somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাম্মা দাইসুকি

৩০ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৩:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাচ্চাটা স্কুলের পর, বাচ্চাদের একটা ক্লাবে থাকে কিছুক্ষণ। ওটা আসলে স্কুলেরই একটা বর্ধিতাংশ। যেখানে কর্মজীবি মা'র বাচ্চারা সময় কাটায়। আমি কাজ থেকে ফিরে ওকে নিয়ে আসি।
প্রথমে আমি মা, তারপর বাঙ্গালী মা এবং সবশেষে কর্মজীবি মা। মনটা সব সময় চোরের মত হয়ে থাকে। যতক্ষণ স্কুলে থাকে, ততক্ষণ ঠিক আছে। কিন্তু যখনই ওর ক্লাবে যাবার সময় হয়, দূরে বসেও আমার টেনশন হতে থাকে। আহারে! আমার জানটা না জানি, কি করছে?
মাঝে মধ্যে দুই চার মিনিট দেরী হলেই আমার ভেতরটা কাঁপতে থাকে। মনে হয়, এই বুঝি গেলেই ঠোঁট ফুলিয়ে বলবে-"এত দেরী করেছ কেন?"
কিন্তু আমি পৌঁছাবার সাথে সাথেই যে হাসিটা তার দেখি-- আমার বুকের উপর থেকে পাষাণভারটা নেমে যায়। গতকাল গেলাম আমার মা'টা কে আনতে, যথারীতি সে হাসি মুখে এগিয়ে এসে, আমাকে লেখা তার প্রথম চিঠিটা দিল।

চিঠিতে লেখা
মাম্মা দাইসুকি
ইৎসুমো হায়াই ওমুকায়ে
আরিগাতো
বাংলা করলে দাঁড়ায়.. মা, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তুমি সবসময় আমাকে তাড়াতাড়ি নিতে আসো দেখে, তোমাকে ধন্যবাদ।
চিঠিটা পড়েই আমার চোখে কি যেন হল, দেখি চোখদুটো ঝাপসা হয়ে গেছে। এটা মেয়ের কাছে থেকে পাওয়া আমার প্রথম চিঠি। আজকাল চিঠির স্বাদ কেমন ভুলেই গেছি। সেদিন আমার মাকে বল্লাম, মা আমাকে একটা বড় করে চিঠি লিখ তো! মা বল্লেন, "বাবা রোজ তো কথা হয়। কি লিখবো, খুঁজে পাইনা যে!"
অথচ আমার মেয়েকে কাগজ কলম দিলেই, নিজেকে আঁকবে, একটা ফুল এবং একটা প্রজাপতি আঁকবে আর আঁকবে আমাকে।
সারাক্ষণ আমাকে আঁকে। অথচ আমি ওর মোটেও ভালো মা নই। যখন তখন রাগ করি। শাসন করি।
আমার চেয়ে মেয়েকে ঢের ভালোবাসে ওর বাবা। ভদ্রলোকের পুরো পৃথিবী এক দিকে আর মেয়ে আরেকদিকে। মেয়েকে বকলে যে মানুষ আমাকে বকতেও এক মুহূর্ত দ্বিধা করেনা। মেয়েটার কল্পনার জগতে সেই মানুষটার ঠাঁই খুব কম। তার পুরো কল্পনার জগতটা জুড়ে আমি।
ওর লুকোনো সব কথা আমার সাথে। ওইটুকুনি বাচ্চা, তবুও এসে ফিসফিস করে বলবে-"মাম্মা আমি একটা নাচ শিখেছি। তোমাকে দেখাবো। বাবাকে যেন বলো না।" আবার বাবা এলে বলবে, বাবা আমি একটা কথা আম্মুকে বলেছি, তুমি শুনে নাও।
ও আমার জীবন্ত খেলনা। প্রতিটা মুহূর্ত ও আমাকে আনন্দে ভরিয়ে রেখেছে।
আজকাল একলা হলেই চোখ মুছি। ও যে আমার রঙ্গীন ঘুড়ি। ওর সূতোটা আমি আমার সমস্ত শরীর, মন আর এই জীবন দিয়ে বুনেছি।
সেই ঘুড়িটা বড় হচ্ছে আর একটু একটু করে শুরু হচ্ছে ওর দূরের আকাশে ওড়াউড়ি। ওর জগতটা আরও বড় হলে আমি কি করে থাকবো? বুঝে উঠতে পারিনা।
তবুও দিনরাত সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, "আমার সন্তান নিরাপদে থাক। পৃথিবীর তাবত হিংস্রতা থেকে দুরে থাক। সুস্থ থাক। হে পরম করুণাময় আমার সন্তানের দুঃখী মুখ যেন আমাকে কখনই দেখতে না হয়।"
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১:০০
৩৩টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×