"Stay Hungry, Stay Foolish!
Stay Sexy, Stay Virgin!!! "
[শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চরম আনন্দ নিয়ে গল্পটি লিখেছি এবং দুই দিনেই গল্পটি শেষ করবার পর কেমন যেন ফুর্তি ফুর্তি অনুভূতি হচ্ছে! এ ফুর্তির অন্যতম কারণ হচ্ছে গল্পটি প্রিয় বন্ধু ও আমার লেখালেখির অন্যতম অনুপ্রেরণা রিদওয়ান আনামকে উৎসর্গ করা হলো! আমার বন্ধু ভাগ্য খুবই ভালো, কারণ এরকম একজনকে আমি সেই ক্লাস সিক্স থেকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছি!]
এক.
রাত আটটা পর্যন্ত ক্লাস নেবার পর তাওসীফের বিয়েতে ব্যাপক হৈ-হুল্লোড় করে রাত প্রায় সাড়ে বারোটায় বাসায় ফিরেই দেখি মা মুখ মলিন করে বসে আছে। ভাবলাম, নিত্যদিনের রুটিনের মতো বাবার সাথে হয়তোবা সামান্য কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি হয়েছে। তাই খুব একটা গুরুত্ব না দিয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিজের রুমে যখন প্রবেশ করতে যাব ঠিক তখনই মা জিজ্ঞেস করলেন, তাওসীফের বউ দেখতে কেমন? বললাম, ভালোই। মোটামুটি সুন্দরীই বলা যায়। সবচেয়ে বড় কথা তাদের দুজনকে বেশ সুন্দর .........।
কথা শেষ করবার আগেই মা হুট করে বলে বসলেন, তোর লজ্জা করে না?- আচমকা কোন রকম পূর্বাভাস ছাড়াই মা'র কাছ থেকে এরকম ধাক্কা খেয়ে রীতিমতো কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলাম! আমার বন্ধুপত্নি মোটামুটি সুন্দরী এবং তাদের দুজনকে বেশ সুন্দর মানিয়েছে- এতে আমার লজ্জা পাবার কি আছে ঠিক বুঝলাম না! যটতুকু মনে পড়ে আমার এইচএসসি'র রেজাল্ট শুনে তাওসীফের মা ওকে বলেছিল, তোর লজ্জা করে না? আমার রেজাল্টের তুলনায় তাওসীফের রেজাল্ট অনেক খারাপ হওয়ায় আন্টির এ ডায়লগ দেওয়ার নাহয় একটা যুক্তি ছিল কিন্তু বন্ধুর বিয়ে খেয়ে আসার পর মাঝরাতে আমাকে এ ডায়লগ দেবার কোন যুক্তিই আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না! অবশেষে মা ঝেড়ে কাশলেন, আমার সব মেয়ে বন্ধুদেরতো বেশ কয়েক বছর আগেই বিয়েশাদি করা শেষ, এখন ছেলে বন্ধুরাও নাকি সব একে একে বিয়ে করে ফেলছে! এখন আমি সারা জীবন আইবুড়ো হয়েই বসে থাকবো এ নিয়ে নাকি তার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। মায়ের এ কথায় মন খারাপ করে শাওয়ার জেল হাতে নিয়ে গোসল করতে ঢুকলাম এবং গোসল করার সময় যে জিনিসটি কখনোই করা হয়না তাই করলাম! এরপর মনে একটা প্রশান্তি নিয়ে রাতে ঘুমোতে গেলাম!
ঘুমের মধ্যেই রাতে স্বপ্ন দেখলাম, বড়লোকের একমাত্র স্বাস্থ্যবতী মেয়ের সাথে মহাধুমধাম করে আমার বিয়ে হচ্ছে! সেই ভয়ংকর স্বপ্ন দেখার সাত দিনের মাথায় আমার মায়ের মিশন 'খোঁজ-দ্য পাত্রী সার্চ' শুরু হয়।
দুই.
