somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শেখ এম উদ্‌দীন
আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

টিউশনির বেতন এবং একটি ঈদের অপমৃত্যু

১৭ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৯ সালের রোজার ঈদ। নিজের খরচ এবং সংসারে বাড়তি খরচের জন্য কোচিং এর ক্লাসের সাথে দুইটি টিউশনি করি। যদিও এজন্য অর্থশালী, ফেলোশিপ হোল্ডার বন্ধুদের উদাহরণ দিয়ে অনেক কটু কথাই শুনতে হত , আর যেহেতু পড়াশুনার পাশাপাশি একটা কিছু না করলে যারা কথা শুনায় তাঁরা এক বেলা খাওয়াবেনা তাই তাঁদের ঐ তির্যক মন্তব্য অবলিলাতে হজম করে নিজের কাজ করতে থাকতাম। সাধারণত খারাপ মানের টিউশনি করতাম না, খুব বেছে বেছে ছাত্র ঠিক করতাম।

এত সাবধানতার পরেও যে সর্বদা ভালো ঘরে টিউশনি করতে পারতাম তা কিন্তু নয়, অনেক অভিজ্ঞতা, অনেক প্রকারের মানুষ চালানোর অভিজ্ঞতা হয় এই টিউশনি থেকে। আসল কথা তে আসি, এক সরকারী কর্মকর্তার কন্যাকে পড়ানোর জন্য কল পেলাম, মেয়ে কে ৩ মাসে উচ্চ মাধ্যমিক রসয়ানের কোর্স শেষ করে দিতে হবে চুক্তি ভিত্তিক, ১৫ হাজার টাকা চুক্তি। মেয়ে পরীক্ষাতে পাশ করবে এইটা নিশ্চিত করতে হবে, এমন চুক্তিতে এটা নিয়ে পঞ্চমবার পড়াচ্ছি, সাক্সেস রেট ১০০% সুতরাং চিন্তা না করে বললাম যা পড়াব বা শিখাব তাঁর ৪০% ও যদি খাতাতে লিখতে পারে তাহলে 'এ' গ্রেড নিশ্চিত।

মনে মনে খুব উতফুল্ল ছিলাম, কারন তিন মাস পরেই ঈদ, ঈদের আগে এত গুলো টাকা মানে বাড়িতে গিয়ে মজা করে ঈদ উদযাপন! কোচিং এর কিছু ক্লাস বাদ দিয়ে হলেও মেয়েটার পড়ানোর দিন ঠিক রাখতাম। বেসিক খুবই দুর্বল ছাত্রীর, রাগ হল না কারন দোষ ওর না দোষ ওর শিক্ষকদের যারা রসায়নকে ওর কাছে দুর্বোধ্য করে তুলেছে সেই ক্লাস এইট থেকেই। বহু কষ্টে ওকে নাইন টেনের স্ট্যান্ডার্ড থেকে টেনে তুলে এইচ এস সি পর্যায়ে নিয়ে আসলাম। মডেল টেস্টে ভালো করতে শুরু করল। আর ৭ দিন পড়ানো বাকি, ওকে বললাম তোমার বাবাকে বলিও কিছু টাকা দিতে, বাকিটা পড়ানো শেষেই দিবে না হয়। পরের দিন উনি এসে বললেন বাবা এখন তোমাকে ৫০% টাকা দিব বাকিটা মেয়ে পাশ করলে। আমি প্রমোদ গুনলাম, সরকারী কর্মকর্তা নিশ্চিত হয়ে যে অন্তত শিক্ষকের সম্মানী দেয়া যায় না এটা বুঝার তৌফিক ওনার হয় নি। আমি বললাম ঠিক আছে অর্ধেকটাই দিবেন।

