somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি ভাত খাচ্ছিঃ From London With Love (পর্ব-১)

০২ রা মে, ২০২০ রাত ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ভাত খাচ্ছি।

লন্ডনে পড়তে আসার পর অনেকেই আমার খোঁজখবর নিয়েছেন।

ভাত: খোঁজ নেয়ার প্রথম বিষয় ছিল ভাত খাচ্ছি কিনা। দেশে থাকতে যারা বলত ভাত কম খাও, এখন তারাও আমি সময়মত নিয়ম করে প্লেটভর্তি গরম ভাত খাচ্ছি কিনা তা নিয়ে চিন্তিত। চিন্তার কোন কারণ নেই। খাওয়া নিয়ে কোন সমস্যা হচ্ছেনা।

লন্ডন শহর কেমন লাগছে: লন্ডন শহর আমার খুবই ভাল লাগছে। এই শহরে কোন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুঁজে পাইনি। কিন্তু সমস্ত শহরে কিছু না কিছু হচ্ছে সারাক্ষণ। ড্রামা, কমেডি শো, মিউজিক, ডিসকাশন, বুক লঞ্ছিং, বিতর্ক, সেমিনার, ট্রেনিং ইত্যাদি। খুবই ভাইব্রেন্ট শহর। চারিদিকে ঐতিহ্যের ছাপ। আমি আমার ডর্মের একটা রুমে উঠি প্রথমে যেটা ছিল রাস্তার পাশে। ভাবলাম ভালই হয়েছে রাস্তা দেখব। মানুষ কি করে দেখতে পারব সারাক্ষণ রুমে বসে বসে। কিন্তু ৩-৪ দিনের মধ্যেই অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। রাত ৩ টার দিকে রাস্তার ধারে বিভিন্ন দেশের পোলাপান গান ধরে। দৌড়াদৌড়ি করে। খিল খিল করে হাসে। ট্যাপ ডান্স করে। পুলিশের গাড়ি যায়। এত শব্দের জন্য ঘুম এবং পড়ায় সমস্যা হচ্ছিল। ম্যানেজমেন্টকে যেয়ে বললাম আমার সমস্যা হচ্ছে বদলে দিন রুম। তারা তারপর আমাকে আরেকটি রুম দিল। এই রুম থেকে ডর্মের ভেতরের একটি কোর্টইয়ার্ড দেখা যায়। খুব ভাল পরিবেশ। কয়েকটি বেঞ্চ আছে কোর্টইয়ার্ডে। ইচ্ছা হলে রোদের মধ্যে বসে বই পড়ি।

ক্লাস কেমন লাগছে: আসলে ২ তারিখ থেকে ২০ তারিখ ছিল শুধুমাত্র আমাদের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের গণিত এবং পরিসংখ্যান ঝালাই ক্লাস (২-১৮ তারিখ ক্লাস এবং ২০ তারিখ পরীক্ষা)। আগামিকাল থেকে অর্থাৎ, ২২ সেপ্টেমবর থেকে ২৮ সেপ্টেমবর হচ্ছে Welcome Week। এই কদিনে সোয়াসের ছাত্র ইউনিয়ন, বিভিন্ন ক্লাব এবং সোসাইটি নানা কিছুর আয়োজন করবে এবং সবাইকে স্বাগত জানাবে। ২৯ তারিখ থেকে আমাদের ও অন্যান্য বিভাগের সত্যিকারের ক্লাস শুরু হবে। এই কদিন জনাব ভাসোস নামে একজন প্রফেসর ক্লাস নিয়েছেন। তিনি মূলত আমাদের প্রতিবেশী University College London (UCL) এর পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের প্রফেসর। তিনি এসেই একের পর এক Proof করানো শুরু করেন যা আসলে সিলেবাসে দেয়া টপিকের প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক না। আমি ছাড়া আমার বিভাগের অন্য সবার অনার্স অর্থনীতিতে। তারাও প্রতি ক্লাসের পর আলোচনায় বলতে থাকে যে যেসব জিনিস উনি করাচ্ছেন তা খুব একটা প্রাসঙ্গিক না। শেষ ক্লাসে জানতে পারলাম ঘটনা। উনি বললেন যে আসলে ৩০ তারিখ থেকে UCL এ গণিতের কোন একটি কোর্স নতুন নেয়া শুরু করবেন। তাই আমাদেরকে নানা Proof শিখিয়ে নিজেকে একটু প্রস্তুত করে নিয়েছেন উনি। খুব মজা। ঘরপোড়ার আগুণে আলুপোড়া খাওয়ার মত অবস্থা। কিন্তু পরীক্ষার প্রশ্ন প্রাসঙ্গিক ও সহজ করায় শেষে আর কোন সমস্যা হয়নি।

