somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

A legend, A hero : David Villa

১৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান যুগের ফুটবলে 'প্লেয়িং পজিশন' বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কিছু নতুন ফরমেশনের সাথে নতুন
পজিশনও যোগ হয়েছে। আচ্ছা একবার ভাবুন তো, ৪-৪-২ ফরমেশনের একজন উইংগার স্প্যানিশ
লিগের একটি টপক্লাস দলের টানা পাঁচ মৌসুমে দলের
টপস্কোরার এবং এক মৌসুমে লিগের সর্বাধিক
এসিস্টকারী খেলোওয়ার, নয় বছরের ন্যাশনাল ক্যারিয়ারের প্রথম ৪ মৌসুম উইংগার হয়ে খেলেও জাতীয় দলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা, অনেকটা একাই জাতীয় দলকে ইউরো এবং বিশ্বকাপ জেতানো, এসব যদি একজন করতে পারেন, তবে তাকে কি বলা উচিত্...

ক্যারিয়ারের সময়টা যতটা মধুর ছিল, তার আগের জীবনটা ছিল ততটাই তিক্ত। মাত্র ৪ বছর বয়সে যখন ডান পায়ের ফিমারে ফ্র্যাকচার হয়, তখন কোনো ব্যাক্তিই ভাবতে পারেননি এই ছেলেটি বড় হয়ে ফুটবলার হতে পারবেন। তবে একজন শুধু ভাবেনই নি,
বিশ্বাসও করেছিলেন, তার বাবা জোসে ভিয়া।
ইন্জুরিকালীন সময় তিনি বারবার ডেভিডকে বল দিতেন বাম পা দিয়ে শুট করার জন্য যখন তার ডান পায়ে প্লাস্টার ছিল, এবং যখন তিনি সুস্থ হয়ে ফিরলেন তখন তার বাম পা টা আর উইক ফুট হিসেবে থাকল না। আবার ১৪ বছর বয়সে কোচদের সন্তুষ্ট না করতে পারা আর ফুটবল বিমুখতার কারণে যখন তিনি প্রায় ফুটবল ছেড়েই দিয়েছিলেন, সবার আগে এগিয়ে আসেন তার বাবা। তার কারণেই তিনি মারেও ফুটবল স্কুলে চান্স পান।

ছেলেবেলার নায়ক কুয়িনিকে আদর্শ মেনে স্পোটিং গিজনে আসেন ১৯ বছর বয়সে, একজন ইউথ প্রোডাক্ট হিসেবে। ইউথ রেংকিং এ দুর্দান্ত পারফরমেন্স করার পর ২০০০-০১ মৌসুমে অভিষেক করেন প্রথম দলের হয়ে। মাত্র দুই মৌসুমেই করেন ২৫ গোল। তত্কালিন গিজন কোচ নিজেই স্বীকার করেন, তাকে খুব কম চান্স দেওয়া হয়, কিন্তু অতিমানবীয় কর্মক্ষমতার ফলে সে অসাধারণ পারফর্ম করেন।

গিজনে যখন ৪০ গোল করলেন, তখন দলের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ, আর সেই সুযোগের সত্ব্যবহার করে রিয়াল জারাগোজা। এতটা পোটেনশিয়াল খেলোয়ারকে তারা কেনে মাত্র ৩ মিলিওন ইউরো দিয়ে কেনে। হঠাত্ একটা টপ ক্লাস দলে খেলতে তার কোনো অসুবিধাই হয় না, যার প্রমান প্রথম মৌসুমেই ১৭ গোল। ২০০৪ সালের কোপা দেল রে ফাইনালে গোল করে ৩-২ গোলে হারান রিয়াল মাদ্রিদকে। ক্লাব সাপোর্টাররা এতটাই মুদ্ধ হন
তার ওপর যে তারা একটা নতুন স্লোগানই বের করেন,
যাতে তাকে 'মারভেলা' বলা হয়, যার অর্থ অসাধারণ।

পরের মৌসুমে করেন ২১ গোল, যা দলকে নিয়ে যায়
ইউয়েফা কাপের রাউন্ড অফ ১৬ এ। এবারও কাহিনির একই মোড়, ক্লাব পড়ল আর্থিক সংকটে, আর তার ফলে ১২ মিলিওন ইউরোতে তাকে কিনে নেয় ভ্যালেন্সিয়া। দলের হয়ে প্রথম ম্যাচেই করেন গোল। তবে তা ছিল শুধুই শুরু। রুবেন বারাজা ও জোয়াকিনের সাথে তৈরি করেন বিশ্বের সবচেয়ে ডেডলি এ্যাটাকিং জুটিগুলোর
একটি। গোল করে জেতান রিয়াল-বার্সার বিরুদ্ধে। লা করুনার বিরুদ্ধে করেন ৫০ ইয়ার্ড থেকে এক দুর্দান্ত গোল।
বিলবাওয়ের বিরুদ্ধে করেন ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম
হ্যাট্রিক, ৮০ থেকে ৮৫ মাত্র পাঁচ মিনিটেই। প্রথম মৌসুমেই ৩৫ লিগ ম্যাচে করেন ২৫ গোল, হন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা।

