আমি প্রসূত হলাম চরম দুঃসময়ে
জড়াগ্রস্থ পৃথিবীর ক্রান্তিলগ্নে।
আমার বাবা বলতেন,
'তোর পৃথিবীতে আসা খুব জরুরী
এই ক্রান্তিলগ্নে তুই আলোর মেঘ নিয়ে হাজির হবি
সূর্যের আলোক রশ্মির মত আগুন জ্বালাবি
এই মুহুর্তে তোকে খুব প্রয়োজন রে! '
বাবার কথা গুলো কানে গিয়েছে শুধু
আমি তখন ভ্রুণ থেকে একটু বড় হচ্ছি
সেক্স অর্গান বিকশিত হচ্ছে তাড়াতাড়ি
আলট্রাসাউন্ড নির্ণয় করছে আমি নাকি বাবার মতই একজন!
বাবার অবশ্য এইসব নিয়ে মাথা ব্যথা নেই ।
আমার বাবা বলতেন,
' বুঝলিরে! এই পৃথিবীতে তোকে খুব প্রয়োজন।
তুই সময়মত আসলেই আমি খুশী।
ছেলে কি মেয়ে বড় ব্যাপার নয়
এই পৃথিবীতে তীব্র মাতমে বৃষ্টি নামাবি তুই! '
আমি তখন খুব ছোট তবে মায়ের পেটটা
বিশাল আকার ধারণ করেছে ততোদিনে।
বাবাও প্রতিনিয়ত উৎফুল্ল হন খুব।
অফিস থেকে দ্রুত বাড়ি ফেরেন।
মার পেটে হাত রাখেন।
আমার বাবা বলতেন,
'দ্যাখ! পেটের ভেতর যে আলোড়ন তুলিস সেটা
এই পৃথিবীর জন্য খুব প্রয়োজন এই মুহুর্তে ।
অনেকে তো নড়তেই জানে না।'
আমি বাবার কথা শুনি আর ধীরে ধীরে বড় হই।
বাবা দিন গোনে , মা অপেক্ষা করে।
অবশেষে আমি জন্ম নিলাম জড়াগ্রস্থ পৃথিবীর ক্রান্তিলগ্নে
বাবার কোলে উঠে চিৎকার দিলাম সশব্দে ফেটে পড়া চিলের চিৎকারের মত!
আমার বাবা বলতেন,
'চিৎকার দিবি! তীব্র চিৎকারে চিড় ধরাবি আকাশে ।
এখন তো কেউ টু শব্দ করতেও ভুলে গেছে।'
জড়ার তীব্রতা তীব্র থেকে তীব্রতর হলো।
ইদানীং বাবা তেমন কিছুই বলেন না
হিসাবরক্ষণ যন্ত্রে কিসের জানি হিসাব মেলান শুধু
বোতাম গুলো টিপতে থাকেন
যোগ ভাগ গুণ
কিন্তু কি যেন ঠিক মিলতে চায়না আর।
আমার বাবা বলতেন,
নাহ ! বাবা অনেক কিছুই বলতেন।
বাবা আর কিছুই বলেন না।
একদম চুপ হয়ে গেছেন।
একদম চুপ!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৫৪