টাকা চিবিয়ে খেয়েই তো বেঁচে থাকা যায়? যায় না? কখনো চেষ্টা করেছেন? সত্যি সত্যি কড়কড়ে বা নেতিয়ে পড়া, বুক টান করে ঝিলিক দেয়া বা হাঁসফাঁস করে দম আটকে মরার দশা হওয়া মিইয়ে থাকা টাকার নোট খেয়ে দেখেছেন? আমি ভাবছি, খাবো। কড়কড়ে হোক বা ন্যাতন্যাতে, নোট হাতে দুমড়ে মুচড়ে চালান করে দেবো পেটের মধ্যে। দেখবো, শালার টাকা খেয়ে বেঁচে থাকা যায় কি না।
আসলে কাগজের নোটগুলো না খেলেও আমরা তো টাকাই খেয়ে চলেছি। আমার বউয়ের জরায়ু বেচে, মায়ের মমতা বেচে, সন্তানের জীবন বেচে আমরা তো আর কিছু না, শুধু টাকা খাচ্ছি। কর্পোরেটদের টাকা বড় মহান। এর কাছে অন্য সব কিছু বড় তুচ্ছ।
গুঁড়ো দুধ নিয়ে গুঁতোগুঁতি, অতঃপর লাল ক্রস তো আমরা জানিই। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে বাঘাবাড়ির তরল দুধেও ভেজাল। ভেজাল ধরা পড়ার পর দেখা যাচ্ছে ওইখানে বেসরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানের দুধক্রয় কেন্দ্র রয়েছে, তারা এখন আর আগের মতো দুধ পাচ্ছে না। তারমানে আগে অর্ধেকের বেশি দুধ তারা কিনতো ভেজাল। সর্বনাশের কথা। অথচ এই সর্বনাশ আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বোঝে না। এরা টাকা বোঝে, কেবল টাকা। কারণ ইঁদুর দৌড়ে সামিল হতে গেলে মুখের সামনে যেমন টাকা থাকতে হয়, তেমন পেছনের অংশ দিয়েও টাকা বেরোতে হয়! সে কারণেই ল্যাকটোমিটার ছাড়া আর কিছু নেই পরীক্ষা করার। টেকনিশিয়ানদের ডিগ্রি নেই। দেদারসে ভেজাল দুধ তারা কিনেছেন আর আমাদের খাইয়েছেন। আর আমাদের 'বদলের কান্ডারি' সবগুলো মিডিয়ায় মোটা টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে, পাস্তরিত বিশুদ্ধ খাঁটি তরল দুধ বলে। আমরাও মহানন্দে বিজ্ঞাপনে আস্থা রেখে কিনেছি আর খেয়েছি। ভোরের ডাক বলে একটি অখ্যাত দৈনিককে এখানে ধন্যবাদ না দিলেই নয়। কারণ তারাই প্রথম এ অঞ্চলে ভেজাল দুধ তৈরি হচ্ছে বলে শীর্ষ সংবাদ করে। এরপর বাজার চলতি কাগজের মধ্যে প্রথম আলো বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলে হৈ চৈ শুরু হয়।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। এরপর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামে। তারা গত বৃহস্পতিবার ভেজাল দুধ ও তা তৈরির উপকরণসহ এবং দক্ষতা ও মাননিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে ১৫ জনেক আটক করে। এদের মধ্যে ব্র্যাক, কোয়ালিটি, প্রাণসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারাও ছিলেন। তাদের জরিমানা করা হয় সাড়ে ৫ লাখ টাকা। তাদের আটক করা হয়। রাতারাতি প্রতিষ্ঠানগুলোর উধর্্বতন কর্মকর্তারা সিরাজগঞ্জে গিয়ে লহমায় টাকা পরিশোধ করে তাদের ছাড়িয়ে নেন। উল্টো ভ্রাম্যমাণ আদালতে সংশ্লিষ্টদেরই নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। কে দেখবে এসব? আমাদের ক্ষমতাসীনরা তো এখন নির্বাচনের ডামাডোলে সব খুইয়েছেন। আমরাও কাপড় খুলে নাচছি। কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছি, জনগণের টাকা শুষে টাকার কুমীর হয়ে ওঠা একেকটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে আমাদের মৃত্যুর দিকে তিলে তিলে ঠেলছে? আমরা অসহায় হয়ে আছি।
তাই আমি ঠিক করেছি, আর কিছু খাবো না। শুধু টাকার নোট চিবিয়ে চিবিয়ে খাবো। আমার সন্তানকেও টাকাই খাওয়াবো। আপনাদেরও দাওয়াত দিলাম। আসেন টাকা খেয়ে বাঁচার প্রস্তুতি নিই।