বসুন্ধরা সিটির ফুড কোর্টে বসে আছি আমি, মা, আমার মামা আর এক বন্ধু সাজ্জাদ যে কিনা অলরেডী দুই বাচ্চার গর্বিত বাবা। অবশেষে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৪৫ মিনিট পর পাত্রী তার বাবা ও এক চাচীকে নিয়ে এলো। সারাজীবনের পাঙ্কচুয়াল এই আমি এই সামান্য (!) লেট করে আসাতে তেমন কিছুই মনে করলাম না। প্রথম পাত্রী দেখতে আসা বলে কথা! আমি সরাসরি মেয়ের দিকে না তাকালেও খেতে খেতে আড়চোখে ঠিকই একটু পরপর পাত্রীর দিকে তাকাচ্ছিলাম। এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকাতে গিয়ে একবার ওনার সাথে সামান্য চোখাচোখিও হয়ে গিয়েছিল। মেয়েটির সাথে আদৌ আজকে কথা হবে কিনা তাই যখন ভাবছি তখনই মেয়েটির চাচী বললেন, যাও তোমরা দুজন একটু হেঁটে আস। উঠতে যাব ঠিক তখনই সাজ্জাদ কানে কানে বললো, দোস্ত যা ভাবীর ক্লিভেজ দেখে আয়! তোর আগেই আমি ভাবীর ক্লিভেজ দেখে ফেলসি! হিহিহি!
হারামজাদা বলে কি! সাজ্জাদের কথা শোনার সাথে সাথেই মনে মনে আমি খুব দ্রুত দুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। এক. ভবিষ্যতে আর কখনোই পাত্রী দেখার সময় সাজ্জাদকে সঙ্গে আনবোনা। দুই. সত্যি সত্যিই যদি আকলিমা নামের এই মেয়েটির ক্লিভেজ দেখা যায়, আমি একবারও সেদিকে তাকাবোনা! কিন্তু সেই সুন্দরীর মুখোমুখি বসবার পর আমি দুটো চরম সত্য আবিষ্কার করলাম। এক. সাজ্জাদের দাবী পুরোপুরি সত্য, দুই. হায়দার হোসেন অনেক গুণী একজন শিল্পী। ওনার 'চোখতো সেন্সর করা শেখায়নি' গানটি পুরোপুরি বাস্তবমুখী একটি গান। যাই হোক, সেই ক্লিভেজ দেখানো মেয়েটির সাথে আমার সেদিনই প্রথম ও শেষবারের মত দেখা হয়েছিল। কারণ বিয়ের পর বাবা-মা'র সাথে থাকবে এরকম কোন ছেলের ঘরণী নাকি তিনি হতে চান না।
তিন.
আমার দ্বিতীয় পাত্রী ছিল, আমার খালাতো ভাবীর দুরসম্পর্কের মামাতো বোন লামিয়া। মেয়ের নাকি গুনের কোন শেষ নেই, শুধু মেধার একটু ঘাটতি ছিল কারণ বিবিএ পাশ করেছে পুর্ব-দক্ষিণ নামক এক অখ্যাত প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে। তবে আমি নিজে উত্তর-দক্ষিণ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর হয়ে পুর্ব-দক্ষিণ ইউনিভার্সিটির ছাত্রীকে ইগনোর করি কিভাবে! তাই মা আর সেই ভাবীর চাপাচাপিতে বন্ধু শাফিনসহ সেই মেয়েকে দেখতে বুমারস্ ক্যাফে যাই। লামিয়াও এসেছিল তার বান্ধবী জিনিয়াসহ। বুমারস্ এর টু আইটেম খেতে খেতেই হঠাৎ লামিয়া বলে বসলো, আমার এক কাজিন আপনার ছাত্রী। সে বলেছে আপনি নাকি প্রায়ই ভুল ইংরেজীতে ক্লাস লেকচার দেন!
