somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

ধূষর দিনে উড়াউড়ি

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল থেকে তুমুল বরফের উড়াউড়ি দেখছি। যত না তুষার পরছে তার চেয়ে বেশি উড়ছে, মাটিতে শুয়ে থাকা বরফ।
ঘন মেঘের কুণ্ডলি পাকিয়ে ধূষর অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে দৃষ্টি সীমানা। দূরে দিগন্ত রেখা চলে আসে কাছে আর সবুজ পাইনগুলো সাদা চাদর জড়ানো হালকা থেকে হালকা অবছায়া রূপে দাঁড়িয়ে থাকে। পত্রহীন গাছের আভাস দেখা যায় কি যায় না। চারপাশ যেন স্থবির বিরান এক অচিন পৃথিবী।
গতকালও দেখেছি কয়েকটা পাখি উড়াউড়ি করছিল। বুকের মাঝে সাদা পালকের ঘের দেয়া পাখিটা বেশ কবার জানলার সামনে দিয়ে উড়ে গেল। জানালার পাশের আপেল গাছে বসল। আর এক সময় ঠকঠক শব্দ শোনে দরজায় কেউ এসেছে ভেবে গেলাম। কিন্তু কাউকে পেলাম না। অতঃপর শব্দ অনুসরন করে পেলাম সাদা পালকের বুক, কাঠবাদামের গাছে ঠেকিয়ে দারুণ ঠোঁটে ঠকঠকাঠক শব্দ তুলে নিজের ঘর বানাতে ব্যস্ত কাটঠোকরা। পিঠের উপর আঁকা কালো সাদার ডোরা। আর লাল রঙিন একটা ঝুটি আর হলুদ বরণ ঠোঁট ও পা।
কাটবাদামের গাছে নিশ্চুপ ঘুমিয়ে আছে আজ বরফপাতের সময়। তারা ঠিক জেনে যায় কখন একদমই বের হওয়া যাবে না বাইরে। কখন বাতাস তুমুল অথবা কখন চটপট সংগ্রহ করে ফেলতে পারবে খাবার। কাটবেড়ালিগুলোও খুব ছুটছিল দুদিন ধরে বিরামহীন ছুটাছুটি, উঠোনে ছড়িয়ে থাকা কাটবাদামগুলো তুলি নিয়ে জমিয়ে রেখেছে নিজের ঘর ভর্তি করে। খাওয়ার কোন অভাব হবে না বরফপাতের দিনে। বড় অভিজ্ঞ আবহাওয়াবিদ এরা।
এবছর অনেক তাড়াতাড়ি শীত নামল বরফ পাত শুরু হলো। উঠোন পরিস্কার করার সময়ই পেলাম না, শরতের ঝরাপাতা ফলমূল ছড়িয়ে থাকল যেমন ছিল তার উপরই তুষারপাতের আভরণ পরে গেলো। ভালো হলো কাটবেড়ালির খাবারের অসুবিধা হবে না। বেশ ক'দিন ছড়িয়ে থাকা আপেল খেতে, হরিণরা দল বেঁধে এলো দেখতে মন্দ লাগল না কাছাকাছি তাদের চলাফেরা। ঘ্রাণ শুঁকে ঠিক পেয়ে যায় তারা খাবারের সন্ধান। তারা তো আর আমার সাথে খেলতে আসে না। তবে তারা যখন আসে চাঁদের আলোয় বিচরণ করে আমার চারপাশে তখন স্বগীয় অনুভুতি হয় অরণ্যের মাঝে থাকার সুখ অনুভব করি।
এখনো শরৎকাল। শীত আসতে আরো দশদিন বাকি সময়ের হিসাবে। কিন্তু এবছর শীত গেছে বলেই টের পাইনি। মনে হলো শীত জাকিয়ে বসে আছে সারা বছর। হঠাৎ কখনো রোদের চমক, বেশ তাতানো সময় পেয়েছি হঠাৎ কখনো।
জায়গায় জায়গায় জমে যাচ্ছে বরফের বালিয়াড়ি। কতটা কঠিন এই বরফের ঢেউ তোলা পথ পেরুনো; প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা না থাকলে কেউ বুঝতে পারবে না।
পরিস্কার করার অল্প সময়ের মধ্যে রাস্তা ঢেকে যাচ্ছে আবার। এর উপর দিয়ে হাঁটা যেমন কষ্ট গাড়ি চালানো আরো ভয়াবহ। গাড়ি আটকে যাবে কাদায় আটকে যাওয়ার মতন। কিছুতেই এগুবে না। তখন দুহাত সম্বল করে বেলচা দিয়ে একটু একটু করে তুলে নিতে হয় বরফগুলো সমুদ্র সেঁচার মতন। তবু সাফ হয় এক সময়।
