আগামীকাল ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস ।
আজকের এই আমি যখন পিছন ফিরে তাকাই, তাঁদের মুখ গুলো অজান্তেই ভেসে ওঠে মনের আকাশে । সেই আকাশে তাঁরা সবাই আমার কাছে তারার মতো । প্রত্যেকেই স্ব স্ব মহিমায় উজ্জ্বল । আজ শিক্ষক দিবসে একজন ছাত্র হয়ে তাঁদের স্মৃতিচারণ করছি ।
.
এই আমি আজ কত কিছু লিখছি । কত সুললিত ভাষা ব্যবহার করছি । কিন্তু একদিন এই আমি ‘অ’,’আ’,... লিখতে পারতাম না । আমার প্রাইমারি ইস্কুলের স্যার আমাকে হাতে ধরে শিখিয়ে ছিলেন আমার অতি প্রিয় বাংলা বর্ণমালা । প্রাইমারি ইস্কুলে প্রথম শ্রেণিতে তখন ইংরেজী পড়ানো হতো না । ওই একজন শিক্ষকই আমাদের অংকও করাতেন । উনার কাছেই আমি ১,২,৩... লিখতে শিখেছি । সাদা শ্বশ্রু মন্ডিত, সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত, প্রচন্ড রাগী সেই স্যারের কাছে তাই আমি চির কৃতজ্ঞ । কিন্তু হায়! তাঁর নাম আমি স্মরণ করতে পারছি না । তবে তাঁর শক্ত হাতের চড়ের কথা এখনো ভুলিনি । উনার চড় খেলে মাথা ঘুরে যেতো । ইস্কুলের সেই প্রথম বছরটা আমি সব সময় জানালার পাশে বসতাম । কারণ আমার পিঠাপিঠি দু’বোন পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতো একটা গাছের নীচে । ওদের না দেখলে আমি কেঁদে দিতাম । এই কারণে স্যার আমার প্রতি চরম বিরক্ত ছিলেন । পরীক্ষা কী, সেটা আমার বোধগম্য ছিল না । প্রশ্ন হাতে নিয়ে বাবা যখন জিজ্ঞেস করলেন কী উত্তর দিয়েছি । আমি বললাম, প্রশ্নে যা আছে তাই লিখে এসেছি । উনি মৃদু হেসে তার বোকা ছেলেটাকে কিছুই বললেন না । মা হারা ছেলেটার পিঠে দু’ঘা দিতে তাঁর হয়তো মায়া হয়েছিল ।
.
প্রথম শ্রেণীর ফলাফল দিচ্ছেন আমার অতি রাগী স্যার । আমার পালা এলো । উনি বিরস মুখে আমার ফলাফল কার্ডটা আমার হাতে দিলেন । আমি ছো মেরে সেটা নিয়ে দৌঁড় । এক দৌঁড়ে কলাবাগান প্রাইমারি ইস্কুলের সীমানা পেরিয়ে আমাদের কলোনির বাসায় । হাঁপাতে হাঁপাতে বাবার হাতে কার্ডটা দিয়ে পরম আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি । বাবা কিছুই বলছেন না । কিছুক্ষণ পর শুধু বললেন, তোমাকে আবার ওই ক্লাসেই গিয়ে বসতে হবে । আমার কোন ভাবান্তর হলো না । তবে বাবার মন খারাপ, তাই আমারও মন খারাপ হলো । আমার কার্ডে আমার শ্রেণি শিক্ষক একটা মন্তব্য লিখে ছিলেন, “আনমনা” । আমি বাবাকে কথাটার অর্থ জিজ্ঞেস করলাম । উনি শুধু বললেন, তুমি কি ক্লাসে অমনোযোগী?
.
সেই “আনমনা” আমি আজও “আনমনা”-ই রয়ে গেছি । এক ছোট্ট শিশুকে একজন শিক্ষক শুধু শাসনই করেন নি, তার মনের খবরও তিনি রেখে ছিলেন । পরের বছর দ্বিতীয় হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলাম । আর কখনো পা পিছলাইনি ।
.
একটার পর একটা ধাপ পেরিয়েছি । প্রতি ধাপেই কিছু স্মরণীয় শিক্ষকের সান্নিধ্যে এসেছি । তাঁদের সবার কথা বলতে গেলে অনেকেই বিরক্ত হবেন । অন্য কোন দিন, অন্য কোন শিক্ষক দিবসে, অন্য কারো কথা বলবো ।
.
শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষককে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়ে আজকের মত এখানেই ইতি টানছি ।
.
মো: শামছুল ইসলাম
৪ অক্টোবর ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১০:২৮