somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়

০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা ভাইয়ের বাহিনী তাকে আধমরা করেছিলো পিটিয়েই। তখন ছিলো তাদের রামরাজত্ব। মিডিয়ার কর্মীরা মাঠে-ঘাটে ঘুরে প্রতিদিনের খবরের কাগজ আর টেলিভিশনের পর্দায় তুলে আনছেন গা শিউরানো সব নির্যাতনের বিবরণ। দেশের মানুষ গোগ্রাসে তা গিলছেন। সরকারের উজির নাজিররা তা গিলছেন বটে। তবে হজম হচ্ছে না। হজমে গণ্ডগোলের জন্য বাংলাভাই নামক চরিত্রটাই মিডিয়ার তৈরি বলে চালিয়ে দেয়ারও চেষ্টা অন্তহীন তাদের। আর যারা বাংলাভাই নামক রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট দানববাহিনীর নির্যাতনের শিকার, তারা? তারা তখন কেউ কেউ ভয়ে এলাকাছাড়া। দু'য়েকজন সৎসাহসের ওপর ভর করে থানায় বিহিতের জন্য গিয়ে উল্টো অহিত কপালে নিয়ে ফিরে আসছেন। তো, আমার লেখার শুরুতে হাজির করা সেই ব্যক্তিটি শেষোক্ত দলে গিয়ে যখন বিহিত না পেয়ে কপালে অহিত নিয়ে ফিরলেন, তখন থেকে তিনি এলাকাও ছাড়লেন। এই মানুষটি এক এগারোর পটপরিবর্তনের পর এলাকায় ফিরে এসে বিএনপির একজন বড় নেতার নাম শীর্ষে রেখে বাংলাভাই সংক্রান্ত ঘটনার বিষয়টিতে থানায় মামলা করে বসলেন। তার মামলাতেই ওই শীর্ষ নেতার সাজা হয়েছে। নেতা এখনো পলাতক।
এরপর আমি জানতাম, নির্যাতিত সেই ব্যক্তিটি ভালোই আছেন। কিন্তু আমার ভুল ভাঙালেন আমার একসময়ের এক সিনিয়র সহকর্মী। এখন তিনি কাজ করেন ঢাকায়। রোজার মধ্যে তিনি রাজশাহী এসেছিলেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, নির্যাতিত সেই ব্যক্তি পূর্ব সম্পর্কের কারণে এখনও তাকে ফোন করেন। আমার প্রাক্তন সহকর্মী জানালেন, ওই ব্যক্তি ভয়াবহ দুঃসময়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ওই ব্যক্তি আমার প্রাক্তন সহকর্মীকে জানিয়েছেন, এক এগারোর পটপরিবর্তনের পর একদিন তার থানার ওসি তাকে পুলিশ পাঠিয়ে থানায় নিয়ে যান। এরপর তার সামনে আগে থেকে লিখে রাখা একটি কাগজ রেখে বলেন সই করে দিতে। তিনি সই করার আগে জানতে চান কী এটা। ওসি তাকে বলেন, তুই নির্যাতনের বিচার চাইবি না? মামলা কর। এটা তার এজাহার। ওই ব্যক্তি শীর্ষ নামটি দেখে বলেন, এতোবড় মানুষের নামে মামলা করবো? ওসি তাকে অভয় দেন। এরপর আসামী তালিকা পড়ে শোনানোর সময় ওই ব্যক্তি দেখেন, এমন কিছু লোকের নাম লেখা, যারা ওই ঘটনার সঙ্গে আদৌ যুক্ত নন। এইবার ওই ব্যক্তি জানতে চাইলে ওসি বলেন, তোর কাজ সই করা, সই কর। এতো কিছু বুঝতে হবে না। তখন ওই ব্যক্তি ওসিকে বলেন, আমারও দু'য়েকজনের নাম ঢোকাতে হবে। ওসি মৃদু হেসে সায় দেন। নতুন করে এজাহার তৈরি হয়, ওই ব্যক্তি তাতে টিপসই দেন। এমন একটি এজাহারেই হয় আলোচিত একটি মামলা। তারপর সেই মামলায় সবার সাজা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে গত তিন মাস ধরে বিএনপির ওই শীর্ষ নেতার লোকজন হুমকি ধামকি দিচ্ছেন তাকে। পুলিশ কিছুতেই গা করছে না। অবশেষে আবারো সে এলাকা ছেড়েছে। সর্বশেষ সংবাদ হলো, পলাতক নেতা দেশে এসেছেন, দু'য়েকদিনের মধ্যেই আত্মসমর্পনও করবেন।
আমি জানি না, মামলার সেই বাদীর কী অবস্থা হবে। তবে নিশ্চিত জানি এই লেখাটা পড়ে অনেকে বলতে পারেন, আবার সেই পুরানো রাজনীতিতেই ফিরে যাচ্ছি। তার কুফল এসব। কিন্তু আমার মনে হয় না যে আমরা পুরানো রাজনীতিতে ফিরছি। আসলে আমার মনে হচ্ছে, আমরা পুরানো রাজনীতি থেকে কখনো বেরই হতে পারিনি। এই ব্লগেও অনেকে ওয়ান এলোভেনের চেতনার কথা বলেছেন। আমার মনে হয় না ওয়ান এলোভেনের কোনো চেতনা কোথাও কোনো সময় উপস্থিত ছিলো। যা আমরা পেয়েছি, তা হলো, নতুন ধরনে শোষণ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক চেহারার সঙ্গে পরিচিতি। আরোপিত কোনো রদবদল সাময়িক পরিস্থিতি বদলাতে পারে বটে। তবে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন কখনোই তা আনতে পারে না। চটকদারি রদবদলের আড়ালে তা বরং আমাদের দীর্ঘস্থায়ী ও ইতিবাচক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষাকে বিঘ্নিত করে। এই পরিবর্তন তো একটি সর্বব্যাপী প্রক্রিয়া হবার কথা। তা না হয়ে প্রতিনিধিত্বশীলতার নাম-গন্ধ যদি কোথাও খুঁজে পাওয়া না যায়, তাহলে কিছুদিন পরে রদবদলের কর্মে নিযুক্তদের জন্য এই কথাটাই বলা স্বাভাবিক যে, রাতারাতি সবকিছু বদলে ফেলা যায় না। এই পুরানো সত্য কথাটা অনেকটা পথ হেঁটে তখনই নতুন করে উপলব্ধির প্রয়োজন হয়, যখন পেছনে জনগণের কমন উইলিং না থাকে। সেই কমন উইলিং রাজনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যতোদিন আমরা গড়ে তুলতে না পারবো, ততোদিন আমরা এমন সব ঘটনা বলে যাবো আর অন্যরা বলবেন, থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়। আর যতোবার আমরা একথা বলবো, ততোবার আমাদের আলস্য পাবে, বৈরাগ্য আসবে, ঔদাসীন্য ভর করবে। আমরা পথ হারাতে হারাতে একদিন যে পথ ছিলো সে কথাই এভাবে ভুলে যাবো হয়তো।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×