আচ্ছা মানুষ আত্মহত্যা কেন করে?
দাঁড়িয়ে ছিলাম বনানী রেল ক্রসিং এ। সামনে দিয়ে একটা ট্রেন যাচ্ছিল জন্য গাড়ি গুলো সব দাঁড়িয়ে আছে। ট্রেনটা চলে গেলেই রাস্তা পার হয়ে ভার্সিটি যাব। এমন ই সময় হঠাৎ করেই প্রশ্নটা মাথায় আসলো।
এই যে পেপার খুললে কিছুদিন পর পর ই যে একেকজনের আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়, ঠিক কি কারণে তারা একেকজন এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে চায়? অনেক সময় শুনি যে চাকরী না পেয়ে অথবা ইভিটিজিং এর স্বীকার হয়ে বা রিলেশন ব্রেকআপ হওয়ার পরেও অনেকেই।
কিন্তু শুধুই কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে কি কেউ ই আত্মহত্যা করেছে আজ পর্যন্ত? এর পিছনে আদৌ কোন যুক্তি কি আছে?
তাহলে আমার কেন হঠাৎ করেই এইরকম অদ্ভূত ইচ্ছা হচ্ছে? ইচ্ছা করছে সামনে দিয়ে চলে যেতে থাকা ট্রেনের নিচে লাফ দিতে? মারা গেলে আসলে কি হয় তা জানতে খুব কৌতুহল হচ্ছে।
এমন তো না যে আমার জীবনে কখনো কোন কষ্ট আসে নি। অনেক কষ্টই তো পেয়েছি এই জীবনে।
সেই ১৬বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে যখন দিশেহারা অবস্থা অথবা তিথির সাথে ৩বছরের রিলেশনটা যখন ভেঙ্গে গেল। সেই সময় গুলোই তো আমার জীবনের সবচাইতে দুঃখের সময় ছিল বলে মনে হয়। কই, তখন ও তো অন্তত এইরকম ইচ্ছা করে নি। তখন তো মনের যতটুক ইচ্ছা, অনুপ্রেরণা ছিল সব নিয়েই ঝাপিয়ে পড়েছিলাম সেই সময় গুলো যাতে কাটিয়ে ওঠা যায় সেই চেষ্টায়।
কেউ আত্মহত্যা করে মারা যাওয়ার খবর পেলে সেই মানুষটার জন্য কেমন যেন একটা করুণা অনুভব করতাম সবসময়ই। ভাবতাম যে যত কষ্টই পাক না কেন মারা কেন যেতে চাবে একটা মানুষ। সবসময়ই আত্মহত্যার বিরুদ্ধেই কথা বলে এসেছি আমি সবজায়গাতেই। আর নিজের যত কষ্টই আসুক না কেন আত্মহত্যার কথা তো কোনদিন মাথাতেও আসে নি আমার।
তাহলে এখন কেন এইরকম ইচ্ছা হচ্ছে?
অন্তত এখন তো কোন কারণে দুঃখ কষ্টের মধ্যে আছি বা মন খারাপ এমন তো না। ভার্সিটির পড়াশুনার পাট চুকতে এখন ও আরো ১বছরের মত বাকি কিন্তু এর মধ্যেই ৩জায়গা থেকে চাকরীর অফার পেয়ে বসে আছি, আঁখির সাথে সম্পর্কটাও আজ প্রায় দেড় বছর হতে চলল। ঝগড়া যে করি না তা না, কিন্তু খুব সিরিয়াস ধরণের কোন কিছু তো হয় নি এর মধ্যে। তাহলে কেন হঠাৎ করেই এরকম ইচ্ছা করছে? কেমন যেন এক ধরণের কৌতুহল অনুভব করছি ভেতরে ভেতরে।
খুব বেশি কৌতূহল হচ্ছে আসলে। জানতে ইচ্ছা করছে যে মারা গেলে আসলে কি হয়। সেখানেই কি আসলে সব কিছু শেষ? এই যে পৃথিবীতে আমরা এতদিন থাকলাম, এত কিছু করলাম সব কিছুই? একটা মানুষ এরকম ভাবে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায় কিভাবে?
এইসব ই উল্টাপাল্টা চিন্তার ভিতরে এতটাই হারিয়ে গেছিলাম যে ট্রেনটা যে কোনদিক দিয়ে চলে গেছে সেইটাও খেয়াল করি নাই। অদ্ভূত একটা ঘোরের ভিতরে চলে গেছিলাম।
ঘোর থেকে ফিরলাম আসিফের ডাকে। "ওই হালা। কিতারে, এইখানেই খাড়ায়া থাকবি নি এমনে? পরীক্ষা আছে আজকে সেই খেয়াল আছে? ভ্যাবদা মারলি ক্যা? হাটা দে। শুরু হইয়া যাইব পরীক্ষা।"
পরীক্ষার চিন্তা মাথায় ফেরত আসতেই এইসব হাবিজাবি চিন্তা মাথা থেকে একদম উধাও হয়ে গেল। আবার কোনদিন এই রেললাইনের পাড়ে দাড়িয়েই হয়তোবা ফিরে আসবে চিন্তাগুলো আবার। তখনের জন্যই তোলা থাক না হয়।
* কি যে আসলে লিখলাম এইটা নিজেই আসলে বুঝলাম না। তাই ভাল খারাপ কেমন হইছে জানাইলে খুশি হইতাম।
* ব্লগে লেখা আমার এই দ্বিতীয় গল্পটা উৎসর্গ করলাম ইমতি, রঙ্গু আর নিটোল কে। তোরা ৩টা না থাকলে এই পর্যন্ত জীবনটা কিভাবে যে পার করতাম আল্লাহ জানে।