কি সর্বনাশ! মেয়ে দেখি ভালোই ফাজিল টাইপের! মাত্রই IELTS এ ৭.৫ নিজেকে যখন ইংলিশের মহাপন্ডিত ভাবতে শুরু করেছিলাম তখনই এরকম ফিডব্যাক পেয়ে পুরো ফাটা বেলুনের মতোই চুপসে গিয়েছিলাম! অবশ্য লামিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক না হবার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল লামিয়ার অস্বাভাবিক কম হাইট! কারণ আমি হিসেব করে দেখেছিলাম, বিয়ের পর ওর সাথে একটা রোমান্টিক হাগ দিতে গেলে হয় ওকে টুলের ওপর দাঁড়াতে হবে নাহয় আমাকে হাঁটু গেড়ে বসতে হবে! কি দরকার বেচারীকে শুধু শুধু এত কষ্ট দেবার। অবশ্য আমার সাথে দেখা হবার মাস কয়েক পরেই এক আমেরিকান প্রবাসী সুপাত্রের সাথে লামিয়ার বিয়ে হয়ে যায় এবং এরপর আমার সেই খালাতো ভাবী কোন পারিবিবারিক অনুস্ঠানে দেখা হলেই সবার সামনে খোঁচা দেবার সুযোগটি হাতছাড়া করতেন না, 'কি দেবরজী! লামিয়ারতো মহা ধুমধাম করে খুব ভালো বিয়ে হয়ে গেল, আপনার সুখবর কবে পাবো?'
আমিও তাই এরপর থেকে সেই খালাতো ভাবীর কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে থাকতাম।
অবশ্য বুমারস্ ক্যাফে আমার কোন গতি করতে না পারলেও বন্ধু শাফিনের ঠিকই একটা গতি করেছিল। কেননা শাফিন-জিনিয়া সেই প্রথম দেখাতেই এরপর খুব ভালো ফেসবুক ফ্রেন্ড হয়ে গিয়েছিল। শাফিন স্বীকার না করলেও আমি জানতাম, শাফিন অনেক রাত পর্যন্ত প্রতিদিন জিনিয়ার সাথে চ্যাট করতো আর পরদিন দেরী করে অফিসে যেত! সেদিনের পর থেকে শাফিনের যে কোন স্ট্যাটাসে প্রথম যে লাইকটি পড়তো তা ছিল জিনিয়ার!
চার.
মিশন 'খোঁজ-দ্য পাত্রী সার্চ' এর তৃতীয় পাত্রী ছিল, গ্রীন কার্ডধারী আমেরিকায় Born & Brought Up সিনথিয়া। মেয়েটার চেহারার মধ্যে একটা অন্যরকম আকষর্ণ ছিল। আমেরিকায় বড় হলেও বাংলাদেশের কালচার ও ইতিহাস নিয়ে তার ভালোই পড়াশোনা ছিল এক ঘন্টার আলাপেই বেশ বুঝতে পেরেছিলাম। বাসায় ফেরার পর আমেরিকান গ্রীন কার্ডধারীকে জীবনসঙ্গীনি করা উচিত হবে কিনা এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম। কিন্তু বেশীদিন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হলোনা কেননা পাত্রীপক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো, সিনথিয়া ম্যাডামের ছেলে পছন্দ হয়নি! হজম করতে খুব একটা কষ্ট হয়নি, কেননা আমেরিকান গ্রীন কার্ডধারী সুন্দরী ম্যাডামের আমাকে পছন্দ না হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক, পছন্দ হয়ে যাওয়াটাই বরং অস্বাভাবিক ছিল!
পাঁচ.
চতুর্থ পাত্রীর খোঁজ-দ্য সার্চ আসার পর মা-বাবাসহ আমার নানাবাড়ি-দাদাবাড়ি সবার মধ্যে প্রবল উত্তেজনা আর আনন্দ কাজ করা শুরু করলো। কেননা এবারের পাত্রী নিজেও পূর্ব-পশ্চিম প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির টীচার! আমি নিজেও তাই একবুক আশা নিয়ে সেই কাংক্ষিত দেখা হবার দিনটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। মেয়ে আমার সাথে একাই দেখা করতে আসলো, আমরা দেখা করলাম আমার প্রিয় মিউজিক ক্যাফে বেইলী রোডের ক্যাফে থারটি থ্রীতে। রোমান্টিক লাইভ মিউজিকের সাথে লাবণী নামের সেই লেকচারার ম্যাডামের সাথে বেশ ভালো কিছু সময় কাটালাম। আমরা দুজনই আমাদের শিক্ষকতা জীবনের বেশ মজার কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। এতকিছুর পরও বাসায় এসে মাকে না করে দিলাম কারণ ম্যাডাম এসেছিলেন স্লিভলেস জামা পরে ওড়না বুকে না দিয়ে গলায় দিয়ে এবং পুরুষদের সুন্নতের মতো গোড়ালীর অনেক উপরে টাইটস্ পরে! অতটা ধার্মিক না হলেও এবং প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ানোর সুবাদে এরকম মেয়েদের ব্যাপারে অভ্যস্ত হয়ে গেলেও নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে এরকম আধুনিক মেয়েকে গ্রহণ করবার মতো আধুনিক আমি কখনোই ছিলামনা।
ছয়.
