চীন বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার সেই স্বাধীনতার পর থেকেই। স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় রাশিয়া ও ভরতের কারণে চীন বাংলাদেশের পক্ষে না থাকলেও স্বাধীনতার পরবর্তী সময় বঙ্গবন্ধু চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন জন্য চীনে প্রতিনিধি পাঠিয়ে ছিলেন।
দুরুদুরু বুকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল বঙ্গবন্ধুর বার্তা নিয়ে চীনে পৌঁছে অনেকটা ভয়ে ভয়ে ছিল। কারণ চীন স্বাধীনতা যুদ্ধে আমেরিকা ও পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। কি আছে কপালে, সেই ভয়ে আকাশ পাতাল ভেবে ভেবে তারা প্রথম রাত্রিটি চীনে কাটায়।
কিন্তু বঙ্গবন্ধুর যাদু মাখা বার্তা পেয়ে চীন শুধু বাংলাদেশেকে স্বীকৃতি ই দেয় নাই অর্থনৈতিক এক বিশাল সাহায্য ও পাঠিয়েছিলো। সেই সাথে বাড়িয়ে দিয়েছিলো বন্ধুত্বের হাত ।
চীনের বন্ধুত্ব ও সাহায্য পেয়ে বঙ্গবন্ধু আবেগে আপ্লুত হয়ে পরেছিলেন। দেশ গড়ার সাহস পেয়েছিলেন। এরপর তিনি শুধু চীনের সঙ্গে নয় সারা বিশ্বের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছিলেন।
কিন্তু চীনের সাথে বাংলাদেশের এই সম্পর্কে ভরত ভাল ভাবে নেয়নি। তখন থেকেই তারা নানাভাবে, বঙ্গবন্ধুকে বুঝাতে চেয়েছিল চীন বাংলাদেশের শক্র। পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধ জয়টাকে ভরত নিজেদের জয় ভাবতে শুরু করেছিলো।
কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তান ভরতকে খুব ভাল একটা শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দেয়। ভারত কখনো পাকিস্তানের সাথে কোন যুদ্ধে জিতে নাই। উলটো পাকিস্তান কাশ্মীরের বিশাল অংশ দখল করে সেখানে পাকিস্তান রাষ্ট্র কায়েম করে।
বঙ্গবন্ধু ভরতের কথায় কোন প্রকার কর্ণপাত না করলে কাজ হচ্ছে না ভেবে ভারত অনেকটা প্রভুত্ব দেখাবার জন্য কঠিন পথ অবলম্বন করে ভরত বাংলাদেশেকে হুমকি ও চাপ সৃষ্টি করে আসছিলো । জেনো বঙ্গবন্ধু চীনের সাথে কোন সম্পর্কে না জড়ায়।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেসব হুমকি, ধমকি তোয়াক্কা করেন নাই। উলটো ভরত যে বাংলাদেশের প্রভু নয় সেটা বুঝিয়ে দেবার জন্য বলেছিলেন, তার সেই বিখ্যাত উক্তি, "বিদেশে আমাদের প্রভু নেই বন্ধু আছে।" এটা বলে উনি মূলত ভরতকে ম্যাসেজ দিয়েছিলেন। প্রভু সেজো নয় পারলে বন্ধু হয়ে পাশে থাকো তা না হলে রাস্তা মাপও। শুধু চীন নয় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের সাথেও কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে ছিলেন। এটা ছিলো ভরতকে জন্য কঠিন এক আঘাত। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ ভ্রমণ ভরত কিছুতেই মেনে নিতে পারে নাই। অকুত ভয় বঙ্গবন্ধু কাউকে ভয় পাননি দেশের স্বার্থ ওনার কাছে সব কিছুর উর্ধ্বে ছিলো । তাই তো বলেছিলেন , আমি বন্ধুকের নল ভয় পাইনা ।
পরবর্তী ইতিহাস সবার জানা। ৭৫ এর ঘটনার জন্য ভরত দায়ী। বঙ্গবন্ধুর চীন ও পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক জড়ানো ভরত ভাল ভাবে নেয়নি।
তাই বঙ্গবন্ধুর পাশে থাকা ব্যক্তিদের দিয়েই ৭৫রের ঘটনা ঘটিয়েছে। কারণ ৭৫রের ঘটনা ঘটার আগে সব জানতো ভারত।
তারা নাকি বঙ্গবন্ধুকে সর্তকও করেছিলো। এর মানে হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর যদি প্রাণে বেচে যান তাহলে তার প্রাণ বাঁচিয়েছে, এই অজুহাতে বাংলাদেশের উপর আবার প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। অর্থাৎ ভরত একদিকে চোরকে বলছে চুরি করতে অন্যদিকে গেরস্তকে বলছে সজাগ থাকতে।
৭৫ রের ঘটনার পর ভারতেই বঙ্গবন্ধুর খুনিরা লুকিয়ে ছিলো। আবার ভারত হয়েই তারা ইউরোপ আমেরিকা সহ অন্যান্য দেশে পালিয়ে যায়।
এতেই কি প্রমাণিত হয় না যে, ৭৫ রের ঘটনার সাথে ভরত সরাসরি জড়িত। তারাই ছিলো, সকল ঘটনার নেপথ্য শক্তি। মাস্টার মাইন্ড।
যা বলছিলাম, চীন ও পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক খারাপ করার অনেক চেষ্টা করলেও বারবার ব্যর্থ হয়েছে ভারত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বেচে থাকতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু সারা,বিশ্বের সাথে বলিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে ছিলেন। চীনকে সাথে নিয়ে ব্রিজ কাল বাট রাস্তাঘাট তৈরির পরিকল্পনা
করেছিলেন। চীনের সহায়তায় ই দেশের অধিকাংশ ব্রিজ তৈরি হয়েছিল। যমুনা সেতু তৈরির জন্যও চীন বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে কাজ শুরু করেছিল। চীনকে দিয়ে বাংলাদেশের এতো উন্নয়ন তো অনেকের ই সহ্য হচ্ছিল না । তাই কাপুরুষের মতো যা করার নয় তাই করেছে । বঙ্গবন্ধুকে চিরতরে সড়িয়ে দিয়েছে ।
পরবর্তী যেসব সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় এসেছে, তারা ভারতের চরিত্রের জন্য ই ভারতকে এড়িয়ে চলেছে। চীনের সাথে ভাল সম্পর্কে জড়িয়েছে।
কিন্তু এবার ই ভারত সফল হয়েছে,চীনে ও পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ করতে। মজার ব্যাপার হলো, এ সবের পেছনে ছিলেন,বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার খুনিদের সহচর মন্ত্রী পরিষদের শপথ অনুষ্ঠান আয়োজন ও পরিচালনাকারী সেই দাবী ব্যক্তিটিই ।
সাখাওয়াত বাবনের ব্লগ থেকে
১৭.০৩.২১
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৩৪