somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

#গল্প - মানসিকতা

১৭ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ থেকে দুই দশক আগে আমাদের খুব নিকটাত্মীয়ের মহা ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছিল! সেই বিয়েতে মোট চারটি অনুষ্ঠান হয়েছিল, যে কোন কারণেই হোক আমার প্রচন্ডরকমের জেদী বাবা সেই চারটা অনুষ্ঠানের একটিতেও যায়নি! স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটা প্রোগ্রামেই আমার আব্বুর অনুপস্থিতি সবাই নোটিশ করেছিল কিন্তু তখন মাত্র পনের-ষোল বছর বয়সী আমাকে কেউ এইটা নিয়ে বারংবার অপ্রিয় প্রশ্ন করে বিব্রত করতে পারে সে ব্যাপারে আমার কোনরকমের মানসিক প্রস্তুতিই ছিল না!
আমাদের এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় ছিলেন যার ছেলের সাথে সমবয়সী হবার কারণে আমার খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক ছিল এবং আমাদের দুজনের মধ্যে কখনোই কোনরকম প্রতিযোগিতা কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা অথবা কোনরকমের ঈর্ষা কাজ করত না। কিন্তু ছেলেটির বাবা কেন যেন আমাকে পছন্দ করতেন না খুব একটা! ওনার সাথে আমার দেখা হত বেশ কয়েক মাস পর পর, বেশীরভাগই কোন না কোন বিয়ের প্রোগ্রামে, কখনো ওনার সাথে অপছন্দ করবার মত কিছু করেছি বা বলেছি মনে করতে না পেরে আমি অনেক ভেবেচিন্তে দুটো কারণ খুঁজে বের করেছিলাম আমাকে পছন্দ না করার! ওনার ছেলে আমার চেয়ে মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও আমার স্কুলে দুবার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে একবারও চান্স পায়নি আবার এক্সিডেন্টালি ক্লাস এইটের বৃত্তিও পায়নি! আমাদের সময় দেশব্যাপী ভয়ংকরী বন্যার কারণে আগের বছরের তুলনায় শহরাঞ্চলে বৃত্তির সংখ্যা অর্ধেক করে দিয়ে বন্যাক্রান্ত জায়গায় বৃত্তি বেশী দেওয়া হয়েছিল তাই শহরের অনেক মেধাবীই সেবার দুর্ভাগ্যজনকভাবে বৃত্তি পায়নি কিন্তু আমি ভাগ্যক্রমে শহরের সেরা স্কুল থেকে কিভাবে কিভাবে যেন বৃত্তি পেয়ে গিয়েছিলাম, আমার সেইসময় মনে হয়েছিল সেই ভদ্রলোক সম্ভবত কোনভাবেই সেটা মন থেকে মেনে নিতে পারছিলেন না! এছাড়া আর কোন কারণই আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমাকে অপছন্দ করবার মত! আমার ধারণা সত্য ছিল কিনা জানিনা তবে সেই আঙ্কেল মহোদয় সেই বিয়ের প্রোগ্রামেই আমাকে মানসিকভাবে কষ্ট দেবার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করলেন না!
কনের গায়ে হলুদের দিন দেখা হলে ওনাকে সালাম দিতেই বললেন, কি ব্যাপার নীলয় তোমার আব্বু আসে নাই?
- নাহ্ আঙ্কেল আব্বু একটু অসুস্থ তাই আসেনি....
এটুকু বলেই চলে গিয়েছিলাম। পরদিন বরের গায়ে হলুদে আবার দেখা হলেই, নীলয় তোমার আব্বু দেখি আজকেও আসল না!
- আঙ্কেল আব্বু একটু সিক, তাই বাসায় রেস্ট নিচ্ছে।
একবার ভেবেছিলাম বাসায় এসে আম্মুকে বলি ব্যাপারটা কিন্তু আম্মু শুনলে মন খারাপ করবে ভেবে আমি বরং বিয়ের প্রোগ্রামে ওনাকে এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিলাম।
কিন্তু একটা সময় উনি আমাকে বিয়ের দিনও ঠিকই পাকড়াও করলেন, নীলয় এদিকে আস...
কাছে যেতেই বললেন, তোমার আব্বু আজকেও আসল না, নিশ্চয়ই উনি রাগ করেছেন কোন কারণে।
একবার ইচ্ছে হল বলি, আপনি প্লিজ আমাদের বাসার টিএন্ডটিতে ফোন করে আব্বুকেই জিজ্ঞেস করেন কেন আসেনাই! কিন্তু মুখে বললাম, আঙ্কেল আমিতো এসব ব্যাপারে কিছুই জানিনা, আসসালামু আলাইকুম...
মনে মনে নিজেকে স্বান্তনা দিলাম যাক আর মাত্র একদিন আমাকে এই মেন্টাল টর্চার সহ্য করতে হবে...
বউভাতের দিন আর ওনার কাছ থেকে পালানোর চেস্টা করলাম না কারণ জানতাম চেস্টা করেও লাভ নেই। কিন্তু অপেক্ষায় ছিলাম সেই আঙ্কেল আব্বুর অনুপস্থিতি নিয়ে আজ কি বলেন, কিভাবে বলেন! আমাকে দেখামাত্রই একটু আলাদা করে বলেন, নীলয় তোমার আব্বু আজকেও আসলনা আমি নিশ্চিত, সিরিয়াস কিছু হয়েছে বলেই উনি একদিনও আসেনাই... এবার অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বলি, আঙ্কেল আমার সাথে আসলে আব্বুর এই ব্যাপারে কোন কথাই হয়নি....
সেই বিশ বছর আগের কথা, আজকে হুট করে আপনাদের এই প্রসঙ্গে বলবার বিশেষ কারণ আছে বৈকি, প্রায় বছর পাঁচেক দুরারোগ্য ব্যাধির সাথে লড়াই করে গতকাল তিনি মারা গিয়েছেন। আমাকে টিনএজ বয়সে মানসিক অত্যাচার করবার অপরাধে আমি অনেক আগেই ওনাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। ওনার অসুস্থতার কথা শুনেও প্রার্থনা করতাম, দ্রুত আরোগ্য লাভের... কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে ইহলোক ছেড়ে তিনি চলে যাবার পরও উনি ভালো মানুষ নন- সেই টিনএজ বয়স থেকে গত বিশ বছর ধরে যেই ধারণা আমি মনে মনে লালন করেছি, শত চেস্টাতেও এই পরিণত বয়সে এসেও সেই ধারণা দূর করতে পারছিনা, কোনদিন পারব বলেও মনে হচ্ছেনা যদিও তিনি আজ আমাদের ছেড়ে বহু দূরের কোন এক অজানা জগতের বাসিন্দা!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৫:৫৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×