পরদিন ছাত্রি বলল বাবা শেষের দিনের আগে টাকা দিবেন না! আমি টাকা নিয়ে কথা বলতে লজ্জা পেতাম, তাই বললাম ঠিক আছে। আসলে, টাকাটা খুব দরকার ছিল। বোনের বই কিনতে হবে, যাওয়া আসার ভাড়া। এলাকাতে কিছুদিন থাকলে খরচ, নিজের পছন্দ মত ভোলার কোন খাবার খেতে হবে সেই লিস্ট অনুযায়ী বাজার আরও কত কি হিসাব করে রেখেছিলাম! এখন বোনের বই আর হাত খরচ হলেই হয়! বহু কিছু চিন্তা করে ঐ দিন তেমন ভালোভাবে পড়াতে পারলাম না। সেই দিন বুঝেছিলাম কেন একজন মানুষের থেকে ভালো কিছু পেতে হলে তাঁকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রথমে দিতে হয়।

এমন করতে করতে শেষের দিন এসে গেল, আমিও বহু আশা নিয়ে গেলাম পড়াতে। যেয়ে দেখি বাসা তালা দেয়া! আমি কল করছি ভদ্রলোক কল কেটে দিচ্ছেন! যা বুঝার বুঝে নিলাম। পাশের ফ্লাটের একজনকে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম ছাত্রীদের পরিবার সম্পর্কে কিছু জানে কিনা। উনি বললেন নতুন ফ্লাট ক্রয় করেছেন বসুন্ধরাতে ওখানে চলে গেছেন! খুব খারাপ লাগল, ৭৫০০ টাকা এত বেশি মনে হল একজন নতুন ফ্লাটের মালিকের কাছে? উনি কি আসলেই এই ৭৫০০ টাকা দিয়ে খুব বেশী কিছু আনন্দ ক্রয় করতে পারবেন? অথচ এই ৭৫০০ টাকা দিয়ে আমি কত আনন্দ ক্রয় করতে পারতাম!

মন খারাপ করে এক বন্ধুর মেসে গিয়ে উঠলাম। রাতে ওখানে থেকে হলে এসে এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ওনার ঈদের বাজেটের অতিরিক্ত ৩০০০ টাকা আর নিজের ইমারজেন্সি ফান্ডের ৪০০০ এর ২০০০ টাকা নিয়ে বোনের বই কিনে বাড়ি চলে গেলাম ঈদ করতে। লঞ্চে সারা রাত একটা কথাই চিন্তা করলাম একজন মানুষ কিভাবে পারে এমন করে অন্যকে বঞ্চিত করতে? বহু আনন্দের প্রত্যাশিত ঈদ অর্ধআনন্দে কাটিয়ে ঈদের পরদিনই লঞ্চে চরে বসলাম।

এর অনেক পরে একদিন একটা খুদে বার্তা পেলাম, "স্যার আপনি আমাকে অভিশাপ দেন নি এই জন্য অনেক ধন্যবাদ, আমি পাশ করেছি এবং রসায়নে এ+ পেয়েছি"! মুহূর্তে কষ্ট উড়ে গেল, টাকার কষ্ট অল্প কিছুদিনের, এরপরে তো কোন কষ্ট ছিল না। কিন্তু নিজের পরিশ্রমের এমন সার্থকতা জানতে পেরে ভালো লাগল। আমি উত্তর দিলাম, "আমার একজন শিক্ষা গুরু বলতেন, শিক্ষক দুই প্রকার আদর্শ এবং বাস্তব, আদর্শ শিক্ষক কোন অবস্থাতেই তাঁর সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের অভিশাপ দিতে পারে না। আমি আদর্শ শিক্ষক নই তবে হওয়ার চেষ্টা করছি। তুমি এ+ পেয়েছ জানতে পেরে, মনে তোমার বাবার প্রতি যে ক্ষোভটা ছিল তাও ঝেড়ে ফেলে দিলাম, Best of Luck!"

আল্লাহ্‌র কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম, তিনি অন্তত ঐ মাথামোটা সরকারী কর্মকর্তাকে বুঝার তৌফিক দিয়েছেন একজন শিক্ষক (যদি সে শিক্ষকতা পেশাকে ভালবেসে শিক্ষকতাতে আসে) কখনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয় না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:৪৪
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×