somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ প্রেম (দ্বিতীয় পর্ব)

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেষ প্রেম (প্রথম পর্ব)

আজ সেই বিশেষ দিন।

ভেবেছিলাম সেই হিসাবে দিনটা একটু অন্যরকম লাগবে আমার কাছে। কিন্তু সকাল বেলা উঠে কোন পার্থক্যই খুজে পেলাম না অন্যান্য দিনের সাথে। উঠে হাত-মুখ ধুয়েই বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। তারপর নাস্তা করেই বের হয়ে গেলাম বাসা থেকে কাউকে কিছুই না বলে। আর বের হওয়ার সাথে সাথেই নার্ভাসনেস যেন জাপটে ধরল আমাকে। মনে হচ্ছিল হেটে যেতে পারবো না। কোন রকমে একটা রিকশা ডেকে নিয়ে উঠে বসলাম। তারপর সোজা বসুন্ধরা।

আমার গন্তব্যের যত কাছাকাছি যাচ্ছিলাম ততই অস্থির লাগছিল। শুধুই মনে হচ্ছিল সবকিছু ভালয় ভালয় উতড়ে যাবে তো। তাছাড়াও মনের মধ্যে অজস্র ভাবনার ভীড়। সবকিছু একপাশে সরিয়ে কোনভাবে ঢুকলাম বসুন্ধরায়। তারপর সোজা চলে গেলাম তার দোকানের সামনে। গিয়ে দেখি নাহ। সবকিছু ঠিকঠাক মতই আছে। সে সেই এক ই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে আমার অপেক্ষায়। আমি এগিয়ে গেলাম, গিয়ে তার হাতটা ধরলাম। তারপর যেন হারিয়ে গেলাম অজস্র বুনো স্বপ্নদের ভীড়ে।

কামরূলের দৃষ্টি থেকেঃ
রাফিদ ছিল আমাদের মাঝে সবচাইতে বেশি উৎফুল্ল, প্রাণচঞ্চল। সবসময় ই লাফাচ্ছে, গান গাচ্ছে। খুব ভাল গীটার ও বাজাতো। আর পড়াশুনায় তো কথাই ছিল না। বিশেষ করে ওর মত সার্ভে কেউ ই করতে পারতো না। স্যাররা তো আমাদের দিকে চোখ তুলেও তাকাতো না। আর শয়তানির কথা তো বললাম ই। আশেপাশে যারা থাকতো সবাইকেই সবসময় তটস্থ করে রাখতো। ওর জ্বালায় কেউ কখনোই শান্তিতে থাকতে পারতো না। একটা মূহুর্তও চুপ করে বসে থাকতে পারতো না। আর ফ্রেন্ডদের মাঝে যার পিছনে একবার লাগবে তার তো খবর ই ছিল।তার জীবন পুরা তেজপাতা।

সেই রাফিদের হঠাৎ করে কি হল কেউ বলতে পারবে না। কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেল। ঠিক কবে থেকে এইরকম হল তা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে না পারলেও লুবার বিয়ের পর থেকেই সবাই ওর পরিবর্তনটা ধরতে পারলো। আমি যদিও বিয়ের কিছুদিন আগে থেকেই খেয়াল করছিলাম। কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে আমাদের রাফিদ। আমাদের মাঝে আর আগের মত সময় কাটায় না। গিটার বাজানো ছেড়ে দিয়েছে বলতে গেলে। পড়াশুনাতেও রেজাল্ট খারাপ করতে থাকল অনবরত ভাবে। একদিন তাই ওকে ধরলাম আমি। জিজ্ঞেস করলাম সমস্যা কি। বুঝছিলাম যে প্রেমে পড়েছে আমাদের রাফিদ। কিন্তু কোন কিছু তো স্বীকার করলই না উলটা আরো আমার সাথে ঝগড়া করে চলে গেল।

