somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছেলেটা আর মেয়েটা!

০১ লা মে, ২০১০ দুপুর ২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখন আবারো দেখা হল, চেনাটা খুব সহজ ছিলো না, আবার একেবারে ভুলে যাওয়ার মতোও না! শেষ দেখা হয়েছিলো নূহের নৌকায়, তারা বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসীদের দলে ছিলো কি না, সেই প্রশ্ন অমুলক। তারা ছিলো 'নমুনা!' প্রেমিক যুগল! জগৎ সংসার ঘেটে সংগ্রহে রাখার মতো এক প্রেমময় নমুনা! মেয়েটা ছিলো দূরন্ত, ছেলেটা ঘুমন্ত! তবুও তারা তারাই!

প্লাবনের পর যখন প্রথম কোন সমতলে পা রাখলো সবাই, নিজেদেরকে সামলাতে একটু সময় লেগেছিলো, সবাই আবেগতাড়িত ছিলো, সবচেয়ে বেশি লাফাচ্ছিলো মেয়েটা... ওর 'সী সিকনেস' আছে। চল্লিশদিন সমুদ্রে থাকার চেয়ে ও পানিতে ভেসে যেতে বেশি পছন্দ করতো, যদি না ছেলে টা, মাঝে মাঝে ওর দিয়ে তাকিয়ে হাসতো! ছেলেটার হাসি, বদ ছেলেটার হাসিই ওকে ভেসে যেতে দেয়নি... আর তাই-ই হাসিটা ওর মাথায় ছিলো!
সব কিছু ভুলে গেলেও, মেয়েটার স্মৃতিতে ছিলো একটা ছেলের হাসি। হাজার বছর পরেও তাই যখন দেখা হয়, আবারো মেয়েটা ঐ মুহূর্তে বুঝতে পারে, 'এই সে!'

ছেলেটার ভালো লাগতো মেয়েটার অসম্ভব রকমের সব বাঁদরামি! এমনকি নৌকায় থাকা অবস্থায়ও মেয়েটার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলো বাঁদরজোড়া! কিভাবে যে মেয়েটা পারে! আর মনে ছিলো মেয়েটার শরীরে একটা অন্যরকম ঘ্রাণ ছিলো! অবশ্য ছেলেটা তখনো অন্যকোন শরীরের ঘ্রাণ জানতো না। তবুও মেয়েটার খুব কাছাকাছি থাকলে সে অনুভব করতো, এই মেয়েটা একান্তই তার!

একারণেই মেয়েটা যত সহজে ছেলেটাকে চিনতে পেরেছে, ছেলেটা অতো সহজে চেনেনি! হাসি যতদূর থেকে দেখা যায়, শরীরের নিজস্ব ঘ্রাণ অতো সহজে নেয়া যায়না! যদিও একদিন তারা লিফটের ভীড়ে খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলো, ছেলেটা মেয়েটার শরীর থেকে আসা একটা মৃদু সুবাসও পাচ্ছিলো, তবুও সেটা তার চেতনায় জমে জমে বাড়তে থাকা প্রাচীন প্রেমিকাকে খুঁজে পাওয়ার অনুভুতি দেয়নি। মেয়েটা সেদিন পারফিউম
লাগিয়েছিলো!

ওরা একই অফিসে কাজ করে, প্রায় দেড় বছর ধরে আছে, পাশাপাশি, তবুও হাজার বছর আগের পূর্ব অথবা প্রেমিক জন্মের কথা তাদের একেবারেই মনে নেই! (শুধু মাঝে মাঝে তারা দুইজনই স্বপ্নে দেখে এক ভয়াবহ প্লাবণ, একটা বিশাল নৌকা, আলখাল্লা, দাড়ি, একটা মানুষ, অনেক গুলা মানুয, অনেক পশু পাখি.... কিছু গাছ, কোন মাছ নেই! কিন্তু ওরা দুইজনই জানে না, ওরা একই স্বপ্ন দেখে!) ছেলেটা দেখে ছুটির পর মেয়েটা অফিসের নিচে দাড়িয়ে থাকে, অপেক্ষা করে, তার প্রেমিকের জন্য! ছেলেটা কারো জন্য অপেক্ষা করে না, কেও ওর জন্যও করে না... ছেলেটা কখনোই হাসে না! মেয়েটা সারাক্ষণই হাসে, আর মেয়েটার অসম্ভব পারফিউম প্রীতি!

ছেলেটা কিছুদিন ধরেই লক্ষ্য করছে, মেয়েটা কোন কারণে সব সময়ই মন খারাপ করে রাখে, আগের মতো আর উচ্ছল নেই! আগে অফিসে এসেই ছেলেটার সাথে গল্প জুঁড়ে দিতো, এখন শুধু হাই-হ্যালো! একদিন মেয়েটাকে একা একা রিকশায় করে যেতেও দেখেছে। ওর প্রেমিকের হয়তো কোন অসুখ, তাই সে এখন আর নিতে আসতে পারে না। আর একারণেই হয়তো মেয়েটার মন খারাপ, ছেলেটা ভাবে!

