somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সেতু ও একটি সড়কের গল্প

২৮ শে অক্টোবর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা যারা উত্তরাঞ্চলের মানুষ যমুনা সেতু হবার পর তারা আনন্দে গদ গদ হয়েছিলাম। উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ যে পূবশত তা নতুন করে বলে দেয়ার প্রয়োজন ছিলো না। আগে রাজধানী ঢাকা যেতে যেখানে আগের দিন সকালে বেরিয়ে পরের দিন রাতে মানুষের পৌঁছার রেকড আছে, সেখানে দিনে দিনে ঢাকা গিয়ে ফিরে আসা তো রীতিমতো হাতে চাঁদ পাবার মতো ব্যাপার। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী আর নাটোরের মানুষকে বগুড়া দিয়ে ঘুরে যেতে হতো। এছাড়া যমুনা সেতুর সুফল থেকে একই কারণে পাবনার মানুষও বঞ্চিত ছিলো। এই বঞ্চনার অবসান ঘটলো, যখন বনপাড়া-নলকা-হাটিকমরুল সড়ক নিমিত হলো। চলনবিলের ওপর নিমির্ত এই সড়ক কম করে হলেও এক ঘন্টা সময় বাঁচিয়ে দিলো আমাদের।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় তাই যমুনা সেতু আর বনপাড়া সড়কটি বেশি আলোচিত। দু'টিই এখন নিজের স্থায়ীত্ব খুঁইয়েছে। যমুনা সেতুর ফাটলের বিষয়টি আমরা সবাই জানি। কে দায়ী, কার দায় এসব নিয়ে হৈ চৈ হয়েছে ভালোই। কিন্তু কাজের কাজ নেই। সরকার দায়ীদের এখনো পযর্ন্ত চিহ্নিত করতে পারে নি। পেশাগত কারণে যমুনা সেতুর ফাটল নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি বিস্মিত হয়েছি। এই ফাটলের জন্য দায়ী কে, তা বের করতে সরকারের এতো সময় লাগছে। কিন্তু আমার মনে হয়, যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, কে দায়ী নয়, তাহলে বোধহয় বলা যাবে, এমন কেউই নেই। নিমার্ণকালীন ত্রুটি এবং নকশার ত্রুটি যে যমুনা সেতুর আজকের পরিণতির জন্য দায়ী, তা আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরা অনেক আগেই বলেছেন। এই সেতুটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান হুন্দাই নিমার্ণ করেছে। নকশা তৈরি করে নিয়েছে আরেক প্রতিষ্ঠান থেকে। বিশ্বজুড়ে হুন্দাই পরিচিত হলেও এই প্রতিষ্ঠানটির বড় বড় অনেক স্থাপনার স্থায়ীত্বও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। মালয়েশিয়ার পেনাং সেতু এগুলোর একটি। কিন্তু আমাদের দেশের সরকার এখনো পযর্ন্ত হুন্দাইকে কঠোর ভাষার একটা ধমক পযর্ন্ত দিতে পারেনি। আসলে মুজরা নৃত্য আমাদেরই মানায়! মাগার্নেট ওয়ান নামের রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি আর সেতু কতৃর্পক্ষের প্রকৌশলীদের নানা ধান্দাবাজির কাহিনী না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু এতোটুকু নিশ্চিত, যমুনা সেতু তার তিনভাগের একভাগ স্থায়ীত্ব হারিয়েছে।
আরো খারাপ পরিস্থিতি বনপাড়া-নলকা-হাটিকমরুল সড়কটির। বিশ্বব্যাংকের এই প্রকল্পটি এখন সংস্কার করে চালানো যাবে না। মাত্র ৫ বছরে এই অবস্থা! বিশ্বব্যাংকের কনসালট্যান্টরা যেখানে ছিলেন এই প্রকল্বপ পরিচালনার মূল্ ব্যক্তি, সেখানে সড়কটি কীভাবে নিমির্ত হয়েছিলো যে, ৫ বছর পর বিশ্বব্যাংক নিজেই বলছে, রাস্তাটি সংস্কার করে আর চালানো যাবে না? এই রাস্তা পুণঃনিমার্ণ করতে হবে, যাতে ব্যয় হবে প্রায় দু'শ কোটি টাকা। বুঝুন, তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে যে সড়ক নিমার্ণ করা হয়েছে, মাত্র ৫ বছরের মধ্যে আরো দু'শ কোটি টাকা খরচ করে সেই রাস্তাকে চলাচলযোগ্য করতে হবে। আন্তজর্াতিক নানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আমাদের সরকারের মাননীয় উপদেষ্টারা কিন্তু বিশ্বব্যাংকের জন্য এ পযর্ন্ত একটি কথাও খরচ করেননি। তারা প্রশ্ন তুলেননি, সব দুনীর্তি দূর করার ছবক দিয়ে বেড়ানো মানুষদের পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়া বিশ্বব্যাংকের কনসালট্যান্টদের দুনীর্তির কারণে যখন আমাদের মতো রাষ্ট্র লোকসান গোনে, তখন তার দায় কে নেবে? বিশ্ব উন্নয়নের ঠিকা নিয়ে রাষ্ট্রের পাছায় উন্নয়ন সূচকের সিলমোহর মারিয়ে বেড়ানো বিশ্বব্যাংকের মোড়লি যে শেষপযর্ন্ত আমাদের নিঃস্ব করে ছাড়ছে তার আরো একটি দৃষ্টান্ত কেবল এটি। আমাদের রাষ্ট্রের কণর্ধাররা কি এতোটাই বোকা যে তারা বুঝছেন না? তা তো হবার কথা নয়। ডক্টরেট ডিগ্রিধারীরা কি এতোটা অবুঝ? না অবুঝ তারা নন। কিন্তু তারা কিছু বলছেন না, কারণ যাহা বাহান্ন তাহাই তেপান্ন। কারণ জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা যায় না। প্রথম আলো-স্টার-আই-সিপিডিদের তৈরী সুশীল সমাজ এই সত্যটা বুঝতে পারছেন কি না কে জানে!

ব্যবহৃত ছবিটি আনোয়ার আলী হিমুর তোলা
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:২০
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×