাম ।

চলবে ..................
প্রথম অংশ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুণ
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×