পরের মৌসুমে স্ট্রাইকিং পজিশনে জুটি বাধেন
সাবেক তারকা মাদ্রিদিস্তা ফার্নান্দো মরেন্তেসের
সাথো। দুইজন মিলেই করেন ৪৩ গোল। দলকে নিয়ে যান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে, যেখানে চেলসির কাছে হেরে যায় ভ্যালেন্সিয়া। এদের মধ্যে ইন্টার মিলানের বিরুদ্ধে রাউন্ড অফ ১৬ এর খেলায় তার পারফরমেন্সটা ছিল প্রসংশনীয়। করেন ১৬ টি গোল, আর করেন লিগের সবচেয়ে বেশি এ্যাসিস্ট। পরের মৌসুম তার দলের জন্য ছিল ছন্দপতনের, যদিও তারা কোপা দেল রে জিততে পেরেছিল। কিন্তু ভিয়া ভিয়াই, করেন ২৬ ম্যাচে ১৮ গোল। দলকে নিয়ে যান
ইউয়েফা কাপে। শততম ম্যাচে করেন অসাধারণ
হ্যাট্রিক, যা দলের হয়ে ছিল তার ৫৬তম গোল। শেষ ম্যাচে দুই গোল করে মৌসুম শেষ করেন ১৮ গোল নিয়ে। পরের মৌসুমে যখন জাতীয় দলকে ইউরো জেতালেন, রিয়াল মাদ্রিদ তাকে সাইন করানোর এক ব্যার্থ চেষ্টা চালায়। মৌসুম শেষে করেন ৩৩ ম্যাচে করেন ২৮ গোল, অনুপাত ছিল অবিশ্বাস্য ০.৮৪/ম্যাচ! ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে মাত্র চার মৌসুমেই করেন ১০১ টি গোল। ভিয়াকে পাবার
জন্য পরের মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, লিভারপুল, চেলসি ও ম্যান্চেস্টার ইউনাইটেড একত্রে চালায় চেষ্টা, যদিও তা ব্যার্থ চেষ্টা ছিল। ২০০৯ সালে করেন ৪৩ গোল তাও আবার মাত্র ৫৪ ম্যাচে, যা ওইবছরে বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে বসায় তাকে।

পরের মৌসুমে ৪০ মিলিওন ইউরোতে আসেন বার্সায়। প্রথম এল ক্লাসিকোতে ২ গোল করে দলকে জেতান ৫-০ গোলে, যা ইতিহাস হয়ে আছে, থাকবে। ২০১০ সালে হন 'মেল অ্যাথলিট অফ দ্যা ইয়ার'। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে গোল করে ইউনাইটেডের কফিনে মারেন শেষ পেড়েক, দলকে জেতান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। পরের মৌসুমে ওয়ার্ল্ড ক্লাস গোল করেন সুপার কোপায়। তবে সেই মৌসুমের মধ্য ভাগে পা ভাঙেন আল সাদের বিরুদ্ধে, যা তার মৌসুম ও ইউরো দুটি খেলার আশাই শেষ
করে দেয়। আট মাস ইন্জুরির পরেও খেলতে ফেরেন, তবে আর সেই ফর্ম খুঁজে পান না। পেদ্রোর কাছে হারান নিজের লেফট উইং পজিশন। তবে তারপরও মৌসুম শেষ করেন ১৬ গোল করে।

২০১৩-১৪ মৌসুমে ৫.১ মিলিওন ইউরোর বিনিময়ে যোগ দেনস্পেনের তৃতীয় সেরা দল অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদে। তার আগে বার্সার সাথে জেতেন দুটি লিগ, দুটি স্পানা কোপা, এবং একটি করে কোপা দেল রে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ইউয়েফা সুপার কাপ। নতুন ক্লাবে এসেই ডিয়েগো কস্তার সাথে গড়ে তোলেন স্টাইকে এক ভয়ংকর জুটি যা গত মৌসুম পর্যন্ত অব্যহত ছিল।

জাতীয় দলের হয়ে সর্বদাই ছিলেন সেরা। ২০০৬ ও ২০১০
বিশ্বকাপে তিন ও পাঁচ গোল করেন। স্পেনের হয়ে ২০১০
বিশ্বকাপ জেতেন, পান সিল্ভার শু আর ব্রোন্জ বল। চার গোল করে দলকে প্রায় একাই জেতান ২০০৮ ইউরো, পান গোল্ডেন বুট।

একজন খেলোয়ার এতটা সফলকিভাবে হতে পারেন? বিষয়টা নিয়ে গবেষণা করা উচিত্। উইংগার হিসেবে যতটা সফল তার চেয়েও বেশি সফল স্ট্রাইকার হিসেবে। গুলির মতো সব ক্রস, দারুন সব কার্ভ শট, ফ্রি-কিক থেকে গোল করার চমত্কার ক্ষমতা, দ্রুত গতিতে দৌড়েও পারফেক্ট ফিনিশিংয়ের গুণ, এসব কিছু কিন্তু একজনেরই গুন।

শুরুটা যতটা ভয়ংকর ছিল, তার চেয়েও ভয়ংকর ছিল পরের গল্প।

কি আর বলব, #সিম্প্লি_ভিয়া !
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×