কাজ শেষ করতে করতে ছেলেটার অনেক দেরী হয়ে যায়। যখন সব কাজ শেষ হয়, সে বুঝতে পারে সে ছাড়া অফিসে আর কেও নেই। অনেকক্ষণ ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে, তাই সবাই আগে আগে বাসায় চলে গেছে। ছেলেটা নিচে নেমে দেখে তুমুল বৃষ্টি! মেয়েটা একা দাঁড়িয়ে। ছেলেটার পায়ের আওয়াজে মেয়েটা পেছনে ফেরে....
: দেখসেন কি অবস্থা? আমি বুঝতেই পারি নাই এই রকম বৃষ্টি নামসে! আজকেই লেইট হয়ে গেলাম, আজকেই ছাতা আনি নাই!
:: আমার কাছে ছাতা আছে। আপনি নিয়ে যান।
ছেলেটা ছাতাটা মেয়েটার হাতে দেয়ার সময় খেয়াল করে, মেয়েটার চোখের নিচে কালি, চেহারা আগের চেয়ে অনেক মলিন, শাড়ীটাও আগের মতো পরিপাটি করে পড়া না...
: আসলে হইসে কি, আমার টনসিলের সমস্যা, তাই বৃষ্টিতে ভেজা নিষেধ! আমি একেবারেই বুঝতেসিলাম না কি করবো, আর এই রাস্তায় কোন রিকশাও তো দেখতেসি না! মেইনরোড পর্যন্ত যাওয়া লাগবে মনে হইতেসে!
:: হুমমম, আমারো তাই-ই মনে হয়।
: আপনি যাবেন কিভাবে? বৃষ্টিতে ভিজে?
:: না, কোন সমস্যা নাই, বৃষ্টিতে ভিজতে আমার ভালোই লাগে!
: আজব তো! ছাতার নিচে আসেন, আপনার যেই বিশালাকার ছাতা, আরো দুই তিনজন ইজিলি এর নিচে জায়গা পাবে!
:: না, না, অসুবিধা নাই!
: আরে! এই বয়সে এইসব প্রেযুডিস মানায়? আসেন তো!
ছেলেটা মেয়েটার ছাতার নিচে আসে। আশ পাশ থেকে বৃষ্টির ছাঁট আসে। মেয়েটা আগে থেকেই একটু বাঁচাল, সে তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে বকবক করতে থাকে। কথায় কথায় বলে, "আমার বয়ফ্রেন্ড শালা তো ভেগে গেসে!"
ছেলেটা একটু অবাক হয়। মেয়েটা আগেও ওর প্রেমিকের কথা বলেছে, কিন্তু এইভাবে? বোঝাই যাচ্ছে অনেক ক্ষেপে আছে! ছেলেটা বলে, "বুঝলাম না, কি হইসে?"
: আমার বয়ফ্রেন্ড, আরেক মেয়ের সাথে ভেগে গেসে, শুনসেন জীবনে এইসব কথা?
মেয়েটা এমনভাবে কথাটা বলে, ছেলেটার হাসি পেয়ে যায়, সে এতে আরো অবাক হয়, তার তো এত সহজে হাসি পায়না!
আর ঠিক তখনই, একটা গর্ত পাড় হতে গিয়ে ছেলেটা মেয়েটার খুব কাছে চলে আসে, আর তার নাকে যায় সেই ঘ্রাণ! মেয়েটার মন খারাপ ছিলো, তাই আজ তার সব কিছু এলোমেলো! সে পারফিউম লাগাতে ভুলে গিয়েছিলো!

ছেলেটার সব মনে পড়ে যায়! সব! তাদের পূর্বজন্ম, প্রেম, ইতিহাস! ছেলেটা অনেক জন্ম পর হেসে ওঠে! মেয়েটা সোডিয়ামের ভেজা আলোয় অবাক হয়ে দেখতে থাকে সেই হাসি! তারা পরস্পরকে চিনতে পারার উল্লাসে মাথার উপর থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় ছাতাটা! মেয়েটা ভুলে যায় তার টনসিলের কথা, ছেলেটাও তার সাইনাসের কথা! হাজার বছরের দীর্ঘ চুম্বন তাদের না বলা সব কথা বলে দেয়....!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১১ রাত ১১:২০
৩০টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ জার্সিতে নেমন্তন্ন খেতে গিয়ে পেয়ে গেলাম একজন পুরনো ব্লগারের বই

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৪ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



জাকিউল ইসলাম ফারূকী (Zakiul Faruque) ওরফে সাকী আমার দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু; ডাঃ আনিসুর রহমান, এনডক্রিনোলজিস্ট আর ডাঃ শরীফ হাসান, প্লাস্টিক সার্জন এর। ওরা তিনজনই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের একই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেনজীর তার মেয়েদের চোখে কীভাবে চোখ রাখে?

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ১৪ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৩:০৬


১. আমি সবসময় ভাবি দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর যারা মিডিয়ায় আসার আগ পর্যন্ত পরিবারের কাছে সৎ ব্যক্তি হিসেবে থাকে, কিন্তু যখন সবার কাছে জানাজানি হয়ে যায় তখন তারা কীভাবে তাদের স্ত্রী,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই বাড়িটি বয়ে বেড়াচ্ছে কিছু স্মৃতি।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৪ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:০৫



ছবিটি ফেসবুক থেকে সংগ্রীহিত।

মনে করুন, সময়টি ১৯৮০ সালের। গ্রামের এক সামর্থ্যবান ব্যক্তি এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সুখে-শান্তিতে দিন কাটাচ্ছিলেন। সময়ের সাথে সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগের সাতকাহন

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৪ ই জুন, ২০২৪ রাত ৮:০১

অনেকদিন হল জানা আপার খবর জানিনা, ব্লগে কোন আপডেটও নেই বা হয়তো চোখে পড়েনি। তাঁর স্বাস্খ্য নিয়ে ব্লগে নিয়মিত আপডেট থাকা উচিত ছিল। এ ব্লগের প্রায় সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (চতুর্থাংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৪ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:২৭


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (তৃতীয়াংশ)
আমার ছয় কাকার কোনো কাকা আমাদের কখনও একটা লজেন্স বা একটা বিস্কুট কিনে দিয়েছেন বলে মনে পড়ে না। আমাদের দুর্দিনে তারা কখনও এগিয়ে আসেননি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×