আজ জৈষ্ঠ্যের ৩১, গতকাল ছিল ৩০। আষাঢ়ের আগমন ধ্বনি আকাশে-বাতাসে। গতকাল সকাল থেকেই মেঘে ঢাকা আকাশটা নিরন্তর বৃষ্টির ধারা হয়ে ঝরছিল। কাজের ব্যস্ততায় আমি মাঝে মাঝে উঁকি দিয়েছি। মন দিয়ে দেখা হয়নি মেঘমেদুর প্রকৃতির রূপ। দুপুর গড়িয়ে গেছে। পেট চো চো করছে। একা হাতে সব কাজ শেষ করতে পারেননি গৃহকর্ত্রী । তাই ঘর-বারন্দায় পায়চারি করে সময় কাটছিল। বারান্দা থেকে দৃশ্যটা দেখে ক্ষুধা ভুলে গেলাম। মসজিদের গেট ঘেঁষে মুখটা দুই হাঁটুর মধ্যে লুকিয়ে একজন বসে আসে। পায়ে পলিথিন জড়ানো, সম্ভবত কোন ক্ষতকে ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা। বেদনার যে সর্বব্যাপী রূপ, বৃষ্টিমুখর দিনে অসহায় সেই মানুষটা যেন তার সমস্তটা ধারণ করে আছে। আমার হৃদয়টা বর্ষার মতোই কাঁদছে। একটা ছবি তুললাম। মনে হলে, বাসায় উনার অপেক্ষায় হয়তো পরিবারের সবাই অপেক্ষা করছে। ভাবছে, উনি চাল-ডাল নিয়ে এলেই চটপট রান্না চড়িয়ে দিতে হবে। ছেলে-মেয়ে গুলো কাল থেকে কিছু খায়নি। আমি দ্রুত ঘরে গেলাম। একটা খামে একটা নোট ভরে বারান্দায় ফিরে দেখি উনি মুখ তুলে তাকিয়েছেন। আমি উনাকে ডাকছি। উনি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু আমার ডাকে সাড়া দিয়ে রাস্তার এধারে, আমার বাসার কাছে আসছেন না। এই সময় ময়লার ভ্যানগাড়িটা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। আমি ভ্যানচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলাম। খামটা ছুড়ে দিলাম। ভ্যানচালক অচেনা মধ্যবয়সী অসহায় লোকটাকে খামটা দিল। আমি বারান্দার গ্রিল থেকে একটু দূরে এসে ওকে দেখছি। খামের ভিতরে হাতড়ে কিছু না পেয়ে ও খামটা ছিড়ে ফেললো। নোটটা হাতে নিয়ে বসে আছে। বেদনায় পাথর সে মুখে কোন অভিব্যক্তি নেই। বন্যার পানির মতো দুঃখের সাগরে নোটটা ভেসে গেল সামান্য খড়কুটোর মতো।
মো. শামছুল ইসলাম
১৪ জুন ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ৭:০৪