কিন্তু আমার কৌতুহল হচ্ছিল যে কি এমন করছে আমাদের রাফিদ যে ওর মত একটা ছেলে হঠাৎ করেই এমন চেঞ্জ হয়ে যাবে। তাই সেইদিন ই ফলো করলাম ওকে। দেখলাম যে ক্লাস ছুটি হলেই সাথে সাথে বের হয়ে গেল। বের হয়েই সোজা গেল বসুন্ধরায়। ওর পিছন পিছন আমি ও গেলাম। দেখলাম যে ঢুকেই সোজা কোন কেনাকাটা না করে বা অন্য কোনদিকে না তাকিয়েই সোজা ৩তালায় চলে গেল। গিয়ে মেয়েদের একটা কাপড়ের দোকানের সামনে দাড়িয়ে থাকলো। সেইদিন ই ওকে ধরতাম আমি আবার। কিন্তু আমার টিউশনির সময় হয়ে যাচ্ছে দেখে সেইদিনের মত চলে আসলাম আমি আর ঠিক করলাম যে তারপরের দিন আবার ধরব ওকে।

পরের দিন গেলাম ভার্সিটি। গিয়ে দেখলাম আসেই নি ও। তারপরের দিন ও ওর কোন খোজ নাই। মোবাইল তো অনেক আগে থেকেই বন্ধ করে দিয়েছে। তাই খোজ যে নিব সেই উপায় ও নাই কোন। তারপরের দিন তাই গেলাম ওর বাসায়। গিয়ে শুনলাম যে প্রতিদিন ই সকাল বেলা বের হয়ে যায় আর ফিরে আসে গভীর রাতে। বাসায় যতক্ষন থাকে ততক্ষন ও কারো সাথেই কোন কথা বলে না। চুপচাপ নিজের ঘরে পড়ে থাকে। আমি তাই পরের দিন আবার আসার কথা বলে সেদিনের মত চলে আসলাম আর ওর বাসায় বলে আসলাম তারপরের দিন যাতে কোনভাবেই ওকে বাসা থেকে বের হতে না দেওয়া হয়।

পরের দিন গেলাম ওর বাসায়। গিয়ে শুনি সেইদিন রাতে নাকি রাফিদ আর বাসাতেই ফিরে নি। বাসায় তো আন্টি পুরা কান্নাকাটি করতে করতে ভাসায়ে ফেলতেছে, আর আঙ্কেল তো অনেকদিন আগে থেকেই অসুস্থ। তার অবস্থা তো আরো খারাপ। আমি তাই কোনভাবে আঙ্কেল-আন্টিকে স্বান্তনা দিয়ে বের হয়ে আসলাম। তারপর আশেপাশে সবদিকে খোজ খবর নিলাম। অন্যান্য বন্ধু-বান্ধবদেরকেও জানালাম। কোথাও ই কোন খবর নাই। তারপরের দিন ও কোন খবর না পেয়ে থানায় গিয়ে জিডি করিয়ে আসলাম। কিন্তু রাফিদের কোন খবর ই আর পাওয়া গেল না। তারপর দিন ও না, না পরের সপ্তাহে।

২মাস পরঃ
এর মাঝেও রাফিদের আর কোন খোজ নাই। পুরাপুরি ভাবে যেন বাতাসে মিশে গেছে আমাদের রাফিদ।

একদিন বন্ধুরা সবাই মিলে ঘুরতে গেছি আবার বসুন্ধরায়। ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ ই ৩তালায় এসে পড়লাম। আর তখন ই আমার সেই দোকানটার কথা মনে পড়ল। সেই মেয়েদের কাপড়ের দোকান।

আমি তাই কাউকে না বলে চলে আসলাম সেই কাপড়ের দোকানটার সামনে। এসেই অবাক হয়ে গেলাম। এ যে আমাদের রাফিদ। অবিকল রাফিদ। এভাবে ওকে ফিরে পাবো ভাবতেই পারিনি। সেই মেয়েদের কাপড়ের দোকানটার সামনেই দাড়িয়ে আছে। একটা মেয়ে পুতুলের হাত ধরে দাড়িয়ে আছে আমার বন্ধু রাফিদ। প্রাণহীন আরেকটা পুতুল।

*এইটা আমার লেখা প্রথম প্রেমের গল্প। :):):) কেমন লাগলো জানাবেন সবাই আশা করি।
*আবার ও বলতেছি এর সাথে যে আমার বাস্তব জীবনের মিল খুজতে যাবেন নিজ দায়িত্বে খুজে নিবেন। আমার কোন দায়-দায়িত্ব নাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৪:০৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×