somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাওন আহমাদ
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

যে হাতে ঘোরে অর্থনীতির চাকা

০১ লা মে, ২০২৫ সকাল ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মে দিবস, যা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস নামেও পরিচিত, প্রতি বছর ১ মে বিশ্বব্যাপী এই দিনটি পালন করা হয়। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায় ও সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক প্রতীক—এই দিন। বাংলাদেশেও মে দিবস অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালিত হয়।

এই দিনে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার, মর্যাদা এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশের দাবি নিয়ে আওয়াজ তোলা হয়। একই সাথে স্মরণ করা হয় সেইসব সাহসী শ্রমিকদের কথা—যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।


মে দিবসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:

১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের শ্রমিকরা দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করেন। হে মার্কেটের সেই শ্রমিক ধর্মঘট এবং সাবসিকুয়েন্ট বোমা হামলায় বহু শ্রমিক ও পুলিশ সদস্য নিহত হন। এই ঘটনা শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

পরবর্তীতে, ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে ১ মে কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই থেকে মে দিবস বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মে দিবসের তাৎপর্য:


বাংলাদেশ একটি শ্রমনির্ভর অর্থনীতি। গার্মেন্টস শিল্প, কৃষি, নির্মাণ এবং অন্যান্য সেক্টরে কোটি কোটি শ্রমিক নিয়োজিত। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে, অনেক ক্ষেত্রেই এসব শ্রমিক ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প, কৃষি, নির্মাণসহ অনেক সেক্টরে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ বেশ কঠিন। অনেক সময় তাদেরকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই কাজ করতে হয়। মালিক পক্ষও তাদের প্রতি মানবিক আচরণ দেখায় না, খারাপ ব্যবহার করে। শ্রমিক আইনে (লেবার ল) নির্দিষ্ট নিয়মকানুন থাকলেও, বাস্তবে এই দেশে সেগুলোর তোয়াক্কা করা হয় না।

যেমন:
• অতিরিক্ত সময় কাজ করানো: নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের বেশি কাজ করালে বাড়তি মজুরি দিতে হয়। কিন্তু অনেক সময় শ্রমিকদের জোর করে অতিরিক্ত কাজ করানো হয়, অথচ সঠিকভাবে মজুরি তো দেওয়া হয়ই না বরং ন্যূনতম মজুরির নিচে মজুরি প্রদান করা হয়।
• চাকরি থেকে হুট করে বাদ দেওয়া: কোনো নোটিশ না দিয়েই বা যথাযথ কারণ ছাড়া শ্রমিকদের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়। অথচ উচিত ২-৩ মাসের একটা সময় দেওয়া। যাতে এই সময়ের মধ্যে কর্মী অন্য কোথাও কাজের ব্যবস্থা করে নিতে পারে।
• ফ্যাক্টরি তালা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া: কখনো কখনো মালিকরা হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ করে টাকা-পয়সা না দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে বড় ধরনের বিপদের মধ্যে পড়ে যায়।


বাংলাদেশে মে দিবস পালনের একটি বিশেষ দিক হলো—এই দিনে শ্রমিক সংগঠনগুলো; মিছিল, সমাবেশ ও আলোচনার আয়োজন করে। এই আয়োজনে তাদের মূল দাবি থাকে:

• ন্যায্য মজুরি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।
• নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা।
• শ্রম আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা।
• কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের সমান অধিকার ও নিরাপত্তা।
• শিশুশ্রম বন্ধ করা।


কিন্তু বছর পেরিয়ে বছর এলেও তাদের এই দাবিগুলো আলোর মুখ দেখে না। মিষ্টি সান্ত্বনা আর লিখিত কাগজপত্রের আড়ালে চাপা পড়ে থাকে অন্ধকারে। তবুও তারা আশায় বুক বাঁধে—একদিন আলো আসবে এই অপেক্ষায়…

মে দিবসের শিক্ষা ও আমাদের করণীয়:

মে দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—শ্রমিকদের অধিকার কোনো দয়ার দান নয়, বরং তাদের ন্যায্য প্রাপ্য। একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য। এই শ্রমিকদের হাতেই ঘুরে দেশের অর্থনীতির চাকা। তাই, তাদের প্রতি আমাদের সকলের সম্মান জানানো এবং তাদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।

ই বিশেষ দিনে আমাদের অঙ্গীকার হোক:

• সকল শ্রমিকের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে সোচ্চার থাকা।
• নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরিতে সহযোগিতা করা।
• শ্রম আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
• শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
• দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্রমিকদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া।

মে দিবস কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি শ্রমজীবী মানুষের আত্মমর্যাদা ও অধিকার আদায়ের একটি স্বরণীয় দিন। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হলে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করা অপরিহার্য।

আসুন, এই মে দিবসে আমরা সবাই মিলে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হই এবং একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে প্রতিটি শ্রমিকের অবদানকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০২৫ সকাল ১০:১৭
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×