লাবণীকে না বলবার পর মা রীতিমতো আমাকে আল্টিমেটাম দিয়ে দিলেন, তার হাতে তিন সুন্দরীর বায়োডাটা আছে, এর যে কোন একজনকে যদি আমার পছন্দ না হয় তাহলে মা এরপর আর মাত্র ছয়মাস অপেক্ষা করবে এরপর প্রয়োজনে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই আমার বিয়ের দিয়ে দিবেন ওনার পছন্দের মেয়ের সাথে! হায় আল্লাহ্, এও কি সম্ভব এই যুগে! ইচ্ছের বিরুদ্ধে একজন অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসরের বিয়ে দিয়ে দেওয়া! মা'য়ের কোন বিশ্বাস নেই, তাই মায়ের আল্টিমেটাম পেয়ে আমি হঠাৎ করেই জিম্যাট নিয়ে খুব সিরিয়াসলি পড়াশোনা শুরু করলাম। ভাবলাম স্কলারশীপ নিয়ে বাইরে PhD করতে চলে যাওয়াটাই হতে পারে এ মহাবিপদ থেকে উদ্ধার পাবার একমাত্র সমাধান! আমার মতলব বুঝতে পেরে মা এবার আমাকে রীতিমতো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করলো! এই তিন মেয়ের যেকোন একজনকে বিয়ে না করলে তার নাকি নাতিপুতি দেখে কবরে যাবার সৌভাগ্য আর হবেনা, তার সব বান্ধবীরা নাকি এখন নাতিনাতনী নিয়ে খেলে আর আমি একমাত্র সন্তান হয়ে তার দুঃখ কখনোই বুঝলামনা! অথচ অনার্স পাস করবার পরপরই আমার অনেক বন্ধুবান্ধব যখন একে একে নিজেদের পছন্দে বিয়ে করে ফেলছিল তখন এই মা'কেই বান্ধবীদের কাছে ফোনে গর্ব করতে শুনেছি, তার ছেলে টীচার হবার নেশায় ভার্সিটি লাইফে শুধু স্টাডিকেই ধ্যান হিসেবে নিয়েছিল, অন্য কোন দিকে মনোযোগ দেয়নি! আর ইদানীং আমাকে এমন কথাও শুনতে হয়, আমি কেন ভার্সিটিতে একটিও প্রেম করতে পারলাম না! মায়ের ইমোশনাল অত্যাচারে আমিও ইমোশনাল হয়ে নিয়মিত দোয়া ইউনুস পড়া শুরু করলাম।
সাত.
মায়ের তিন সুন্দরীর প্রথমজন ঈশিতা ছিল হিন্দি সিরিয়াল আর মুভির পোকা! আমাকে জিজ্ঞেস করে, কিউকি সাসভি কাভি বহুথি রেগুলার দেখি কিনা আর কাভি আলভিদা না কেহেনা মুভির এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ারের ব্যাপারে আমার মন্তব্য কি? মুভি কিংবা সিরিয়ালের কোনটাই আমি দেখিনাই এমনকি নামের অর্থও জানিনা বলবার পর খুব অদ্ভুতভাবে আমার দিকে তাকিয়েছিল। তার চোখের ভাষা স্পষ্ট পড়তে পারছিলাম, কিউকি সাসভি'র একটি পর্বও দেখে নাই এ ছেলে! এওকি সম্ভব!
