বাঙ্গালী মূল্যবোধের ধারক হিসেবে পরিবার/সমাজ থেকে এখনও যে শিক্ষা পাই তাঁর মাঝে অন্যতম হল শিক্ষকদের সম্মান করা, তাঁদের পিতৃতুল্য বলে বিবেচনা করা, মোট কথা তাঁদেরকে অনেকটা সমালোচনার ঊর্ধ্বে বিবেচনা করা। তবে আমি সমালোচনার ঊর্ধ্বে বিবেচনা করার কোন যুক্তি দেখিনা।
বাস করি ২০১৩ সালে। শিক্ষক ছাত্রী কেলেঙ্কারিচুয়াস ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাকেট থেকে নেমে এসেছে স্কুল লেভেলেও। শ্রী পরিমলবাবুর স্মৃতি এখনও বেশ তরতাজা। ছাত্রীকে বিয়ে করা ডালভাত। এমনকি সুন্দরী ছাত্রীর সাথে ক্লাসমেটের সম্পর্ক জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও সমসাময়িক পরিস্থিতিতে যোজন যোজন এগিয়ে থাকার সুযোগে নিয়ে পারিবারিক ভাবে সেই পাত্রী অধিগ্রহণ করতেও দেখেছি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এইসব শিক্ষাগুরুকে।
একসময় বিদ্যার চর্চা ছিল গুরুমুখী। সার্টিফিকেটের বালাই ছিল না। গুরুরা যাচাই বাছাই করে শিষ্য নির্বাচন করত। বছরের পর বছর ধরে চলত বিদ্যা শিক্ষার ধারা যতদিন না গুরু বলতেন বৎস, তোমার শিক্ষা আজ পরিপূর্ণ। সেখান থেকে বিবর্তিত হয়ে চলে আসে পাঠশালা সংস্কৃতি যেখানে জীবিকা হিসাবে শিক্ষকতাকে একপ্রকারে মেনে নেওয়া হলেও আদর্শিক অবস্থানে পণ্ডিতেরা ছিলেন অটুট। শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিকিকরনের পরও অনেকদিন লক্ষণীয় ছিল শিক্ষকদের এই আদর্শিক অবস্থান। তবে বর্তমান নিয়ে কি বলব?
স্কুল কলেজ লেভেলে চলছে প্রাইভেট, কোচিং, টাকা দিয়ে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার নাম্বার। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে তাদের স্বৈরশাসন। প্রাইভেট ভার্সিটিতে মিউ মিউ করা স্যাররা পাবলিকে এসে বাঘ হয়ে যান। অস্ত্র হিসেবে অর্থ আসলেই বেশ শক্তিশালী। অনেক শিক্ষকের লেকচারের অধিকাংশ সময় জুড়ে থাকে স্তুতি। আত্নস্তুতি। এই করে তারা স্বমৈথুনের সুখ পান বলে আমার মনে হয়। তিনি চাইলে একজন ছাত্রের কি অবস্থা করতে পারেন তার রসালো বর্ণনা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক ছাত্র ফার্স্ট সেমিস্টারেই জানতে পারে। ৮ সেমিস্টারের প্রত্যেকটাতেই এমন একাধিক ভদ্রলোকের লেকচার শুনেছি যারা "ভিসি চাইলেও আমার চাকরি খেতে পারবে না" এই লাইনটা প্রত্যেক ক্লাসেই গানের রেকর্ডের মতই বলেছেন।
সম্পর্ক এখন এসে দাঁড়িয়েছে কনজ্যুমার আর প্রোডিউসারের। বুঝে পাই না এর পরেও উনারা এত সম্মানের আশা করেন কি করে। বিদ্যা বিক্রি করছেন, অর্থ ইনকাম করছেন। সাথে উপরি হিসাবে নামের আগে প্রফেসর লাগিয়ে ওজন বাড়ান। সাদা, লাল, নীল, হলুদ দলে ভাগ হয়ে যখন কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, ভিসি বা রেজিস্ট্রার পদের জন্য যখন নিরপেক্ষতার পোশাক খুলে নগ্ন হতে সামান্য বাধেনা তখন আপনাদের নিকষ কাল রঙের মনে হয়। এরপরেও শিক্ষক হলেই সম্মান করতে হবে?
ব্যাতিক্রম আছেন। তারা আছেন বলেই কুলাঙ্গারেরা এখনও নিজেদের সম্মানিত ভাবে সুখ পায়। আবারও বলছি এটা ২০১৩ সাল। আমি শিক্ষককে শিক্ষক কমিউনিটির অংশ হিসেবে শ্রদ্ধা করিনা। শ্রদ্ধা করি কিছু মানুষকে যারা শিক্ষক হিসেবে শ্রদ্ধা পাবার যোগ্য। বিবর্তনবাদ মানি বা নাই মানি, এটা বিশ্বাস করি যে যোগ্যরাই টিকে থাকে। সুতরাং সম্মান, শ্রদ্ধা পেতে চাইলে তা কাজের মাধ্যমে অর্জন করতে হবে আপনাকেই। অ্যারিস্টটল, সক্রেটিস, ডঃ শহিদুল্লাহ, আনিসুজ্জামান স্যার, আবু সাইয়িদ স্যার এনাদের ঘাড়ে চড়ে সম্মানের দিন শেষ।
সবশেষে তাঁদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা যারা আসলেই শিক্ষক। ফ্রম ইনসাইড অ্যান্ড আউটসাইড।
** আমার বাবা একজন শিক্ষক।