somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিণতি (অতিপ্রাকৃত গল্প)

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিজয় সদ্য ইউনিভার্সিটি থেকে বের হয়েছে। অন্য কোথাও চাকরি না পেয়ে সামান্য স্যালারীতে পুলিশ কন্সটেবলে যোগ দেয়। সেদিন সে দুপুরে থানায় বসে ফারুক বাবুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল। বাইরে বেশ শীত। এই দুপুরেও সূর্য দেখা যাচ্ছেনা কুয়াশার ফলে। আড্ডার বিষয় যথারীতি খুনখারাবি। ফারুক বাবুর নিজের দেখা খুনের বর্ণনা শুনতে শুনতে চা'য়ে গলা ভিজাচ্ছিল বিজয়। আলস্যে কিছুটা ঘুম ঘুম পাচ্ছিল তারঁ। হঠাৎ দরজা প্রচন্ড শব্দে খুলে যাওয়ায় তারা দুজনেই বেশ চমকে উঠলো। দরজা দিয়ে দৌড়ে পুরো রক্তাক্ত অবস্থায় এক মেয়ে ভেতরে ঢুকলো। বিজয়ের কাছে এসেই কান্নায় ভেঙে পড়লো মেয়েটা। "আমার বোনটাকে মেরে ফেলেছে ওরা স্যার,মেরে ফেলেছে" বলেই আরো জোরে কাদতে শুরু করলো। বিজয় তো পুরো শকড। ফারুক বাবুর ও একই অবস্থা। নিজেকে কোনমতে সামলে বিজয় বললেন-"কে তুমি আর তুমিতো রক্তে ভেসে যাচ্ছ? আসো সামনেই একটা ক্লিনিক আছে।" কথাটা শুনে মেয়েটা আবারো ফুপিয়ে উঠলো "আমি সুমি স্যার আর ওইটা আমার রক্ত নয় স্যার আমার বোনের রক্ত। আপনি দয়া করে আমার সাথে চলুন।" শুনে বিজয় মেয়েটাকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। মেয়েটা বলেছে তারঁ বাসা জয়পুর গ্রামে। কাছেই বেশিক্ষণ লাগবে না। যেতে যেতেই মেয়েটার কাছ থেকে সবকিছু জেনে নিলো সে। মেয়েটার বোন তরুলতা " তরুলতার আজ বিয়ে ছিল। কিন্তু তরুলতার উপর গ্রামের কয়েকজনের নজর ছিল। তারা তরুলতার বিয়ের দিনে তাদের বাড়িতে হামলা করে তরুকে কুপিয়ে মেরে ফেলে। " কাদতে কাদতে সুমি নামের মেয়েটা বলছিল বিজয়কে। শুনে বিজয়ের ও কিছুটা কষ্ট হলো৷ দুপুর তিনটায় সে আর মেয়েটা জয়পুর গ্রামে পৌছুলো। গিয়ে দেখলো আসলেই রক্তারক্তি কান্ড। সুমির মা বাড়ির সামনে চিৎকার করে কাদছেন। সুমির সাথে সে তাদের ঘরে ঢুকে দেখলো তরুলতার রক্তে মাখা লাশ পড়ে আছে। বিয়ের সাজ এ সাজানো। সুমি বোনের লাশ দেখে কাপঁতে শুরু করলো। "তোমাকে এখানে থাকতে হবেনা সুমি।যাও বাইরে যাও। আমি আসছি"। সুমি বের হয়ে গেলো। ফের তরুলতার দিকে তাকালো বিজয়। সাংঘাতিক নির্মমভাবে তাকে মারা হয়েছে। ডান হাতটা প্রায় আলগা হয়ে গেছে। বিজয় একটু ঝুকে ভালো করে তাকালেন। যে হাতটা প্রায় কেটে গেছে সে হাতের আঙুলে তার চোখ স্থির হয়ে গেলো। অসাধারণ সুন্দর এক আংটি শোভা পাচ্ছে সে আঙুলে। এতো সুন্দর আংটি আগে সে দেখেনি। আংটিটা দেখেই ভেতরে লোভ জেগে উঠেছিল বিজয়ের। ঘরে কেউ নেই। এতো ঘটনায় সুমি কিংবা তার মা নিশ্চয় আংটিটা লক্ষ্য করেনি। যদি আংটিটার ব্যাপারে কোন প্রশ্ন জাগে তাহলে নিশ্চয় তারা ভাববে মাস্তান ছেলেগুলো আংটিটা নিয়ে গেছে। এইসব ভেবেই বিজয় ধীরে ধীরে মৃত তরুর হাত থেকে খুলে নিল আংটিটা। আর সেদিনই তারঁ সর্বনাশের খাতা খুলল

