somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি রাজনৈতিক রচনা

১৯ শে নভেম্বর, ২০০৬ রাত ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অফিসে বসে কথা হচ্ছিলো গতকাল। 14 দলীয় জোট বড় হচ্ছে কি না, বড় হলে তা কতো বড় এসব নিয়ে আলোচনা। আমাদের কাজী শাহেদ এরকম আলোচনায় মাঝে মধ্যেই রায় ঘোষণার মতো ভঙ্গীতে চূড়ানত্দ মনত্দব্য করে বসেন। গতকালও তার স্বভাব প্রকাশ পেলো। শাহেদ আলোচনার ফাঁকে বেরসিকের মতো মাথা ঢুকিয়ে বলে বসলেন, 4 দল গত 5 বছরে যে লুটপাট চালিয়েছে, 14 দল বড় হয়ে যদি মতায় যায়, তাহলে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লুটপাট চলবে। এেেত্র শাহেদের যুক্তি হলো, 4 দলে তো কেবল দু'টি দল লুটপাট করেছে। কিন্তু 14 দলে লুটপাটের ভাগবাটোয়ারা করতে করতেই তো পরিমাণ বাড়বে। কথাটি নিতানত্দই হালকা ছলে বটে। তবে কী কারণে জানি আমার মাথায় তখন থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
শাহেদের সেই 14 দল আজ থেকে লাগাতার অবরোধ ডেকেছে। জনজীবনে আবার সেই দুর্ভোগ। জীবনযাত্রা স্থবির। খেটে খাওয়া মানুষের আধাপেটা-অনাহার। এই তো সাকুল্যে ফলাফল। জটিলতাটা কী নিয়ে? এক মহামহিম আজিজ সাহেব রয়েছেন, যিনি ইতিমধ্যেই নিজেকে জোকার প্রমাণ করেছেন, 14 দল তার অপসারণ চায়। 4 দল তা চায় না। মুখোমুখি অবস্থান। দুই পই দুই পরে মতো করে 'লড়াই-সংগ্রাম' চালাচ্ছে। মাঝখানে উজ্জলের ভাষায় 'মাইনক্যা চিপা'য় জনগণ। সেদিন রাজশাহীতে বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপের দশম পর্বে একজন ব্যাংকার ফজলে হোসেন বাদশাকে প্রশ্ন রেখেছিলেন, 14 দল যে বলছে, সিইসি হটানো জনগণের দাবি। তাহলে বিএনপি-জামাত জোট যে গত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলো, সেখানে কি জনগণ নেই? তাহলে 14 দলের দাবি জনগণের দাবি হয় কী করে? বাদশা ভোটের হিসাবেই বুঝিয়ে দিলেন যে এই দাবি এখন জনগণেরই দাবি। এর আগেই অবশ্য বিএনপির মান্নান ভূঁইয়া বলেছিলেন, জনগণ 4 দলের সঙ্গে আছে। সুতরাং 14 দলের দাবি জনদাবি নয়। অনেক প্রশ্নই এখানে আসতে পারে। তাহলে কোনটি জনদাবি? দু্থটোই? নাকি কোনোটাই নয়? যদি দু্থটোই হয় তাহলে তো জনতা-জনতাতেই সংঘর্ষ হবে। আর যদি কোনোটিই জনদাবি না হয়? তাহলে দেশের রাজনৈতিক নেতারা যে মিথ্যাবাদী তা তো আরেকবার প্রমাণিত হয়। জানি না, কোনটা ঠিক। তবে কয়েকটা বিষয় পরিস্কার। এক, বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাজনৈতিক নেতারা জনগণের সঙ্গে যেভাবে প্রহসনের রাজনীতি খেলেন সেই হিসেবে সিইসির পদটি একজন জোকারের অলংকৃত করাটাই যথার্থ। দুই, দেশপ্রধান, সরকারপ্রধান, বিরোধীপ্রধান মায় পুরো রাষ্ট্রই যখন গণমুখী চরিত্র হারিয়ে ফেলে তখন একজন সরকারি আমলার চরিত্র গণবিরোধী হওয়াই স্বাভাবিক এবং এটাই সরল সমীকরণের নিয়ম। দেখবেন, কিনটন যাবে বুশ আসবে, কিন্তু আগ্রাসী ভূমিকার কিন্তু কোনো কমতি হবে না। তিন, রাজনৈতিক নেতারা কি আদৌ জানেন, কোনটি জনদাবি, কোনটি নয়? তারা কি জানেন, জনদাবিকে কীভাবে সম্মান দিতে হয়? কানসাটের যে জনদাবি ছিলো, তার সবগুলো পূরণ করতে আমাদের রাজনীতিকরা কী উদ্যোগ নিয়েছিলেন? না, কিছুই না। উল্টো জনদাবি যেনো থলের মধ্যে পোড়া যায়, সেই পথ পরিস্কারের জন্য নেতা গোলাম রাব্বানী নিজেই তো মতার অংশীদারিত্বের রাজনীতিতে নেমেছেন। আফসোস হয়, রাজতন্ত্র উল্টে দিয়ে ধর্মতন্ত্রের কোমড় ভেঙে নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের আন্দোলনে আমাদের পাশের দেশ নেপালে 19 জন মানুষ মারা যায়। অথচ তার চেয়ে বেশি লোক মরেও আমাদের বিদু্যৎ সমস্যার সমাধান হয় না। আহা কী গণদাবি! কী গণমুখী রাষ্ট্র আমার!
