somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘শাঁখের করাত'

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘শাঁখের করাত'ঃ

‘শাঁখের করাত’, যার দুই দিকেই ধার থাকে, অতএব যেদিকেই ঘুরানো হয় সেদিকেই সব কাটে। আমার মতো অনেকেই হয়তো শাঁখের করাত দেখেননি, তবে একটু লক্ষ করলেই মানুষ রূপী অসংখ্য শাঁখের করাত দেখতে পাবেন। এবার শাঁখের করাত জাতীয় কিছু গল্প বলি।

সাজ্জাদ সাহেব একদিন ইস্ত্রি ছাড়া, ময়লা কলারের একটা শার্ট পরে অফিসে আসলেন। পাশের কিউবিকল গুলোতে ফুসর ফিসির, ‘ ওয়াইফ মনে হয় একদম খেয়াল রাখে না, নাইলে আয়রন ছাড়া ময়লা শার্ট পরে কেউ অফিসে আসে?’
এই সাজ্জাদ সাহেবের বউই একদিন হন্তদন্ত করে, সাত সকালে, বাচ্চাদের টিফিন, সকালের নাস্তা, স্বামীর লাঞ্চ তৈরি করে, স্বামীকে প্রতিদিনের মতো ফিট বাবু বানিয়ে অফিসে পাঠিয়ে, নিজের কাপড়টাই আয়রন করার সময় পাননি। তাই বাইরে গিয়ে আড়াল থেকে শুনতে হলো, ‘একদম রুচিহীন মহিলা, নাইলে এই কুঁচকানো কাপড় পরে কেউ বাইরে আসে?’

এদিকে ঝুমুর পড়েছে এক বিড়ম্বনায়, গ্রামের বাড়ি থেকে শাশুড়ি মা বেড়াতে এসে বললেন, ‘কি বউ মা, আমার ছেলে তো শুকায় কাঠ। ইস, নখ গুলো কি বড় বড় হইসে, এগুলা কাইটা দিতে পারো না। আমার ছেলে তো এক গ্লাস পানি নিয়াও কখন খায় নাই। আহারে!!! বাবা তোর মনে হয় কোন যত্নই হয়না’।
খানিক ভুঁড়ি সমেত নাদুস নুদুস ছেলেটার দিকে আপাদমস্তক তাকিয়ে, ঝুমুর বুঝেই উঠতে পারে না, এই লোক কোন দিক দিয়ে শুঁকিয়েছে।
কয়েক মাস পর, ঝুমুরের স্বামী মাইল্ড হার্ট এ্যাটাক করলো। শাশুড়ি মা হম্বিতম্বি করে হাজির, ‘ইচ্ছা মতো খাওয়াইলেই হইলো, তেল কম দিয়া একটু বুইঝা শুইনা রানবা না। তোমার আর এতো সাবধানে রান্নার সময় কই, চাকরিজীবী বউ ঘরে আসলে জা হয় আর কি......’

এই গল্পটা একজনের কাছ থেকে শোনা, এক অবিবাহিত ভদ্রলোক অফিসে বসে আফসোস করছেন, ‘ বউ নাই, তাই প্রায় সকালেই নাস্তা না খেয়ে আসতে হয়’। পাস থেকে এক ভদ্রমহিলা বললেন, ‘ভাই, আমাদেরও ‘বউ’ নাই, কিন্তু আমরা নাস্তা খাইয়াও আসি খাওয়াইয়াও আসি!!!’

এবার গল্পের সারমর্ম বলি, যেই মায়েরা ছেলে সন্তানকে, ‘ছেলে না...’ বলে বলে বিকলাঙ্গ মানুষ হিসাবে এমন ভাবে গড়ে তুলেন, যে নিজের যত্নটাও নিজে নিতে শিখে না, এই আশায়, ‘একদিন তো বউ নামক শিক্ষিত বেবি সিটার নিয়ে আসব’, তাদের উদ্দেশ্যে বলি, সামাজিক নিয়মেই মেয়েরা সাধারণত, রান্না বাটি, হেঁশেল ঠেলার কাজটা করে থাকেন, এবং পুরুষরা সংসারের জন্য আয় করে নিয়ে আসেন, সেটা একটা সামগ্রিক কাজ, কারণ সংসারটা দুজনের। কিন্তু এটার অর্থ এটা নয় যে, নিজের ছেলের সেলফ কেয়ারটাও পরের মেয়ের ঘাড়ে চাপাবেন, কারণ আপনার ছেলে বিকলাঙ্গ বা ম্যান্টলি রিটার্ডেট নয়।
পরের মেয়ে অসুস্থ হলে, মীনার কার্টুনের ডায়লগের মতো, ‘কাজ করো, আরাম করো, পানি খাও, কাম করো, সব ঠিক’, বলার জন্য রেডি না থেকে, বরং নিজের পুত্র সন্তানটিকে রেডি করেন স্বাবলম্বী হতে। বউ কিছু না পারলে যেমন বলা হয়, ‘মা কিছু শিখায় নাই’। তেমনই, ছেলে যদি নিজের শার্ট আয়রন করতে না যানে, তাহলে তার ডবল শোনা উচিত, ‘বাপ-মা কিচ্ছু শিখায় নাই’। কারণ, তার বাবাকেও হয়তো সে কখনো আয়রন করতে দেখে নাই।

‘স্ত্রী স্বামীর সেবা করবে এটাই তো ভালোবাসা’, কথাটা ভুল, কারণ ভালোবাসা একতরফা হয় না, স্ত্রী যদি স্বামীর জুতা পালিশ করে দেন তবে স্বামীরও উচিত, ক্লান্ত স্ত্রী কে এক কাপ চা বানিয়ে খাওয়ানো। স্ত্রী যদি স্বামীর পা টিপে দেন, তবে স্বামীরও উচিত, স্ত্রীর পা টিপে দেওয়া। স্বামী যদি মাসের চারটা উইকেন্ডে, দশটা এগারোটা অব্দি ভোঁস ভোঁস করে ঘুমান, তবে অন্তত একটা উইকেন্ডে খুন্তি হাতে নিয়ে স্বামীর, স্ত্রী কে বলা উচিত ‘আজকের দিনটা তোমার’।

আর মেয়ে সন্তানের মায়েরা, যারা খুব হা হুতাশ করেন, ‘আমার মেয়েটা তো কোন কাজই পারে না, শ্বশুর বাড়ি যাইয়া যে কি করবে। ‘মেয়ে মানুষের’ কাজ না শিখলে হয়?’
কাজ শেখার ক্ষেত্রে ‘মেয়ে মানুষ’ নামক আলাদা প্রজাতি না বানিয়ে, বলতে শিখুন, ‘মানুষ (নারী এবং পুরুষ) কাজ না শিখলে কি হয়?’
আর হ্যাঁ, আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে কন্যা সন্তানকে আলাদা ভাবে একটা জিনিষ একটু বেশী শেখানো উচিত, আর তা হচ্ছে ‘আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা’।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:০৭




মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে…
১. প্রথমে বলেছেন মৃতদের পেটে কাটাছেড়ার ডাহা মিথ্যা। পরে স্বীকার করেছেন দাগ থাকে।
২. আশ্রমে বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া হয় না। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×