
'আল্লাহ মেঘ দে পানি দে...
গাইতে গাইতে পানি মাঙ্গার দল আর আসেনা।
ছোটবেলায় আসতো। বাড়ি বাড়ি গিয়ে উঠোনে পানি ঢেলে, পানি কাদায় গড়াগড়ি খেয়ে আল্লাহর কাছে পানি চায়তো। বৃষ্টি চায়তো। যাওয়ার সময় চাল, ডাল, তেল, মশলা, টাকা নিয়ে যেতো খিচুড়ি রান্না করে সিন্নি বিতরণের জন্য। মাঠেই রান্না হতো। সেই খিচুড়ির সুবাস ছুটে যেতো বহুদূরে, বাতাসে বাতাসে।
বাদ আসর মিলাদ। আসর গুরুত্বপূর্ণ সময়। হুজুর সুরা আসরের তাৎপর্য বয়ান করতেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কথা বলতেন। আমাদের মন থাকতো আকাশে, মেঘের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি খুঁজতাম। হুজুর মোনাজাত ধরতে ধরতে আকাশে মেঘ। কালো কালো বৃষ্টির মেঘের ঘনঘটা। যেন এখনি ঝরে পড়বে। কেউ কেউ আবার বলতো, 'হুজুওওর.... তাড়াতাড়ি শেষ করেন। '
মাঝপথে গুরুম গুরুম বৃষ্টি। আমরা মোনাজাত ধরা অবস্থায় দিতাম দৌড়। কেউ কেউ ভিজতো। মাটিতে গড়াগড়ি খেত । দারুণ উন্মাদনা।এখনকার হুজুরেরা মিলাদ পড়ান না। মিলাদ পড়া বিদাআত। মোনাজাত ধরা বিদাআত। এতে আল্লাহ নারাজ হন। অন্তর্যামীর অন্তর পড়ে ফেলতে শিখেছে।
এখনকার ছেলেরা কি এইগুলা কল্পনা করতে পারবে? টিনের চালে বৃষ্টির ফোঁটা। খড়ের চাল চুঁইয়ে লাল পানি, রং চা। কবে বৃষ্টি হয় কবে হয়না সেই খোঁজ কি রাখা হয়? বৃষ্টির শব্দের চেয়ে ফ্রি ফায়ারের টুশ টাশ শব্দ নিশ্চয়ই অনেক উপভোগ্য। একটা সময় ছিল যখন বৃষ্টি হচ্ছে মানে বল নিয়ে এক দৌড়ে মাঠে। ইচ্ছাকৃত সড়াৎ কাদায় পা পিছলে যাওয়া। শেষ কবে হা করে বৃষ্টির পানি গিলেছি মনে নেই। পানিতে ডুব দিয়ে টাপুরটুপুর বৃষ্টির শব্দের অদ্ভুত অনুভূতি শরীর ছুঁয়ে যায়নি বহুকাল। বৃষ্টি মানে ব্যাঙের ডাক। কলকল স্রোতের বিপরীতে মাছদের চঞ্চলতা। মাছ ধরার ধুম। এইসব কি এখনকার ছেলেরা টের পায়?
প্রচন্ড রোদ। মাটি ফেটে চৌচির। একের পর গাছ কাটা হচ্ছে। কমতে থাকছে সবুজ। বৃষ্টির দেখা নেই। কারবালার কথা মনে হয় কি? ধুধূ প্রান্তে পানির জন্য হাহাকার। তৃষিত চাতকের মত একদিন আমাদের কে আকাশ পানে চেয়ে থাকতে হবে। এক ফোঁটা জল দাও। আমাকে শান্ত কর। কি নিদারুণ আকুতি। সৃষ্টিকর্তা কি তখন শুনবেন? কেন শুনবেন?
পুকুর ভরাট হচ্ছে। আগুন লাগছে এখানে ওখানে। আগুন নেভানোর পানি নেই। পানির স্তর নেমে যাচ্ছে গভীরে। কোন বোধ শক্তি কাজ করছে না কারো। তৈরি হচ্ছে সুউচ্চ রিয়েল এস্টেট বিল্ডিং গুলো। রিয়েল এস্টেট বিল্ডিংয়ে কংক্রিটের আবেগহীন দেয়াল বেয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে ঠিকই কিন্তু মাটির গন্ধ পাওয়া যায় না। আর রিয়েল এস্টেট তো কখনো মেঘমল্লার শোনে না।
তবে দালান কোঠার সুসজ্জিত বুক শেলফে 'গীতবিতান' শোভা পায়। সেই গীতবিতানে রবীন্দ্রনাথ একাই ভিজতে থাকেন। ভিজতেই থাকেন......
মেঘ রাজা গোমরাইয়া রইছে
মেঘ দিবো তোর কেডা
তাতে কি? কে এতো ভাবে?
----------------
ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