আসল সমস্যাটা কিন্তু আমরা আবার সবাই বুঝি। কিন্তু মানতে চাই না। কারণ? নানারকম সুযোগ সুবিধায় আমরা যে তাদেরই বশীভূত। আসলে মতা-কর্তৃত্বের রাজনীতি যতোদিন চলবে, ততোদিন কি এই দ্বিজোটীয় পাল্টপাল্টি করে কোনো সুরাহা আনা সম্ভব? ফরাসী দার্শনিক ও ইতিহাসবীদ মিশেল ফুকোর একটি বই সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার। তিনি সেখানে জানিয়েছেন, ষোড়শ শতক থেকে এক নতুন ধরণের রাজনৈতিক মতা বিশ্বে বড় হচ্ছে। রাষ্ট্রব্যবস্থা নামের সেই রাজনৈতিক মতা এমনই যা ব্যক্তিগত বিষয়কে উপো করে বিশেষ কোনো শ্রেণী বা নাগরকিদের মধ্য থেকে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখে। আমাদের দেশে যেমন বিএনপি-জামাত তাদের এই মতাতন্ত্রের খেলায় নিজেদের নেতা-কর্মীদের সামগ্রিকতার লেবাশে স্বার্থ দেখেছে। একই কাজ করবে 14 দলও। কারণ? ফুকো বলেন, নতুন এই শক্তিশালী মতাতন্ত্র কোনো ছক নয়, মেনে চলে ডিসিপ্লিন টেকনোলজী। এখানে সমাজ হয়ে ওঠে রাজনৈতিক ল্যবস্তু। এতে সমাজের প্রতিটি সদস্যকে অধীনসত্দ, রূপানত্দর ও বিকশিত করা যায়। আমাদের দেশে সেই ষোড়শ শতকের রাজনৈতিক মতাতন্ত্র ব্যবহার করে এভাবেই নিজেদের গণমুখী দাবি করে সবগুলো রাজনৈতিক দল।
রাষ্ট্রের মতাতন্ত্র যখন সামগ্রিকের নামে বিশেষ কারো স্বার্থে কাজ করছে এবং ডিসিপ্লিন টেকনোলজীর মাধ্যমে মানুষকে দিব্যি নিজেদের পথে বিকশিত করে একটা ছকে আটকে ফেলছে, তখন কি সিপিডিওয়ালাদের মতো সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন কাজে আসে, না 4 দলের বদলে 14 দল মতায় এলেই দেশ তরতরিয়ে এগিয়ে যাবে? না কি তা কেবলই মধ্যবিত্তের মধ্যে সুরসুরি জাগানোর জন্য করা এবং বলা হয়ে থাকে? আর আমাদের দেশের বামওয়ালাদের কী খবর? তারা কি মন্দের ভালো তত্ত্বের লেজ ধরে আওয়ামী লীগের পকেটে মাথা ঢুকিয়ে ভাবছে, এভাবেই একদিন বিপ্লব আসবে? আসলে এর কোনোটিই সম্ভব নয়। উনিশ শতকের দার্শনিক মিখাইল বুকানন যেমন বলেছেন, আজকের নিরঙ্কুশ মতায় যদি প্রবল বিপ্লবী (সাধারণের বিচারবোধে বামপন্থী) কোনো নেতাকেও বসিয়ে দেয়া যায় তাহলে বছর না ঘুরতেই তিনি জারের চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে উঠবেন। তাই যদি হয়, তাহলে আমাদের দেশের এই টানাটানিতে জনগণ কি তার প্রকৃত স্বত্ত্বা নিয়ে আসলেই কোথাও প্রতিনিধিত্ব করতে হাজির হতে পারছেন কি না। আমরা তো দেখতে পাচ্ছি না। কিংবা এই ধারায় ভবিষ্যতেও তো কোনো সম্ভাবনা নেই। তাহলে আজকে আমাদের দেশে এই দুই জোটের ভালো-খারাপের তত্ত্ব খোঁজা কিংবা সেগুলোকে গণদাবি হিসেবে পরিণত করার আকুলি বিকুলি কেনো? চমস্কির একটা কথা দিয়ে শেষ করি। মার্কিন এই বুদ্ধিজীবীর মতে, কর্তৃত্ববাদী স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ডাণ্ডা যে ভূমিকায় থাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রোপাগাণ্ডার ভূমিকাও সেই একই। কাজেই আমরা 'প্রোপাগাণ্ডা তো ডাণ্ডার চেয়ে ভালো' ভেবে বসে থাকতে চাই আর ওদিকে আমাদের অধীনসত্দ, রূপানত্দর ও বিকশিত করে তোলে এই গণবিরোধী রাষ্ট্র। এই চলছে, চলবে। হয়তো দেশের সংকট কেটে যাবে। আবার নতুন দল মতায় আসবে। কিংবা পুরোনোরাই। কিন্তু যেই আসুক আমরা কি তাদের শাহেদের সেই লুটপাট থেকে ফেরাতে পারবো? সেই ব্যবস্থা কি আমরা তৈরি করতে পেরেছি?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×