পরীক্ষার পর এই আপদ থেকে মুক্তি পাওয়ায় একটি পার্টির আয়োজন করা হয় আমাদের ডর্মে। একজনের জন্মদিনও পড়ে যায় একইদিনে। পার্টির ইন্সট্রাকশন ছিল BoB অর্থাৎ ব্রিং ইওর ওউন বটল। কিসের বোতল নিতে হবে কিছু বলা হয়নি। পলিসিতে কিছু বলা না থাকায় আমি জুসের বোতল নিয়ে যাই। রাত ৩ টার দিকে ঘুমাতে আসি। আবার সকাল ৯ টায় কনফারেন্স অ্যাটেন্ড করার জন্য উঠতে হয়।

ও, কনফারেন্স সম্পর্কে বলিনি। পরীক্ষার পর গতকাল (২০ সেপ্টেম্বর) এবং আজকে (২১ সেপ্টেম্বর) সোয়াসের অর্থনীতি বিভাগ তাদের ৬৫তম বছরপূর্তি উপলক্ষে ২ দিনব্যাপী একটি কনফারেন্সের আয়োজন করে। নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় (নেটে পাবেন)। আয়োজনের এক পর্যায়ে ফ্যাকাল্টিরা কে কি রিসার্চের কাজ করছেন সেটার ওপর প্রেজেন্টশন দেন। ডিসকাশনে আরেক প্রাক্তন সিনিয়র ফ্যাকাল্টিরা বলে ওঠেন যে রিসার্চগুলো বেশি ইউরোপ-আমেরিকা কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে কিনা, শুধু চায়না চায়না করলে হবে নাকি সাউথ এশিয়ার দিকে আরও জোর দিতে হবে, আফ্রিকার কিছু দেশ নিয়ে গবেষণা বেশি আবার কিছু দেশ নিয়ে গবেষণাই নেই- এমন কেন? ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাৎ তাদের কথা ছিল, সোয়াসের অর্থনীতি বিভাগের ভিশন অনুযায়ী যেই ধরনের কাজ তাদের করার কথা সেই ধরনের কাজ থেকে তারা দূরে সরে যাচ্ছে কিনা। এসব নানা আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক দেখলাম স্যান্ডউইচ খেতে খেতে। সেমিনারে বিভিন্ন ধরনের স্যান্ডউইচের আনলিমিটেড সাপ্লাই ছিল। সত্যিই আনলিমিটেড সাপ্লাই ছিল কিনা তা যাচাই করা হয়েছে (Guess by Whom !)। কনফারেন্সে গতকাল সোয়াসের বিখ্যাত প্রফেসর Mushtaq Khan স্যার এবং আজকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিডার Ha-Joon Chang স্যারের সাথে দেখা হয়। Ha-Joon Chang স্যারের পপুলার বইগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ Kicking Away the Ladder; Bad Samaritans এবং Economics: The User’s Guide। উনার সম্পর্কে কিছু না জানা থাকলে এই ভিডিওটা দিয়ে শুরু করতে পারেনঃ

[১২ মিনিটের এই মজার অ্যানিমেশনটি তার Economics: The User’s Guide এর উপর দেয়া একটি লেকচারের ভিত্তিতে বানানো। Economic Pluralism এবং অর্থনীতির বিভিন্ন ঘরানা সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকলে্ এটা ভাল লাগবে আশা করি।]



Writer's ID

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২২ ভোর ৬:৫৪
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×