somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি কেমন আছো মাতৃভাষা?

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাষাটা শিখেছিলাম মায়ের কাছে। সেই সাথে মা শিখিয়েছিলেন, ‘বাংলা ভাষা তোমার মাতৃভাষা, তাই এই ভাষাই তোমার প্রধান ভাষা’। অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন বা খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করেন, ‘ইংলিশ মিডিয়ামে পরে এতো সুন্দর বাংলা কিভাবে লেখো?’ অথবা ‘এতো গুছিয়ে শুদ্ধ বাংলা কীভাবে বলো?’ আমার উত্তর একটাই, ‘মা শিখিয়েছেন’। শুধু ভাষা শেখানোই নয়, মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধটাও শিখিয়েছিলেন নিপুণ ভাবে।

ব্যাপারটা আসলে ব্যতিক্রম কিছু নয়, মায়ের ভাষাটা সকলে মায়ের কাছ থেকেই শিখেন, কেউ শিখেন বুঝে কেউ বা না বুঝে, তবে বেশীরভাগই শিখেন না বুঝে। অধিকতর অভিভাবকের ধারণাতেই নেই যে, মাতৃভাষাটা-কে সন্তানের কাছে পরিচয় করাতে হয় বিশেষ ভাবে। অভিভাবকরা ধরেই নেন, বাংলা ভাষা স্বয়ংক্রিয় ভাবে বাচ্চারা শিখেই নিবে। কিন্তু এটার ফলশ্রুতি কি জানেন? এটার ফলশ্রুতি হচ্ছে, মটু-পাতলু দেখে বড় হওয়া ছোট্ট আয়ান, তাই ঘুম থেকে ডাকলে, উত্তরে বলে, ‘ডিস্টার্ব মাত কারো’। আয়ানের অভিভাবক কিন্তু বেজায় খুশি, কারণ তারা ভাবছে, আমার বাচ্চা নতুন একটা ভাষা শিখছে, তাতে ক্ষতি কি? তাদের কিন্তু ব্যাপারটা মাথাতেই খেলছে না, তাদের সন্তান নতুন ভাষাটি শিখছে মাতৃভাষা হিসেবে, তাই উঠতে, বসতে, কোন কিছু চাইতে ব্যাবহার করছে এই ভিন ভাষা।

নাম করা একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে, কে জি-টু তে পড়া রুযাইনা, ঘরে-বাইরে অসম্ভব সুন্দর ইংলিশ বলে, বাংলাটা যেন ওর মুখেই আসে না!!! তাতে কি? রুযাইনার অভিভাবক কিন্তু খুবই গর্বিত, তাই বুক ফুলিয়ে বলেই বসলেন, ‘আমি তো বাচ্চার সাথে সবসময় ইংলিশে কথা বলি......’ নিষ্পাপ রুযাইনাদের দেখে আমার খুব মায়া হয়, যেই ভাষার এতো ইতিহাস, যেই ভাষা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলো, যেই ভাষাটা ওর শেকড়, সেই ভাষার মর্ম ওকে বুঝতেই দেওয়া হলো না।
আমার সন্তান ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে বিধায়, অনেকেই পরামর্শ দেন, ‘বাচ্চার সাথে ঘরেও সবসময় ইংলিশে কথা বলবেন’, একবার মৃদু হেসে উত্তর দিয়েছিলাম, ‘স্কুলেও ইংলিশ, ঘরেও ইংলিশ, তাহলে বাংলাটা শিখবে কীভাবে?’ পরামর্শদাতা রীতি মতো ফেলফেল করে তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে। ইংরেজি ভাষা একটি আন্তর্জাতিক ভাষা, যেই ভাষাটি জানা খুবই জরুরী। ইংরেজি মাধ্যমে সন্তানকে পড়ানর অর্থ কিন্তুই এই নয়, বাংলা ভুলে আমার সন্তান শুধুই ইংরেজি পড়বে, বলবে, লিখবে।

কোন এক উন্নত দেশে চলে যাওয়া এক কিশোর, হাতে লাল অথবা নীল পাসপোর্ট নিয়ে, দশ বছর পর সবুজ পাসপোর্ট-টা কে তুচ্ছজ্ঞান করে, ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বুঝিয়ে দেয়, এখন সে ব্রিটিশ অথবা অ্যামেরিকান নাগরিক। ওরা হয়তো কখনো আর শেকড়ের সন্ধানে ফিরবে না, ভাষার অভাবে বোবা কান্না কাঁদতে কাঁদতে শেকড়টা একদিন মরে যাবে।
কোন এক বাংলা না জানা ভিন দেশি মানুষ কে অকথ্য (গালি) ভাষার মাধ্যমে যখন বাংলাকে পরিচয় করানো হয়, আর অর্থ না বুঝে অবুঝ মানুষটিও বাংলা ভেবে যখন অকথ্য ভাষাটাকেই আওড়ায়!!! ঘেন্না হয়, আমরা কি এতই নিচ?

খুব করুণা হয়, যখন দেখি এই প্রজন্মের কিশোর কিশোরীরা J K Rowling অথবা Rick Riordan কে চিনে তাদের নিয়ে আলোচনা করে, কিন্তু শরৎচন্দ্র, আশাপূর্ণা দেবী, আল-মাহমুদ, জহির রায়হান অথবা সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ কে চিনে না, এবং বিকারহীন ভাবে মুখ বাকিয়ে বলে, ‘আমি বাংলা বই পড়ি না’ । ইংরেজিতে মাস্টার্স করা এক ব্যক্তি, আমর হাতে ‘সেই সময়’ বইটার মলাট উলটে বলেছিলেন, ‘ইয়াক, এগুলি বই দেখলে আমার বমি আসে’। শুনে কষ্ট পাইনি, করুণা বোধ হয়েছিলো, বিদেশী ভাষা শিখাটা কোন অপরাধ না, কিন্তু বিদেশী ভাষা শিখতে গিয়ে নিজের ভাষার লেখাকে যে সম্মান করতে যানে না, তাকে কোন পাল্লায় মাপা যায় আমার জানা নেই। জ্ঞানের কোন দেশ নেই, নেই কোন সীমানা। তাই জ্ঞানকে পাওয়া যায় অনেক ভাষায়। ভিন ভাষা শেখা বা ভিন ভাষার বই পড়া, দোষের কিছু নয়, কিন্তু ভিন ভাষার তোড়ে, নিজের ভাষার প্রতি অনীহা নিজের অস্তিত্বের প্রতি অনীহা স্বরূপ।

প্রতিটি জাতির মাতৃভাষা হোক অনেক আদরের, পরম স্নেহে লালনের, সম্মানের, যার বুকে মাথা গুঁজে হাসা যায়, কাঁদা যায়, অভিমান করা যায়, তীব্র কষ্ট অথবা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা যায়, ঠিক মায়ের মতো............ যাকে কলঙ্কিত করা যায় না, ভোলা যায় না, অকথ্য ভাষায় ক্ষতবিক্ষত করা যায় না.........
তাই আমার মুখের ভাষা, আমি আমার মা-কে উৎসর্গ করলাম.........
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৫১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×