দ্বিতীয়জন ফারিহা ছিল রীতিমতো ফেসবুক সেলিব্রিটি। ফেসবুকে তার ফ্রেন্ড সংখ্যা নাকি দুহাজারের বেশী আর ফলোয়ার প্রায় আঠারোশ! আমার মুখোমুখি বসেই সে তার স্মার্ট ফোনে সমানে ফেসবুকিং করছিল আর বিভিন্নজনের কমেন্ট পড়ে আমার সামনেই হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, মেয়েটার হাসির মধ্যে এক অদ্ভুত সারল্য আছে! কিন্তু প্রিয় পাঠক,ঈশিতা আর ফারিহা দেখতে যতই ভালো হোকনা কেন লাইফ পার্টনার হিসেবে দুজনের কেউই আমার জন্য কিংবা আমি তাদের জন্য পারফেক্ট না সেটা নিশ্চয় আপনারা এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন।
তো মায়ের দেওয়া তিনজন আল্টিমেটামের মধ্যে বাকি রইলো কেবল মৌরি। দূর থেকে মৌরির লম্বা ঘন কালো চুল দেখে প্রথম দেখাতেই বেশ কয়েকটি হার্টবিট মিস করেছিলাম। ওর সাথে কথা বলবার পর মুগ্ধতা আরো বেড়ে গেল। ছাত্রী হিসেবেও মৌরি বেশ ভালো ছিল, ঢাবি'র ইকোনোমিক্স থেকে অনার্স-মাস্টার্স করা। খুব বেশীক্ষণ একান্তে কথা বলবার সুযোগ পেলাম না। পরে কথা হবে বলে নিজের নম্বর দিয়ে আর ওর নম্বর নিয়ে সেদিনের মতো বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফেরার পরের দু'রাত ঠিকমতো ঘুম হলোনা, ১ম রাত মৌরির চিন্তায় আর ২য় রাত ওর ফোনের অপক্ষায়! লন্ডনপ্রবাসী বান্ধবী তানিয়াকে মৌরির কথা চ্যাটে বলায় ও রিপ্লাই দিল, আরে বুদ্ধু মেয়েরা কি এসব ক্ষেত্রে কখনো আগে ফোন দেয় নাকি? তুই নিজেই আজকে ফোন দিবি আর আমাকে আপডেট জানাবি। সেই রাতেই তানিয়ার পরামর্শমতো সাহস করে ফোন দিলাম মৌরিকে। কি মধুর কন্ঠস্বর, হ্যালো শোনার পর কয়েক সেকেন্ড কথাই বলতে পারিনি! প্রায় আধা ঘন্টা কথা হয় সেদিন ওর সাথে যার শেষ পনেরো মিনিট ছিল খুবই কষ্টকর আমার জন্য! কেননা সেই কথোপকথনের সারমর্ম ছিল, সিয়াম নামের এক ক্লাসেমেটের সাথে তার প্রায় সাত বছরের সম্পর্ক! ইবিএলে জব করা সিয়ামের এক মাস পর প্রমোশন হলেই মৌরির পরিবারে ফরমাল প্রপোসাল দেয়া হবে সিয়ামের পরিবার থেকে। এখন এর আগেই আমি যদি হ্যা বলে ফেলি তাহলে অতিরিক্ত রক্ষণশীল মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মৌরির পক্ষে সম্ভব হবেনা এ বিয়ে ঠেকানোর। কারণ আমার ব্যাপারে নাকি তার মা-বাবার বেশ ভালো রকমের আগ্রহ এবং আমার মতো সুপাত্রকে (!) তারা নাকি হাতছাড়া করতে চান না! এখন একমাত্র আমিই পারি মৌরিকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করতে! সেদিনের সেই ফোনালাপের পর একসাথে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটলো, এক. প্রথমবারের মত মেন্টাল সিকনেসের জন্য আমাকে সিক লিভ নিতে হলো।
দুই. তানিয়াকে আপডেট করার বদলে আমি আমার ফেসবুক প্রোফাইল অনির্দিস্টকালের জন্য ডিঅ্যাকটিভেটেড করে ফেললাম।
তিন. আমাদের তিনজনের ছোট্ট সংসারে দুইজনই বেশ অনেকদিন খুব মনমরা হয়ে থাকতাম-আমি আর আমার মা! বাবা অবশ্য যথারীতি তার বিজনেস নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। একমাত্র সন্তান আর স্ত্রী'র দিকে মনোযোগ দেবার মতো সময় কিংবা সুযোগ কোনটাই তার ছিল না!
