আজ থেকে ১০ বছর আগে নাটক অথবা সিনেমায় বেড সিন গুলো কেমন ছিলো, যদি একটু চিন্তা করে দেখেন, বেশ বড় একটা তফাৎ খুঁজে পাবেন। এই ক্ষেত্রে অশ্লীলতা ছড়ানোর খুব জনপ্রিয় একটি মাধ্যম এখন ওয়েব সিরিজ। একটু বলে নেওয়া ভাল, এখানে আমি সব ওয়েব সিরিজ এর গুষ্টি উদ্ধার করতে আসিনি, ভাল কিছু ওয়েব সিরিজের পাশাপাশি, অশ্লীলতায় ভরপুর এমনও অসংখ্য ওয়েব সিরিজ এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। যে গুলোকে বলা যেতে পারে পর্ণ ভিডিও বা ত্রিপল এক্স মুভির ছোট ভাই!!! এই সমস্ত ওয়েব সিরিজ এর কনটেন্ট, স্টোরি লাইন, ডায়লগ, পোশাক এবং পোশাক খুলে ফেলার মতো সিন, কাওকে উত্তেজিত করার জন্য যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে।
বাস্তবতা হচ্ছে, যারা পর্ণ ভিডিও বা ত্রিপল এক্স মুভি দেখেন না, তাদেরকেউ টেনে নেওয়া হচ্ছে একটা অশ্লীল জগতে। এই সব সিরিয়ালের উল্লেখযোগ্য অংশ গুলো দেখতে আলাদা ভাবে সার্চ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না, ফেইসবুকের ভিডিও লিস্টে অটোমেটিক্যালি চলে আসে, যা এড়িয়ে যাওয়া কিছু ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পরে। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো চাওয়ার আগেই এই ভিডিও গুলো যখন আমাদের কিশোর অথবা সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়া সন্তানটির কাছে অবলীলায় চলে যাচ্ছে, তখন ভবিষ্যতে কোন মন মানসিকতা নিয়ে ওরা বড় হবে, সেটা বুঝতে আমাদের কারো অসুবিধা হওয়ার কথা না!!!!
আইটেম সং-এর প্রকোপ আগে তো ছিলোই, এখন বেড়েছে আরও কয়েক ডিগ্রী। খুব দুঃখজনক হলেও এটাও সত্যি, কিছু কিছু অভিভাবক তাদের শিশু সন্তানটিকে এই জাতিও গানের সাথে নাচিয়ে মজা পেতে দ্বিধা বোধ করেন না। বরং খুব গর্বিত হয়ে ‘দেখো আমার বাচ্চা কত সুন্দর নাচে’ ভেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে দেন। এই অলীক অহংকারের ফলশ্রুতি হচ্ছে, আপনার ছেলে সন্তানটির মাথায় আপনি গেঁথে দিচ্ছেন, মেয়েদের সাথে এমন আচরণ করতে হয়, আর কন্যা সন্তানটির মাথায় গেঁথে দিচ্ছেন এমন পোশাক এবং এমন অঙ্গভঙ্গিমা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। ৬-৭ বছরের শিশুটি যখন আঙ্গুল কামড় দিয়ে, বুকে হাত দিয়ে, দেহে ঢেউ খেলায়, তখন সত্যি মনে হয়, এই অভিভাবকরাই হবে ভবিষ্যৎ অবক্ষয়ের কারণ।
ভুঁড়ি ভুঁড়ি বি-গ্রেইডের যেই এডাল্ট শর্ট ভিডিও গুলো বের হচ্ছে, সেগুলো আরও অদ্ভুত। ভাবতেও ঘেন্না লাগে, দেবর-ভাবি, মা-ছেলের ফ্রেন্ড, ছাত্র/ছাত্রী-শিক্ষক, বউ-শশুর-এর মতো এমন পবিত্র সম্পর্ক গুলোর মাঝে যখন যৌনতা দেখান হয়, আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক গুলোর মাঝেও এমন কুরুচিপূর্ণ বিকৃতি আসা এখন মাত্র সময়ের ব্যাপার, মুখে হাত দিয়ে ফেল ফেল চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া হয়তো আমাদের আর কিছুই করার থাকবে না।
আনুমানিক ৯০% নেশাখোরদের সিগারেট যেমন হাতে খড়ি, তেমনি এই জাতিও সিরিয়াল, আইটেম সং এবং শর্ট ভিডিও, পর্ণ ভিডিওর হাতে খড়ি। কত শত জিনিষ নিয়ে আমরা আন্দোলন করি, আমরা শুধু ধর্ষণের বিচার চাই, কিন্তু গোঁড়ায় গিয়ে সমস্যার মূল কারণের কোন প্রতীকার চাই না। এতো শক্ত সাইবার আইন থাকতে, এখনও কেন বন্ধ হচ্ছে না অশ্লীল ভিজুয়াল কনটেন্ট? কুরুচিপূর্ণ অশ্লীল ব্যক্তিদের ভায়রাল করার ক্ষেত্রে আমাদেরই বা বোধোদয় হচ্ছে না কেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:৩৫