
ইট-কাঠের শহরে শীত শীত গন্ধ অনুভূত হচ্ছে; চুপিচুপি বাতাস এসে গায়ে বুলিয়ে দিচ্ছে মৃদুমন্দ হিমেল পরশ। ভোরবেলা বারান্দায় দাঁড়ালে সাদা চাদর টেনে দৃষ্টিতে বাঁধ সাধছে কুয়াশা। ছাদের গাছগুলোর গা ধুয়ে দিচ্ছে শিশির। প্রকৃতিতে মিষ্টি সোনারাঙা রোদ আঁকিবুঁকি করছে; নেই গ্রীষ্মের কাঠফাটা দাবদাহ, নেই বর্ষার অঝোর ধারায় ভিজে যাওয়াও।
শীতপ্রেমীদের জন্য শীত আনন্দ আর উৎসবের বার্তা বয়ে আনলেও যাদের কোল্ড অ্যালার্জি বা ঠান্ডার সমস্যা, শীত এলেই তারা পড়ে যান মহা বিপাকে। শীতের এই যন্ত্রণায় শিশু ও বয়স্করা ভোগেন বেশি। ঠান্ডায় অ্যালার্জি কিংবা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকলে তো কথাই নেই—এমন ব্যক্তিদের জন্য শীতে চাই বাড়তি যত্ন। শুধু নিজেদের নয়, পোষা প্রাণীর কথাও এই সময় ভুললে চলবে না।
১. কেমন হবে শীতের যাপিত জীবন?
শীতের দিনের সবচাইতে বড় দাওয়াই হলো উষ্ণতা। ঘরে যাতে হিমেল হাওয়া ঢুকতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। তবে গুমোট ভাব এড়াতে কিছুটা বাতাস চলাচলের সুযোগও রাখা চাই।
* পোশাক: কয়েক স্তরে পোশাক পরুন। একবারে খুব ভারী জ্যাকেট না পরে কয়েকটি পাতলা কিন্তু আরামদায়ক কাপড় পরলে শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখা সহজ হয়। কানটুপি, হাতমোজা ও পামোজা ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
* খাদ্যাভ্যাস: প্রকৃতি এখন শীতকালীন টাটকা শাকসবজিতে ভরপুর। পুষ্টিগুণ পেতে এগুলো নিয়মিত খান। পানি পানের তৃষ্ণা কমে গেলেও শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি।
* পরিচ্ছন্নতা ও সুরক্ষা: কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন। তবে বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন গোসল না করিয়ে শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে। আগুনের কুণ্ডলী বা হিটার ব্যবহারের সময় সাবধান থাকুন, যেন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা না ঘটে।
২. সোনামণিদের বাড়তি যত্ন
শীতে শিশুদের সর্দি-কাশি, নাক বন্ধ হওয়া বা নিউমোনিয়ার মতো ঝুঁকি বাড়ে।
* পরিবেশ: শিশুকে সবসময় পরিষ্কার এবং শুষ্ক পরিবেশে রাখুন। বাইরে বের করার সময় অবশ্যই মাথায় টুপি এবং পায়ে মোজা পরিয়ে নিন।
* গোসল ও মালিশ: শিশুদের প্রতিদিন গোসল না করিয়ে ৩-৪ দিন অন্তর কুসুম গরম পানিতে দ্রুত ধুইয়ে নিন। মনে রাখবেন, সরিষার তেল অনেক সময় শিশুর সংবেদনশীল ত্বকে র্যাশ তৈরি করে বা নাকে ঢুকে শ্বাসকষ্ট ঘটাতে পারে। তাই এর বদলে ভালো মানের বেবি অয়েল ব্যবহার করুন।
* সতর্কতা: শিশু ঘেমে যাচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন। ঘামলে দেরি না করে দ্রুত নরম কাপড় দিয়ে মুছে দিন।
৩. পরিবারের প্রবীণদের প্রতি ভালোবাসা
বয়সের ভারে প্রবীণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়, তাই এই সময় তাদের জন্য দরকার আলাদা নজরদারি।
* উষ্ণতা ও আরাম: তাদের অজু বা হাত-মুখ ধোয়ার জন্য কুসুম গরম পানির ব্যবস্থা করুন। ঘরের মেঝেতে কার্পেট বিছিয়ে দিন যাতে তাদের পা ঠান্ডা থেকে সুরক্ষিত থাকে।
* মানসিক ও শারীরিক সহায়তা: অনেক প্রবীণ আলঝেইমার বা ডিমেনশিয়ায় ভোগেন, ফলে তারা নিজেদের কষ্টের কথা ঠিকঠাক বলতে পারেন না। তাদের ওষুধ ও খাদ্যাভ্যাসের প্রতি বিশেষ যত্ন নিন। ঘনঘন প্রস্রাব করার প্রয়োজন হলে বিরক্ত না হয়ে সহজভাবে সহযোগিতা করুন।
৪. পোষা প্রাণীদের প্রতি যত্ন
আপনার বাড়ির বিড়াল, কুকুর বা পোষা পাখিটিও কিন্তু শীতে কষ্ট পায়। এমনকি এ সময় গবাদিপশুরও বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়।
* তাদের শোয়ার জায়গাটি খড় বা মোটা কাপড় দিয়ে উষ্ণ রাখুন।
* খাবার পাত্রের পানি নিয়মিত বদলে দিন; কারণ দীর্ঘক্ষণ জমে থাকা পানি খুব বেশি ঠান্ডা হয়ে যায়, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
৫. সবার জন্য সাধারণ কিছু টিপস
* বাইরে বের হলে ধুলাবালি থেকে বাঁচতে অবশ্যই মাস্ক পরুন।
* ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করুন।
* সামান্য সর্দি-কাশিতে মধু, তুলসী পাতা বা আদা চা বেশ কার্যকর। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে ঘরোয়া টোটকার ওপর নির্ভর না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
* অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং পুরো কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।
শীত আসুক প্রশান্তি নিয়ে, রোগ নিয়ে নয়। আপনার একটু সচেতনতাই পারে আপনার পরিবারকে নিরাপদ রাখতে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



