somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

স্বপ্নবাজ সৌরভ
আমি 'স্মৃতিকাতরতা ' নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।

শুভ জন্মদিন অঞ্জন দত্ত!

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১.
দার্জিলিঙের রাস্তায় কখনো হাঁটা হয়নি । রডনস্ট্রিট , গোড়িয়াহাটার মোড়, বউ বাজার, ধর্মতলা কিংবা ছত্রিশ চৌরঙ্গী লেন। না কোন কিছুই দেখিনি , যাওয়া হয়নি। 'ছত্রিশ চৌরঙ্গী লেন' নামে একটা ক্যাফে দেয়ার ইচ্ছে ছিল ছোটবেলা থেকে। ইচ্ছাটা আদৌ মরেনি। ঐ জায়গাগুলো একবারেই অচেনা । ছোটবেলায় একবার কোলকাতা গিয়েছিলাম। পার্ক সার্কাস এর সৈয়দ শামসুল হুদা রোডে উঠেছিলাম। সৈয়দ শামসুল হুদা আমার বড় ফুফার নাম। ঐ রোডটা উনার নামে নামকরণ ।
কোলকাতা চেনার দৌড় আমার এই টুকুই। কিন্তু ঐ শহরের রাস্তাঘাট গুলো অনেক বেশি চেনা মনে হয়। ঐ শহরের কোন এক ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আলতাফ ফকিরের বাঁশি বাজায়। বুড়ো জেরেমির বেহালার সুর ভেসে আসে রডনস্ট্রিটের পোড়ো বাড়িটা থেকে। চৌধুরীদের একুশতলায় মদের আসর বসে।
দার্জিলিঙের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পৌঁছে যাওয়া যায় কাঞ্চনজঙ্ঘায়। ঐ শহরে হাঁটতে হাঁটতে বাদল সরকারের মিছিলে হারিয়ে যাওয়া, লুকিয়ে পড়া 'লাল বই' , নকশাল অন্দোলন কিংবা মৃনাল সেনের সিনেমা। বড় বেশি পরিচিত ।
এই হেঁটে চলা দেশের সীমানা ছাড়ায়। টেক্সাসে তোপসে মাছের ফ্রাই, ম্যানহাটনের কোন বারে বসে চিঠি লেখা যায় কিংবা ঐ বার্লিনের দেয়ালটা কেনই বা ভাঙা হলো। সবই কেমন পরিচিত । ভেসে উঠে আমার জানালায়। কৈশরে এই জানলাটা দিয়েছিল অঞ্জন দত্ত । অঞ্জন দত্ত ই আমার জানালা।

"মনের জানলা দিয়ে তুমি বেরিয়ে পড়তে পার
মেক্সিকোতে বসে বাজানো যায় গীটার
কোথায় তুমি টানবে বলো দেশের সীমারেখা
আমার জানলা দিয়ে গোটা পৃথিবী।"

আমার জানালায় দেখা সেই ছোটবেলার বেলা বোস , প্রথম ঠোটস্থ ফোন নম্বর । দাস কেবিনে বসে এককাপ চায়ে পৌনে তিন ঘন্টা কাটিয়ে দেয়ার ইচ্ছা । প্রবল প্রেমে পড়ার ইচ্ছা , বারান্দায় দাঁড়ানো রঞ্জনা, একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে দুজনার অভিমান আর বৃষ্টির ছাঁটে মিশে যাওয়া ঝম ঝম চোখের জল। ঝাপসা এই শহরে হঠাৎ খুঁজে পেতাম বাঁচার মানে আর শহরের অলি গলি পাকস্থলীর ভেতর গুমড়ে কেঁদে ওঠার শব্দ ঠিকই ভেসে আসতো।
একেকটা দিন চলে যাওয়া দীর্ঘশ্বাস, বয়স বেড়ে যাওয়ার দীর্ঘশ্বাস আর প্রচন্ড মধ্যবিত্ত সেন্টিমেন্টাল নিয়ে বেঁচে আছি আজো ।

আজ অঞ্জন দত্তের জন্মদিন । ইচ্ছে হয় কবীর সুমনের মত বলি--
"চলো অঞ্জন ছুটিতে দার্জিলিং এ
টেলেগ্রাফ এর তারেই নাচুক ফিঙে
ছেলেবেলা তার ছন্দেই একাকার
চলো অঞ্জন গীটারটা দরকার।"

শুভ জন্মদিন ।


২.
অঞ্জন এই চিঠিটা লিখছি তোমায়,
একটা লোকাল বাসের ভীড়ে বসে সকাল নটায়
সামনে দুটো সিগন্যাল , আবার ভীষণ জ্যাম
আবার সেই একঘেয়ে অফিস

আজ অনেক কিছুই বলতে চাইছি তোমায়,
বসে এই সুদূর ঢাকায়,
রোজকার সেই একঘেয়ে মিথ্যে কথা নয়,
ঠিক মনের ভেতর থেকে

ইচ্ছে করছে বলতে , কেন কাঁদছে আমার মন?
কি করছে তোমার কলকাতা এখন
কিন্তু বাসটাও বড়ই ছোট ভেতরে অনেক ভীড়,
আর মোবাইলটাও কাঁপছে ভীষণ.....

