জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা বলতে ইচ্ছে হলো তাই কী-বোর্ড হাতে নিয়ে বসে গেলাম। স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছরের কাছাকাছি সময়ে এসেও আমরা স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ কী আদৌ খুঁজে পেয়েছি? আমাদের কি সভ্য হতে হাজার বছর সময় নিতে হবে? তবে কেন আমরা পারছিনা সভ্য হতে, অন্য মতকে সম্মান দিতে? নির্বাচন হওয়া দরকার উৎসবমুখর। কিন্তু নির্বাচনের আগে যদি কাউকে হয়রানির শিকার হতে হয় তবে অবশ্যই সেটা নিন্দনীয়। দেশ স্বাধীন হয়েছে সেই ১৯৭১ সালে। আমাদের সমসাময়িক সময়ে স্বাধীন হয়েও অনেক দেশ পৃথিবীর বুকে আজ সভ্য দেশ হিসেবে সুনাম অর্জন করে ফেলেছে। অথচ আজ ও আমাদের দেশে কাদা ছুড়াছুড়ির রাজনীতি! স্বাধীনতার চেতনা আর ধর্মীয় চেতনা কাজে লাগিয়ে আর কত হাজার বছর রাজনীতি চালিয়ে যেতে হবে? উন্নত বিশ্বে যেখানে একজন প্রার্থী অপর প্রার্থীর ব্যাপারে যথেষ্ট সম্মানবোধ রেখে সমালোচনা করেন, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে উদারতা দেখিয়ে বলেন যদিও আমার প্রতিদ্বন্ধী অনেক যোগ্য এবং নিষ্টাবান তারপরও আমি আশাবাদী, আমি জয়ী হলে উনার চেয়ে যোগ্যতা আর নিষ্টার সাথে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে স্বচেষ্ট থাকবো। আমাদের দেশে জানি এমনটা আশা করা যায়না যেখানে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা রাজনীতিবীদদের কথা অশ্রাব্য ও শ্রুতিকটু। এজন্য তৃণমূল পর্যায়ে দেশপ্রেমিক ও সংগ্রামী নেতার বদলে জন্ম নেয় চাটুকার শ্রেণির পাতিনেতা। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের উদাহরণ। আজ বিজেপির মত দল কট্টরপন্তী হয়েও জনপ্রিয়তা ধরে রেখে দেশ পরিচালনা করছে শুধুমাত্র তাদের রাজনৈতিক পারদর্শিতার জন্য। শত কোটির চেয়ে বেশি যে দেশের জনগণ সে দেশের নির্বাচনী পরিবেশ এত সুন্দর রাখতে পারলে আমরা কেন পারিনা? আমাদের দেশে আমরা নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে শুনতে অভ্যস্ত। এজন্য এখন আর আমরা এসব গায়ে মাখিনা। তাই তো প্রতিপক্ষকে আক্রমণাত্মক উক্তি করতে গিয়ে দেশের কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেন আমাদের দেশের অধিকাংশ রাজনীতিবীদ হয়তো সেটা অনুভবই করতে পারেননা। নির্বাচন কি এবং কেন? আমরা কি আদৌ জানি সেটি? যদি জানতাম তবে কি আমরা কেন্দ্র দখল করে পছন্দের প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করাকে নেক কাজ হিসেবে বিবেচনা করতাম? কিংবা কেন্দ্র দখল যাতে কেউ করতে না পারে তার ব্যবস্থা নিয়ে রাখতাম? বি,এন,পির মহাসচিব অত্যন্ত স্বজ্জন একজন ব্যক্তিত্ব। উনার কথা-বার্তা যথেষ্ট বিনয়ী। কিন্তু আজ যখন দেখলাম উনি উনার কর্মীদের বলছেন ভোট দিয়ে ভোট গণনা শেষে তারপর বাড়ি ফিরতে তখন নিজেকে পৃথিবীর নিকৃষ্ট একটা সমাজ ব্যবস্থার সাথে জড়িত মানুষ হিসেবে মনে হয়েছিল। যারা আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আদর্শিত আমাদের অবস্থান তো হওয়া উচিত ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমরা কি আসলেই সে অবস্থানে আছি? যদি থেকে থাকি তবে কেন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হিসেবে পরিচিত মানুষগুলো দল থেকে দূরে সরে যাচ্ছে? তারা সবাই কি সুযোগ সন্ধানী? আমাদের আরো অনেক ভাবতে হবে। '৭৫ এর মত আরেকবার দেশ হোক তা কখনো কাম্য নয়। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের এখনই সবচেয়ে সুন্দর সুযোগ এদেশকে সুস্থ-সুন্দর রাজনীতি উপহার দেবার। ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকি, মীর্জা ফখরুল ইসলাম, সুলতান মনসুর, ব্যারিষ্টার আন্দালিব রহমান পার্থসহ একঝাক প্রজ্ঞাবান, বিতার্তিক রাজনীতিবীদদের সাথেই প্রতিযোগিতা হওয়া উচিত উপমহাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধপূর্ণ ইতিহাস যে সংগঠনটির সেই সংগঠনের। অতীতে কখনো এত ভালো সুযোগ আসেনি এ রকম যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষদের সাথে প্রতিযোগিতা করার। হয়তো জনগণ দেখবে সংসদের সেই প্রতিযোগিতা আর ভাববে এমনটাই তো চেয়েছিলাম এতদিন। দেশ এগিয়ে যেতে হলে একটি সরকার যত বেশিদিন ক্ষমতায় থাকবে ততই ভালো। তবে স্বৈরাচারী মনোভাব যেন জন্ম না নেয় একটি কর্মীর মধ্যেও সেটা অবশ্যই লক্ষণীয়। কারণ দেশটা আমাদের সবার। আমরা সবাই দেশটাকে যার যার মত ভালোবাসবো আর নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে দেশের মঙ্গল চাইবো। তরুণ প্রজন্ম এখন আর রক্তপাত চায়না। আমরা চাই উন্নয়ন আর জনগণ চায় সুশাসন। আর এজন্য প্রাণের সংগঠনের কাছে একটাই দাবী, আরেকবার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব হাতে নিয়ে বিচার ব্যবস্থা, সংবাদ মাধ্যম আর নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে এবং শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন করে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে প্রমাণ করবো আমরা, বাংলাদেশ আমাদের প্রাণ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৬