[সেন্টার পয়েন্ট - জিকেএন - ট্রেনিং সেন্টার]
আজ লিখতে বসেছি লেকে এক বিকেলে। এর আগে লেখা হয়ে গেছে যাত্রা হলো শুরু এবং বাংলাদেশী ভাইদের সাহচার্য। আগের দু'টো না পড়লেও এটা পড়তে আশা করি আপনার অসুবিধা হবে না, প্রতিটা পর্বকে আমি সম্পূর্ণতা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, জানি না কতটা সফল হয়েছি।
লেকে এক বিকেলে
কৈশোরের সেই প্রাণোচ্ছল দিন গুলোতে বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে নাকে-মুখে কিছু গুঁজে ভোঁ দৌড় মাঠে, ফুটবলটা মাঠের এপ্রান্ত-ওপ্রান্ত করতে করতে ঝপ করেই যেন সন্ধ্যা নামত, খেলায় অতৃপ্তি নিয়ে বাসায় ফেরা।সময়ে সাথে, বয়সের সাথে, বোধ হয় মানুষের ভাল লাগায় নতুন উপাদান যোগ হয়, পছন্দের ক্রম বদলায়।কখন যেন আমার অজান্তেই ফুটবলের জায়গায় চলে এসেছে ধানমন্ডি লেক---মিরপুর রোড পার হয়ে ধানমন্ডি মাঠের পাশ দিয়ে আরোকটু পশ্চিমে হেটে লেকের ধার ঘেষে বসি আমি আর রতন ভাই, উনি আমার চেয়ে চার ক্লাস উপরে পড়তেন আর উনার ছোট ভাই মামুন আমার ক্লাসমেট। এখনো ভাবলে অবাক হই কি অবলীলায় দু'টি অসম বয়সী ছেলে বাদাম খেতে খেতে গল্পে মশগুল হয়ে দেখতাম - পশ্চিমাকাশে হেলে পড়া সূর্যটা রক্তিম আকাশ ছেঁয়ে মায়াবী আলো ছড়িয়ে লেকের পানিতে সোনা রং হয়ে ছড়িয়ে পড়ত।স্রষ্টার তুলির আঁচড়ে প্রকৃতি প্রতিদিন নব নব রুপে সেই তরুণ প্রাণে ধরা দিত।দিন গড়ায়, ঢাকা মেডিকেলের পড়ার চাপে রতন ভাই মহাব্যস্ত।আমার বাদাম খাওয়ার নতুন সঙ্গী জোটে এক ঝাক তরুণ-লুৎফর,বাচ্চু,ইশতিয়াক,মহসীন,সামসু ভাই,জলিল,বকর,শাকিল...।আহ্, কি রঙিন, বর্ণীল সেই দিন গুলো!তার পর বাস্তবতার ছোঁয়া, চাকরী জীবনে প্রবেশ, ইফ-দেন-এলস আর ডু লুপ এর যুক্তির বেঁড়া জালে গোধূলির আলো কখন রাতের আঁধারে হারিয়ে যেত, টের পেতাম না। আজ আবার সেই যুক্তির (আইটি) চাকরীর কল্যাণেই সেন্ট্রাল পার্কের সবুজ শ্যামলীমায় ঢাকা লেকের ধারে -জীবনে প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসাবটা বড় বিচিত্র!
অবশ্য আমাদের ভ্রমণ তালিকায় এটা ছিল না। আমাদের ট্রেনিং সেন্টার,জিকেএন (গ্লোবাল নলেজ নেটওয়ার্ক)-এর প্রশিক্ষক আমাদের হোটেলের (দি কার্ভ) নাম শোনার পর গুগল ম্যাপে দেখিয়ে ছিলেন যে, সেন্টার পয়েন্ট (ট্রেনিং সেন্টার বিল্ডিং) থেকে হেটে হোটেলে যেতে আধা ঘন্টা লাগবে, আর তাতে জায়গাটা দেখাও হবে।আমাদেরও খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু প্রতি দিন বিকেলেই বৃষ্টি হচ্ছিল। ২৯ এপ্রিল,২০১৫ বুধবার বিকেলটা মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে আলো ছড়ালো, আমরা ৩ জন হাটা শুরু করলাম – বান্দার উতামা (ট্রেনিং সেন্টার) থেকে দামানসারা (হোটেল পাড়া)। রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি গল্প করতে করতে। শেষ কবে এরকম নির্ভার বিকেল পেয়েছি, স্মরণ করতে পারছি না। ওয়ান উতামা শপিং মলের নতুন উইংয়ের বিপরীতে পার্কের বিশাল গেট দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম। রাস্তা পার হয়ে ঢুঁকে পড়লাম পার্কে- ধানমন্ডি লেকের স্মৃতি গুলো উঁকি দিচ্ছে।
পেটালিং জায়া স্থানীয় জনসাধারণের কাছে পিজে (PJ) নামে পরিচিত। জায়া মানে বিজয়,সাফল্য। কুয়ালালামপুরে জন সংখ্যার আধিক্যের কথা চিন্তা করে ১৯৫২ সালে সেলাঙ্গোর রাজ্যের পেটালিং জেলার অন্তর্গত পেটালিং জায়া নামক স্থানে ৮০০ বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে স্যাটেলাইট শহরতলী হিসাবে জয় যাত্রা শুরু। উন্নয়নের নানা ধারা পেরিয়ে অবশেষে ২০০৬ সালের ২০ জুন শহরের মর্যাদায় উপনীত হয় পিজে – আয়তন ৯৭.২ বর্গ কি.মি, লোক সংখ্যা ১,৯৭,৯৪৯ (২০১০) । পিজের আর্দ্রতা অত্যধিক, গড় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সারা বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তাই পিজের দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মাঝে রাবার আর পাম গাছের সৌন্দর্য্য দেখার মত। পিজের হৃৎপিন্ড বরাবর ১০ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে সেন্ট্রাল পার্ক- যেখানে আছে বহুতল বিশিষ্ট গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা, স্পোর্টস জোন, দু’টা লেক।শুধু তাই নয়, কুকুর এবং বিড়ালের মালিকেরা এখানে বেড়াতে আসে, স্বাস্থ্য প্রেমীরা জগিং করতে আসে আর প্রকৃতি প্রেমীরা আসে লেক এবং এর আশে-পাশের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে।
আর কথা নয়:
এবার নীরব হবে কবি,
সরব হবে ছবি।
[সেন্ট্রাল পার্ক - মূল ফটক]
[সেন্ট্রাল পার্ক - উপর থেকে তোলা]
[শান্ত সুনিবিড় গাছের ছায়ায় লেকের ধারে]
[লেকের ধার ঘেঁষে সর্পিল পায়ে চলা পথ]
[গোধূলির রক্তিম আভার ছোঁয়া লেগেছে লেকের পানিতে]
[অবারিত সবুজের বুকে সবুজ ছাউনি]
[লেকের স্বচ্ছ জলে নীল আকাশ আর গাছের প্রতিবিম্ব]
[দু'ধারে সবুজ গাছের সারি, মাঝে চলার পথ]
চমৎকার এই বিকেলটা কবি গুরুর কথা দিয়ে শেষ করছি-
এই লভিনু সঙ্গ তব, সুন্দর হে সুন্দর!
পুণ্য হল অঙ্গ মম, ধন্য হল অন্তর সুন্দর হে সুন্দর ॥
চলবে.....
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৯