ঐদিন সব ঝামেলা শেষ করে রাত এগারোটায় বাড়ি ফিরছিলো বিজয়। বাসায় ফেরার তাড়া না থাকলেও সে বেশ দ্রুত হাটঁছিল। মনের ভেতরে এক চাপা অস্বস্তি। এতোক্ষণে নিশ্চয় সুমিরা গ্রামের লোককে সাথে নিয়ে তরুকে কবর দিয়ে ফেলেছে৷ যাক বাঁচা গেলো। চাকরি করে আর কত টাকা পান, এই আংটিটা বেঁচে তারঁ তিনমাস চলে যাবে। এইসব ভাবতে ভাবতেই বাড়ি ফিরছিল বিজয়। চারপাশ বেশ অন্ধকার। এই অন্ধকারেই কোনভাবে বাসায় ফিরলো বিজয়।
এরপর সপ্তাহখানেক হয়ে গেলো। কিছু হয়নি। সব কিছু আগের মতো। দুই সপ্তাহ পরে একটু দেরি করেই থানায় গেলো বিজয়। তাকে দেখেই ফারুক আর অন্য কলিগরা লাফিয়ে উঠলো। "আরে দোস্ত বিজয়" বলে উঠলো ফারুক "সুমি মেয়েটার কথা মনে আছে?আরে যার বোন কিছুদিন আগে মার্ডার হলো?" শুনে চমকে উঠলো বিজয়। আবার কি হলো? "তুই শুনিস নি?তরুলতা মেয়েটার লাশ কে যেন চুরি করে নিয়ে গেছে রে কবর কুড়ে" এক নিশ্বাসে বলল ফারুক৷" একটা মানুষ কতটুক বিকৃতমনা হলে লাশ চুরি করে বুঝ এবার"। বিজয় সব শুনলো। যদিও তারঁ কিছু আসে যায়না তবুও লাশ চুরির ঘটনা শুনে বিজয়ের একটু ভয় ভয় করতে লাগলো। সন্ধ্যা হতেই বিজয় থানার ওসিকে বলে ছুটি নিয়ে দ্রুত পায়ে বাসার দিকে হাঁটা শুরু করলো। অর্ধেক পথ পেরোতেই অন্ধকার হয়ে এলো। আজ যেনো রাস্তা শেষ হচ্ছেনা ভাবলো বিজয়। আরো কিছুদূর এগোতেই তারঁ হাপানী শুরু হয়ে গেলো৷ ঘড়ি দেখলো বিজয়। ঘড়ি দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। সাড়ে আটটা। অথচ থানা থেকে বেড়িয়েছে সাড়ে ছ'টায়। বাসায় ফিরতে আধ ঘন্টার বেশি লাগেনা৷ আর এখন দু'ঘন্টা হতে চলেছে৷ নিশ্চয় সে রাস্তা ভুল করেছে। কিন্তু দশ বছর যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করেছে সে রাস্তা ভুল করা সম্ভব? এইসব ভাবতেই ভয় ঝেকে ধরলো তাকে। বার বার তরুলতার মৃত মুখটা চোখে ভাসছে৷ ফলে ভয়টা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। দূর থেকে শেয়াল ডেকে উঠলো। বিজয়ের মনে হলো সে হার্টফেইল করবে। খুব ভয়ে কোনদিকে না তাকিয়ে সে প্রায় দৌড়ে চলছিল। এভাবে কতক্ষণ চলছিল সে জানেনা। যখন কিছুদূর সামনে শতবর্ষ পুরোনো আম গাছটা দেখতে পেল তখন তার বুকে পানি এলো। বেঁচে গেছি তাহলে। প্রতিদিনই বাসায় যাওয়া আসার পথে এই গাছটা পড়ে। আরেকটু সামনে যেতেই ভুল বুঝতে পারলো। এটা কোন আমগাছ নয়। কুয়াশা জমে জায়গাটা অন্ধকার হয়ে আছে। দূর থেকে গাছের মতো দেখাচ্ছিল৷ আবারো প্রচন্ড ভয় অনুভব করলো বিজয়। একি হচ্ছে?এটা কি তার আংটি চুরির ফল? পা আর নড়ছে না। বিজয়ের মনে হলো সে তারঁ পা টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আরো কিছুদূর এগোতেই হঠাৎ তার পায়ের নিচের মাটি কেপেঁ উঠলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই সে এক ভাঙা কবরে পড়ে গেল। প্রচন্ড আতংক তার শরীর অবশ করে দিয়েছে৷ আকাশে এতোক্ষণে চাঁদ উঠেছে৷ চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে এক পুরোনো ভাঙা কবরে পড়ে আছে। পায়ে হাটার শব্দ হচ্ছে । ধীরে ধীরে শব্দটা এগিয়ে আসছে৷ প্রচন্ড আতংক নিয়ে দেখলো কবরের পাশে এক নারীমূর্তি এসে দাড়িয়েছে। হৃৎযন্ত্র বন্ধ হলো বিজয়ের।
পরদিন সকালে জয়পুরের লোকজন তরুলতার কবরে বিজয়ের লাশ পায়।
(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:০০
১৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×