somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাওন আহমাদ
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

আলৌকিক বন্ধন

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৃথিবীতে তে এমন কিছু সম্পর্ক বা বন্ধন থাকে, যাকে ধরাবাঁধা কিছু শব্দের মাধ্যমে কিংবা কখনো কখনো কোনো শব্দের মাধ্যমেই তাকে প্রকাশ করা যায় না। শব্দের এতো ক্ষমতাও থাকেনা সেই বন্ধন গুলোকে বিশেষণ দেওয়ার, এই বন্ধন গুলোকে কেবল চিত্তের গহীন গভীর দিয়ে অনুভব করা যায়, প্রাপ্তির আনন্দ নিয়ে চোখ থেকে সুখ অশ্রু ফেলা যায়ক।

আমার মামীকে কে নিয়ে এর আগেও আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম। আমাদের সকলের কাছে তিনি পৃথিবীর সকল ভালো মামীদের মধ্যে অন্যতম। তাকে নিয়ে প্রশংসা করার যোগ্যতাও আমরা রাখিনা। মানুষ টা অন্য সকল প্রাণীকে ভালোবাসার অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে। মায়ার এক বিশাল সমুদ্র তার বুকে ধারণ করে আছেন। আমরা যে কেউ যখন তখন সেই সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে বুক ভরে শ্বাস নিতে পারি, সমুদ্রে নেমে মমতার জলে গা ভেজাতে পারি। আমাদের সকলের একমাত্র নির্ভযোগ্য আশ্রয়স্থল আমাদের মামীর আঁচলের ছায়া।

মামার বাসা থেকে আমার কর্মক্ষেত্র কাছাকাছি হওয়ায় গত দুই বছর ধরে আমি আমার মামার বাসা থেকেই অফিস করছিলাম। এর আগেও আমি আমার অন্যান্য কাজিনরা মাসের পর মাস এখনেই পড়ে থকতাম। আমর অন্য কাজিনরা মামার বাসায় থেকেই তাদের পড়ালেখার জীবন শেষ করেছেন। তো যা বলছিলাম, এই দুই বছর একটি বারের জন্যেও মনে হয়নি আমি আমার মামার বাসায় থাকছি; বরং মনে হয়েছে, আমি আমার পরিবারের সাথেই আছি। যেখানে আমার ভাই-ভাবীরা আছে, আছে তাদের সন্তান রাও। যাদের কখনোই আমার কাজিন বা কাজিনের বাচ্চা বলে মনে হয়নি। মনে হয়েছে তারাই আমার আপন ভাই-ভাবী, আর তাদের বাচ্চা গুলো আমাই বাচ্চার মতো। বাচ্চা গুলোও আমাকে চোখে হারায়। মামী আমার মায়ের মতো সদা আমাকে নিয়ে ঊদ্বিগ্ন থাকতেন। আমি কি খাব-না খাব, আমার জন্য আলাদা রান্না করতেন, সাথে আমার ভাবীও যুক্ত হতেন। বাড়ি ফিরতে একটু লেইট হলেই ফোন করে অস্থির হয়ে যেতেন আমি কোথায় আছি? এখনো ফিরছিনা কেনো? স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়ি ফিরিতে একটু বেশি লেইট হলে, তারা না খেয়ে আমার জন্য বসে থাকতেন। আমি বাসায় যাবার পর, সবাই মিলে একসাথে বসে খেতাম আর রাজ্যের আলাপ জুড়ে দিতাম।

হঠাৎ করে অফিস সিফট করায়, বাসা থেকে অনেক ঝক্কি হয়ে যাচ্ছিলো যাতায়াত করায়। তাই বাসা নিলাম অফিসের কাছাকাছি। গত মাসেই উঠার কথা ছিলো; কিন্তু আচানক জ্বর চলে আসায় আর উঠা হয়নি। লাস্ট বৃহস্পতিবার আমি আমার সকল কাপড় আয়রন করতে নিয়ে যাচ্ছিলাম, মামী দেখে বললেন এতো কাপড় কোই নিয়ে যায়? আমি বললাম, আয়রন করতে। মামী আবার বললেন, তুই তো কাপড় বাসাতেই আয়রণ করিস। উত্তরে আমি বললাম ,চলে যাব তাই সব গুলো একসাথে আয়রন করিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমার কথা শেষ হবার সাথে সাথেই আমার মামীর চোখে আষাঢ়-শ্রবণ, অশ্রুসিক্ত নয়নে কাঁপা গলায় বললেন, যা তোরা সবাই চলে যা,সবাই আমাকে রেখে চলে যা, আমি যাব কার কাছে? আমি কিছু সময়ের জন্য ফ্রিজ হয়ে গেলাম কিছুই বলতে পারছিলাম না। আজ সকালে যখন চলে আসছিলাম, মামী আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছিলেন না, হয়তো তার অশ্রুযুগল চোখ আমাকে দেখাতে চাচ্ছিলেন না। আমি জানি মামী সময়ে-অসময়ে নানা বাহানায় আমাকে কল করে বাসায় যেতে বলবেন; আর আমিও মায়ার লোভে ঠিক তার আঁচলের নিচে গিয়ে আশ্রয় নিব।

পৃথিবীতে এক জীবনে মানুষ সবকিছু পায় না; কিন্তু এই না পাওয়ার মাঝেও কিছু কিছু জিনিস পায় যা সকল না পাওয়াকে ছাপিয়ে যায়, যা না পাওয়ার সকল অতৃপ্তিকে প্রাপ্তির তৃপ্তিতে ভরিয়ে দেয়।আমিও জীবনে অনেক কিছুই পাইনি এবং অনেক ছোট বয়সেই অনেক কিছু হারিয়েছি, এর পরিবর্তে আমি আমার মামীকে পেয়েছি যে পরম মমতায় আমাদের জড়িয়ে রাখার ক্ষমতা রাখেন।

ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:০৭




মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…
১. প্রথমে বলেছেন মৃতদের পেটে কাটাছেড়ার ডাহা মিথ্যা। পরে স্বীকার করেছেন দাগ থাকে।
২. আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×