আট.
মৌরির পর্ব শেষ হবার পর আরো মোট ছয়জন পাত্রী দেখা হয় আমার। কিন্তু এরপর আর কাউকেই খুব একটা ভালো লাগেনি। তাই অর্জন বলতে কেবল বেশ কিছু মজার অভিজ্ঞতা। এক পাত্রীর মামা পিজা হাটে সবার সামনেই আমার বেতন কত জিজ্ঞেস করে বসেন। আরেকজনের ডক্টরেট চাচা আবার পরামর্শ দিলেন তার মতো নামের পাশে ডক্টরেট বসিয়ে তারপর তার ডাক্তার ভাতিজিকে আবার প্রস্তাব দেবার! উম্মে তোহফা নামের এক অতিরিক্ত পর্দানশীল মেয়ের শুধুমাত্র চোখ দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম মেয়ে ভয়ংকর সুন্দরী হবে। সেই মেয়ে সরাসরিই আমাকে জিজ্ঞেস করলো, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি কিনা। না বলার পর তখনই বুঝে গিয়েছিলাম, এ মেয়ে আর যাই হোক আমার মতো অনিয়মিত নামাজীর ঘর করবেনা! একজনকে আবার একধিকবার আমার ছাত্র পিয়াসের সাথে ঢাকার বিভিন্ন শপিং মল আর ফাস্টফুডে ঘুরতে দেখেছি। আরেকবার বড় বোন শান্তার চেয়ে ছোট বোন কান্তাকে বেশী পছন্দ হয়েছিল কিন্তু আমার এমনই কপাল কান্তা এসএসসি শেষ করে তখন সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে!
তাই বিয়েশাদি আমার কপালে নেই এ চরম সত্য আমি সহজভাবে মেনে নিলেও আমার মমতাময়ী মা কিছুতেই সেটা মেনে নিতে পারছিলনা! সব ছেড়েছুড়ে অনেকদিনের জন্য দূরে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল। ল অব অ্যাট্রাকশনের কারণেই হোক বা খোদার অশেষ কৃপার কারনেই একদিন জিমেইল খুলে দেখি চরম আকাঙ্খিত এক মেইল! নিউজার্সির রাটগারস্ ইউনিভার্সিটি আমার জিম্যাট ও টোফেল স্কোর দেখে টিচিং অ্যাসিস্টেন্টশীপসহ PhD অফার করেছে! মাকে মজা করে বললাম, তার পুত্রবধু হয়তোবা ভিনদেশে আমার জন্য অপেক্ষা করছে তাই মন খারাপ না করতে। কিন্তু তাতেও কাজ হলোনা! অবশেষে দেড় বছর পর দেড় মাসের ছুটিতে দেশে আসলে মা যাকে বলবে কোনরকম টু শব্দ না করে তার গলায় মালা পড়িয়ে দেব এই প্রমিস করে উড়াল দেবার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম! সুখবরটি সবার সাথে শেয়ার করবার জন্য প্রায় ছয়মাস পর ফেসবুক একটিভেট করলাম এবং জানতে পারলাম, এই ছয় মাসে আমার প্রায় ডজনখানেক বাল্যবন্ধু ব্যাচেলরের খাতা থেকে নাম কাটিয়ে নতুন জীবনে প্রবেশ করেছে। আমি প্রত্যেকের বিয়ের এ্যালবামেই লাইক দিলাম এবং সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করতে থাকলাম।
নয়
দেড় মাসের মধ্যে PhD করতে USA যাচ্ছি সে সুখবর জানিয়ে সুন্দর একটি স্ট্যাটাস টাইপ করা যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে ঠিক সে সময়েই মেসেজসহ একটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেলাম। অনলাইনে থাকা অবস্থায় ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেলে বেশ মজাই লাগে! মীরা নামের একজন রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল এই মেসেজটিসহ, "স্যার আসসালামু আলাইকুম। আমি জানি ফেসবুকে আপনি নিজেকে খুব আড়াল করে রাখতে পছন্দ করেন। আপনার ছাত্রছাত্রীরা তাই ফেসবুকে কখনই তাদের প্রিয় স্যারকে খুঁজে পায়না। স্যার আমার রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলে অনেক বেশী খুশী হব আর নাহয় অনেক বেশী কষ্ট পাব "
