অনাবিষ্কৃত আবেগের রঙে মনের আকাশটা বড্ড ফ্যাকাশে সেদিন। কি করবো অথবা কি করা উচিৎ বুঝতে না পেরে শেষে পুরনো ডায়েরির পাতায়-পাতায় সুখস্মৃতি খুঁজতে লাগলাম! কিন্তু সেখানেও গোলাপি রঙের সুখ, কমলা রঙ উচ্ছ্বাস আর সবুজ স্বপ্নের পাশাপাশি জমে আছে নীল রঙের বেদনা,মৃত্তিকা রঙ হতাশা এবং মৃত স্বপ্নের বিবর্ণ লিপিকা।
ডায়েরির পৃষ্ঠা বদল করতে করতেই চোখ আঁটকে গেল বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের একটা কথায়। তিনি বলেছেন; “মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই যদি মানুষের মন থেকে মুছে যেতে না চাও,তবে এমন কিছু লিখে যাও,যা বারবার পড়বার মতো এবং এমন কিছু করে যাও,যা লেখার মতো”
বিক্ষিপ্ত মনকে প্রশ্ন করলাম,জীবনে কি এমন করেছ তুমি যা সমাজ ও সভ্যতার জন্য লেখনীয় কিংবা লিখেছ এমন কি যা বারবার পঠনীয়? অপ্রস্তুত মন দিশেহারা হয়ে খাবি খেতে লাগলো, যাপিত জীবনের সাতরঙ খতিয়ানে।
পৃষ্ঠা উল্টিয়ে যাচ্ছিলাম,একটা পাতায় দুঃখের নানান প্রতিশব্দ লেখাঃ
1. Sorrow
2. Grief
3. Distress
4. Unhappiness
5. Misery
6. Woe
7. Tribulation
8. Pain
9. Inflammation
10. Pity
11. Remorse
12. Affliction
দুঃখ নয়,হাসি পেল এই ভেবে যে বার মাসের জন্য বার পদের দুঃখ লেখা রয়েছে আমার ডায়রিতে! হা হা হা...
রবীন্দ্রনাথকে পাওয়া গেল,তিনি বলে গেছেনঃ “পঁচিশ বৎসর পর্যন্ত কোনো লোককে জানা যায় না-তার যে কি হবে,কি হতে পারে কিছুই বলা যায় না; কিন্তু সাতাশ বৎসরে মানুষকে একরকম ঠাহর করা যায়-বোঝা যায় তার যা হবার তো একরকম হয়েছে,এখন থেকে প্রায় এইরকমই বরাবরই চলবে, এ লোকের জীবনে হঠাৎ আশ্চর্য হবার আর কোনো কারণ রইল না”
নিজের লেখা বিদগ্ধ কবিতার কিছু লাইনঃ
মৃত্যুকে আমার,
আকুল আরাধ্যকে
ললাটের উঠোন হতে
অদৃষ্টের অভিশাপ হতে
হাতের মুঠোয় নেবো!
এই যে আমোদ আর প্রমোদে
হফনারীয় জীবনের স্বাদে
ফুরোলো অক্সিজেন-সভ্যতার
শিকড়ে। আনাচারের কিউমুলেটিভ
কার্বনে ভারী আকাশ।
আর নয় ফুল-পাখি,কবিতা-গান,
রাষ্ট্রের সতীত্ব যখন ক্রন্দসী
সমাজের বিবেক যখন
অনুভূতিহীন ভগাঙ্কুর তখন
শ্বাপদের শ্বাস হবো।
ডায়েরিতে আছে দেশের প্রথম নারী প্রশিক্ষক বৈমানিক ফারিয়া লারার কথা। একরাশ গুমোট অভিমান নিয়ে অজানা আকাশে হারিয়ে গেছে যে, (১৬ই এপ্রিল ১৯৭০-২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ ইং) । অরুণ কুমারের এই কবিতাটি খুব প্রিয় ছিল তারঃ
‘যদি মরে যাই
ফুল হয়ে যেন ঝরে যাই
যে ফুলের নেই কোন ফল
যে ফুলের গন্ধই সম্বল
যে গন্ধের আয়ু একদিন
উতরোল রাত্রিতে বিলীন
যেই রাত্রি তোমারই দখলে
আমার সর্বস্ব নিয়ে জ্বলে
আমার সত্ত্বাকে করে ছাই
ফুল হয়ে যেন ঝরে যাই’
মনটা ভিজে জবজবে,লারার স্থানে নিজেকে ভাবতে ভাবতে আমিও পাখি হয়ে গেলাম। ডানার ভাঁজে, পালকে-পালকে জমা অভিমান নিয়ে আমিও একদিন হয়তো উড়ে যাবো আমার আরাধ্য আকাশে।
আর এগুতে পারলাম না। প্রিয় ডায়েরির পাতারা ভিজে যাচ্ছে। মনের আকাশে ভাসছে ফ্রাঙ্কলিন,রবীন্দ্রনাথ আর বৈমানিক লারার রেখে যাওয়া অভিমানী ফুলের সম্মোহন_সুবাস...!
১৩/০২/২০১৫ ইং (রাতঃ ১০.৩০)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:২০