আমি জানি তুমি লোকটা সুবিধের নও,
সব ছেড়েছুড়ে বেড়াও ঘুরে বিদেশ-বিভূঁই..
তবু লেখাটা আজ আমি পোস্ট করবই
বাস থেকে নামার আগে.....

ইচ্ছে ছিল লেখার তোমায় অনেক কথা
বড়সড় মানেওয়ালা কবিতা..
কিন্তু ঘন্টাখানেক ধরে শুধু একটাই কথা লিখেছি -
Happy Birthday to you........

---------‐----------------

স্ত্রী ছন্দার সাথে অঞ্জন দত্ত।

আজ প্রিয় অঞ্জন দত্তের জন্মদিন। গান শোনার শুরু এখান থেকেই। ওপরের লেখাটা অঞ্জন দত্ত 'happy birthday' গানের অনুকরণে লেখা। অঞ্জন দত্ত লিখেছিলো ম্যানহাটন বারে বসে 'ছন্দা' কে।

৩.
অঞ্জন দত্তের জন্ম হয় ১৯৫৩ সালের ১৯ জানুয়ারি। ‘দার্জিলিংয়ের রাস্তা’ গান গাওয়া মানুষ টি বেড়ে উঠেছিলেন দার্জিলিংয়েরই রাস্তায়। সেখানকার পাহাড়ের ধারে তাঁর স্কুল সেইন্ট পল। ২০১৩ সালে শৈশবস্মৃতির নিয়ে তিনি ‘দার্জিলিংয়ের রাস্তা’ সিনেমাটি নির্মাণ করেন । তিনি নিজেই বলেন, সিনেমাটি তার গল্পই বলে ।

অঞ্জন দত্ত একাধারে চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার, গায়ক, অভিনেতা, সাংবাদিক। তিনি নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন আর্ট ফিল্মের ধারাতেই, তাই একসময় কাজের অভাবের কারণে তাকে কলকাতাভিত্তিক দৈনিক ‘দ্য স্টেটসম্যান’ এ সাংবাদিকের কাজ নিতে হয়।


‘অন্তরীন’ সিনেমায় অঞ্জন দত্ত।

দিনশেষে অঞ্জন দত্ত বলেন ,
‘গান গেয়ে আমার নামডাক হয়েছে। গান গেয়ে মানুষের সবচেয়ে বেশি কাছে এসেছি, ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু সত্যি কথা হলো, জীবনে যা হতে চেয়েছি, তা হতে পারিনি। সত্যি এ জীবনে আমি ভালো অভিনেতা হতে চেয়েছি। কিন্তু তা হতে পারিনি।’
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৩৭
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খালেদা জিয়ার মৃত্যু রাজনীতির মাঠে বিরাট শূন্যতা

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৯

 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির টালমাটাল পরিস্থিতিতে তিনি দলটির হাল ধরেন। সেনানিবাসে গড়ে উঠা দলটাকে রাজপথে বেড়ে উঠতে গৃহবধূ থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

"তোমরা জানাযা করে দ্রুত লাশ দাফন কর।"

লিখেছেন এমএলজি, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:৩০

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "তোমরা জানাযা করে দ্রুত লাশ দাফন কর।" বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় এ কাজটি করা হয়নি বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যাচ্ছে।

বিষয়টি সত্য কিনা তা তদন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যক্তি বেগম খালেদা জিয়া কেমন ছিলেন?

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪

ব্যক্তি বেগম খালেদা জিয়া কেমন ছিলেন?

ইয়াতিমদের সাথে ইফতার অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়া, ছবি https://www.risingbd.com/ থেকে সংগৃহিত।

তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রীও তিনি। তাকেই তার বৈধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বছরশেষের ভাবনা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৮


এসএসসি পাস করে তখন একাদশ শ্রেণিতে উঠেছি। সেই সময়ে, এখন গাজায় যেমন ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে, তখন বসনিয়া নামে ইউরোপের ছোট একটা দেশে এরকম এক গণহত্যা চলছিল। গাজার গণহত্যার সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

উৎসর্গ : জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP)

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৮



খিচুড়ি

হাঁস ছিল, সজারু, (ব্যাকরণ মানি না),
হয়ে গেল “হাঁসজারু” কেমনে তা জানি না।
বক কহে কচ্ছপে—“বাহবা কি ফুর্তি!
অতি খাসা আমাদের বকচ্ছপ মূর্তি।”
টিয়ামুখো গিরগিটি মনে ভারি শঙ্কা—
পোকা ছেড়ে শেষে কিগো খাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×