আমার অনেকগুলো খারাপ দিকের একটি হলো, আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের নাম কখনোই মনে রাখতে পারিনা! তাই শত শত ছাত্রীর মধ্যে মীরা কে আমি তখনো বুঝতে পারিনি। বুঝতে না পারার আরেকটি কারণ ছিল, মীরার প্রোফাইল পিকচার ছিল খুব সুন্দর একটি অ্যানিমেটেড মেয়ের ছবি।
এরকম একটি মেসেজের পর রিকোয়েস্ট একসেপ্ট না করে প্রিয় স্যার থেকে অপ্রিয় স্যারে পরিণত হবার কোন মানেই হয়না! তাছাড়া আমার কোন ছাত্রী এত সতর্কতার পরও ফেসবুকে আমাকে আবিষ্কার করে ফেললো তা নিয়ে আমার নিজেরও বেশ কৌতুহল ছিল। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করার সময় আমি কল্পনাও করিনি মীরা হলো ভার্সিটির হাতে গোনা তিন চারজন সুচিস্মিতার একজন যার হাসি নিয়ে আমিতো কোন ছাড় স্বয়ং রবিন্দ্রনাথ শত শত কবিতা লিখে ফেলতেন।
দশ
প্রায় ছয় মাস পরের ঘটনা। আমি আমার ল্যাপটপে নতুন করে স্টেটমেন্ট অফ পারপাস লিখে আমেরিকার বাঘা বাঘা প্রফেসরদের নিত্যনতুন কৌশলে পটানোর চেষ্টা করি প্রতিদিন! কেননা তার মাত্র কয়েক মাস আগেই জমানো টাকা দিয়ে নিউজার্সির প্লেনের টিকেট না কিনে আমি মীরার জন্য হীরার আংটি কিনে ফেলি। আমার মা'ও একমাত্র সন্তানের বিদেশ যাত্রায় বিলম্ব হওয়াতে যতটা না বেশী খুশী হয়েছিলেন তার চেয়েও অনেক বেশী খুশী হয়েছিলেন সবুরে মেওয়া থুক্কু মীরার মত একজনকে পেয়ে তার মিশন 'খোঁজ-দ্য পাত্রী সার্চে' সফল সমাপ্তি ঘোষণা করতে পেরে!
কিন্তু কি মুশকিল, Engagement শেষ হতে না হতেই মা তার পরবর্তী প্রজেক্টের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে দিলেন। এবারের প্রজেক্টের নাম মিশন 'খোঁজ- দ্য বেবি নেইম সার্চ'!!!!!!!!!!!!!!!!
- 0 –
অন্য গল্পগুলোর সাথে এই গল্পের একটা মজার পার্থক্য হলো, এই গল্পটার নামটা আগে মাথায় এসেছে, তারপর লেখা শুরু করেছি! আমার উপর আল্লাহ্র অশেষ রহমত আছে কারণ সত্যি সত্যই যদি আমাকে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ করতে হতো আর পাত্রী দেখার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হতো তাহলে হয়তোবা আজীবন ‘Stay Sexy, Stay Virgin!!!’ এর সাইনবোর্ড গলায় ঝুলিয়ে আমাকে চিরকুমার থাকতে হতো সবশেষে আমার ব্লগার বন্ধুদের জন্য একটি কুইজ, বলুনতো গল্পের নায়কের নাম কি????????
আমার প্রথম গল্প "সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ"
আমার দ্বিতীয় গল্প "ণ-ত্ব বিধান"
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫৬