somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগার সত্যপথিক শাইয়্যান এবং আমাদের হেরে যাওয়ার গল্প ...

০৯ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




হ্যাঁ গল্পটা হেরে যাওয়ার। অনেক বছর আগে ফেসবুকে খুব একটিভ ছিলাম। ফেসবুককে আমরা অন্যভাবে দেখতাম তখন। সেইসময় আমরা ভেড়ামারা পরিবার নাম একটা উপজেলা কমিউনিটি গ্রূপে যোগদানের প্রধান শর্ত ছিল সদস্য অবশ্যই ভেড়ামারার বাসিন্দা হতে হবে। পরে একটু শিথিল করা হয়।
পরবর্তীতে বিশেষ অনুরোধ আর আলোচনার পর ঠিক করা হয়েছিল ভেড়ামারার বাসিন্দা না হলেও বৌ ছেলেমেয়ে , স্বামী ছেলেমেয়ে এই গ্রূপের সদস্য হতে পারবে। এর বাইরে আমরা আর কোন সদস্য নিতাম না। তবে বিশেষ বিবেচনায় কিছু সদস্য নেয়া হয়েছে তাদের ভেড়ামারার সাথে সম্পৃক্ততা ছিল। একসময় দেখা গেলো 'ভেড়ামারা পরিবার' সবচেয়ে বড় উপজেলা ভিত্তিক গ্রূপ। সেই গ্রূপ থেকে বিভিন্ন রকম কার্যক্রম চালানো হতো।

সেই গ্রূপে সদস্যরা নিয়মিত পোস্ট দিতো। নিয়মিত ভেড়ামারা বিষয়ক পোস্ট আর ছবিতে সরগরম থাকতো আমাদের গ্রূপটা।
একদিন একটা ছবি পোস্ট করেছিলাম ব্রিজ থেকে তোলা স্টেশনের একাংশের ছবি। আমাদের একজন এডমিন রাকিব হাসান বলল ছবিটা রি এডিট করতে। কারণ রেললাইনে অনেক নোংরা দেখে যাচ্ছিলো। বাস্তবে প্রয়োজনে আমরা হাত লাগাবো।

আমি ছবিটা ফটো শপে পরিষ্কার করে দিলাম। এবং পোস্ট করে বললাম ,
পরিস্কার করে দিলাম!! খরচ কে দিবে?? :D এইবার ফটোশপ নয়, ঝাড়ু ধরার সময়!! কে কে আছেন??

সেই থেকেই শুরু। গ্রূপের সাধারণ আলোচনা চলতে চলতে একসময় খেয়াল করলাম আমার একটা উদ্যোগের সামনে দাঁড়িয়ে গেছি।

ঠিক করলাম , কিবোর্ড ছেড়ে ঝাটা ধরবো, মাউসের বদলে ময়লা ফেলার ঝুড়ি!! গ্রূপ থেকে একটা ইভেন্ট খোলা হলো - প্রানের শহরের পরিচ্ছন্নতা.....
নামটা আমারই দেয়া। এইসব নামটাম , স্মৃতিচারণ আর আবেগময় উদ্যমী লেখার জন্য আমাকে এডমিন বানানো হয়েছিল।

আসতে থাকে একের পর এক পোস্ট, অনেকেই ভাবলো এটা সামান্য ফেসবুকীয় আস্ফালন!! কিন্তু আমরা চাই এই সামান্য ফেসবুকীয় আস্ফালন টা বাস্তবে প্রতিফলিত হোক।

ইভেন্টের দিন ঠিক করা হলো ঈদুল আযাহা'র পরের দিন ,
২৮ই অক্টোবর ২০১২।


আমাদের মূল উদ্দেশ্য সমূহকে বুকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে গেলাম------
১. সবাইকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতন করা ।
২. সবাইকে অপরিচ্ছন্নতার ক্ষতিকর দিক গুলোর বিষয়ে অবগত করা ।
৩. সবার মধ্যে এমন ভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করা যেন সবাই নিজেকে অপরিস্কার করা থেকে বিরত রাখে।
৪. নিরধারিত স্থান গুলোতে ডাস্টবীন বসানোর ব্যবস্থা করা ।
৫. এই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান দীর্ঘ্ মেয়াদী করা, যাতে করে বিষয়টি সবার কাছে কিছু ছেলে- পেলের হঠাৎ খেয়ালে করা একটা বিষয় হয়ে না দাঁড়ায় ।
৬. কোরবানীর ঈদ-কে সামনে রেখে এই সময়ে কোরবানীর বর্জ্য তৈরী হয় তা নিয়ন্ত্রণের ব্যপারে গণ সচেতনতা বৃদ্ধি করা ।
৭. স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রীয় ভাবে জড়িত করা ।
৮. স্থানীয় স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের সক্রীয় ভাবে জড়িত করা ।
৯. বিভিন্ন মাধ্যমে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক প্রচারনা অব্যহত রাখা ।
১০. মূল কথাঃ সমগ্র ভেড়ামারায় পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক একটা অলোড়ন আমি আবার লিখছি একটা আলোড়ন সৃষ্টি করা ।


একটি ইভেন্টের জন্য চাই পর্যাপ্ত বাজেট, আমরা বিশ্বাস করি ভালো কাজে কোন বাঁধায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, আমাদের ১৫০০ সদস্যের পরিবার সকল প্রতিকুলতা পেরতে সক্ষম! নাহ যতটা সহজ ভেবেছিলাম, ততোটা নয়--- কেউ কেউ বিদ্রপের হাসি হাসল কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলো। সব কিছু ছাপিয়ে আমরা মুখ থুবড়ে পরলাম বিশাল বাজেটের কাছে !!

প্রবাসী কিছু সদস্য এগিয়ে এলো। শুরু হলো আমাদের ফান্ড কালেকশন। আমাদের পকেটের টাকা নিয়ে এগিয়ে এলাম।
লিফলেট ছাপানো হলো প্রচুর যার শেষের লাইনটা ছিল -
"দয়া করে এই লিফলেট টি যত্রত্ত্র ফেলে নোংরা করবেন না। একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। এখান থেকেই শুরু হোক আপনার পরিচ্ছন্নতা অভিযান"
ভেড়ামারা এবং এর আশেপাশের প্রতিটা ঈদগাহতে ইমাম সাহেব বয়ানে আমাদের উদ্যোগের কথা বললেন এবং সামিল হতে অনুরোধ করলেন।
প্রতিটি ঈদগাহতে নামাজ শেষে লিফলেট বিতরণ করা হলো।
হ্যাঁ অবাক হলেও সত্যি, ঈদগাহের মানুষ লিফলেট টা রাস্তা ফেলেনি ! নিয়ে গেছে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্য ! আমাদের পরবর্তী কর্ম প্রেরণা ওখান থেকেই ....


প্রানের শহরের পরিচ্ছন্নতা....
২৮ই অক্টোবর ২০১২, ঈদের পরের দিন।

চরম অপেক্ষা, উত্তেজনা আর উৎকণ্ঠার একটা দিন। আমাদের প্রধান ইভেন্ট। ঈদের পরের দিন , ভেবেছিলাম আশানুরুপ সদস্য পাবোনা। সবাই হয়তো সবাই ঘোরাঘুরিতে ব্যস্ত থাকবে। না, প্রাণের শহরের তাগিদে ঘুরাঘুরি তুচ্ছ হলো আমরা করবো জয়ের মিছিলে, ৯০ জন সদস্য সকাল ৯টার মধ্যেই হাজির, ভেড়ামারা প্রেসক্লাবের সামনে! আমাদের ইভেন্ট শুরু সকাল ৯টা থেকেই...
সদস্য ছাড়িয়ে গেল ৪০০ এর উপরে আমাদের টিশার্ট ছিল২০০ টা। মানুষজন এভাবে অংশ নেবে ভাবি নি।


যে পিঠে স্কুল ব্যাগ ঝুলিয়ে হেটে গিয়েছি স্মৃতির শহরের পথ ধরে, আজ সে পিঠেই তুলে নিয়েছিলাম ময়লার ঝোলা...... প্রানের শহরের পরিচ্ছন্নতার মিছিলে। আমরা ছুটেছিলাম সেই স্বপ্নের খোঁজে, যা ভাবতে শেখাবে আমাদের শহর কে নিয়ে। আমাদের দ্বায়িত্ববোধ আর সচেতনতা পৌঁছে দেবে রুপকথার শহরের খুব কাছাকাছি, যেই শহরের নাম দিয়েছি আমরা 'স্বপ্নের ভেড়ামারা'।

গল্পটা তেমনি হবার কথা ছিল। দুটা ইভেন্ট করেছিলাম। এলাকার মানুষের সমর্থন পেয়েছিলাম।
দুটো সফল ইভেণ্ট করেছিলাম, প্রতিক্রিয়াশীল ইভেণ্ট। বাজারে দোকানদাররা নিজ উদ্যোগে তাদের আশে পাশের রাস্তা পরিস্কার রাখতে শুরু করেছিল । এখানে ওখানে ময়লা না ফেলতে সবাইকে অনুপ্রানিত করলো আমাদের সাথে।
এর পরেও আমাদের থেমে যেতে হলো। যাদের থাকার কথা তাদের পাশে না পেয়ে। স্থানীয় এডমিনেস্টেশন শেষ এগিয়ে আসেনি। সুবিধা পায়নি কোন। বাজেটের ঘাটতি ছিল। আমার ছিলাম বেকার। নিজ খরচে এতো কিছু সম্ভব হলোনা। প্রাণ আরএফএল ছোট ছোট অনেক গুলো ডাস্টবিন দিয়েছিলো। ঐগুলো আমরা প্রতিটি স্কুল মাদ্রাসায় বিতরণ করলাম। বিতরণ করলো তথ্য মন্ত্রী হাসনানুল হোক ইনু। মন্ত্রী ইনু সাহেব আমাদের একটা ইভেন্ট উদ্ভোধন করেছিলেন।

বাজারের মানুষের দাবি ছিল অনেক গুলো ডাস্টবিন স্থাপনের। আমরা প্ৰশাসনকে বলেছিলাম। আমার কোন সাহায্য পেলাম না। তারা চাইলেই একটা ব্যবস্থা করতে পারতেন। মানুষ সচেতন হয়েছিল কিন্তু শেষ মেশ কোন কিছুই হলোনা।

মূলত আমরা থেমে গিয়েছিলাম। থেমে গিয়েছিলাম বলেই হেরে গিয়েছি!




ব্লগার সত্যপথিক শাইয়্যান এবং আমাদের হেরে যাওয়ার গল্প। শিরোনাম ছিল এটাই। শাইয়্যান ভাই দারুন একটা উদ্যোগ নিয়েছেন। তার পোস্ট দেখে আমাদের ইভেন্ট আর উদ্যোগের কথা মনে হলো। একটা বুকে চাপা আক্ষেপের কথা মনে হলো। ব্লগে এবং পরিবচিতদের মধ্যে আমি স্বপ্নবাজ নাম পরিচিত। আজ একটা স্বপ্নভঙ্গের কথা বললাম। যেটা নিয়মিত পীড়া দেয়। স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট ভয়ঙ্কর কষ্ট।



গলি চেনাবে রাজপথ....
আমাদের ভেড়ামারা পরিবার : একটি স্বপ্ন পূরনের গল্প...
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৬
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×