এবছর বড় তাড়াতাড়ি বরফ পাত শুরু হলো ১৯৮৪তে এমন নভেম্বরে বরফপাত হয়েছিল। সে রেকর্ড ভঙ্গ করে ১১ নভেম্বর এবার প্রথম দিনে প্রায় দশ সেন্টিমিটার বরফ পাত হলো।
প্রথম দিনটা বরাবরই কঠিন থাকে সবার জন্য। পরে অভ্যস্থ হয়ে উঠে। প্রায় তিনশ গাড়ি রাস্তায় দূর্ঘটানায় পরে ছিল সেদিন। পরের সপ্তাহে পরিমাণটা আরো বেশি হয়েছিল পাঁচশ।
সেদিন আমাকে বের হতে হয়েছিল অনেক সকালে, সূর্য জাগার আগে। কাজে পৌঁছার পর থেকেই দেখছিলাম ক্রমাগত বরফ পরছে তো পরছেই। আহা ছোটবেলায় দেখা সিনেমার মতন ছবি চোখের সামনে। স্বপ্নের মতন লাগে কিন্তু বাস্তবে তার সাথে মোকাবেলা করাটা কঠিন অবস্থা।
দীর্ঘ সময়ের কাজ শেষ করে রাত এগারোটায় যখন পথে বের হলাম বাড়ি ফেরার জন্য। পথ তখনও পরিচ্ছন্ন হয়নি।
এত তাড়াতাড়ি বরফ পরে না বলে বরফ সাফের গাড়িগুলো তৈরি হয়নি। তাছাড়া আগের চেয়ে অনেক কমিয়ে দেয়া হয়েছে নগরির সুযোগ সুবিধা। বাজেটের সল্পতার মধ্যে, প্রকৃতির বিশাল বৈপরিত্য বেশ বেসামাল করে দিল জন জীবন।
আধ ঘন্টার রাস্তা প্রায় দেঢ় ঘন্টায় পেরুলাম সেদিন বাড়ি পৌঁছাতে। রাস্তায় ভীড় নেই কিন্তু জোড়ে যাওয়ার সুযোগই নেই। চাকার নীচে বরফের কম্বল বিছানো। কখন পিছলে কোন দিকে চলে যাবে গাড়ি তার ঠিক নাই যতটা সম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করে চলা।
পথে অনেক গাড়ির বেহাল অবস্থা দেখতে পেলাম। কেউ পিছলে গেছে। কেউ অন্যের সাথে ঠোকাঠুকি লেগে গেছে।
কেউ থেমে গেছে ইঞ্জিন থেমে গেছে বলে। রাস্তা আটকে পরে থাকা সে সব গাড়ির পাশ দিয়ে অতি সাবধানে যেতে হচ্ছিল যেন নিজেও ওদের গায়ে পরে থেমে না যাই।
আর সেদিন সাহায্য পাওয়ার জন্যও অপেক্ষা করতে হতো দীর্ঘ সময়। শীতে জমে যেতে হবে যদি গাড়ি থেমে যায়।
ফ্রিওয়ে রেখে হাইওয়েতে ঢুকলাম ভালো পথ পাওয়ার আশায় অথচ একই অবস্থা সেখানেও সেদিন। অথচ হাইওয়েগুলো সচরাচর চট জলদি পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। ডনভ্যালীর আঁকাবাঁকা প্রিয় রাস্তাটা সেদিন মনে হয়েছিল যমদুতের মতন।
যেন পার হচ্ছি ফুলসেরাতের পুল। দীর্ঘ ষোল ঘন্টার কাজের পর এনার্জি যখন বিছানার সঙ্গ চায় সে সময় তীক্ষ সতর্কতায় গাড়ি চালানো সে এক কুস্তি করার মতন অবস্থা। নিজে থেকে কিছু না করলেও কিছু একটা ঘটনা ঘটে যেতে পারে যে কোন মূহুর্তে। এবং বাড়ি ফিরে ড্রাইভওয়ে পরিস্কার করে গাড়ি তুলতে হলো গ্যারাজে। আঙ্গুলগুলো জমে তখন শক্ত হয়ে গেছে।
এ অভিজ্ঞতার পর কাজে গেলাম সবওয়েতে চড়ে। সেদিনও কাজের সময় ছিল দীর্ঘ। প্রতি সময় শেষ ট্রেনটি শেষ হওয়ার আগে কি কাজ শেষ হবে এই ভাবনা মাথায় খেলছিল যত রাত বাড়ছিল সে সময়। যাক শেষ মূহুর্তে ট্রেন বন্ধ হওয়ার আগেই কাজ শেষ হলো । দ্রুত বাড়ি ফেরার জন্য ছুটলাম পাতাল ট্রেনে। প্রথম পর্ব ভালোই কাটল। দ্বিতীয় ট্রেনে উঠার জন্য অপেক্ষা করছি। মাঝরাতে অনেক লোক অপেক্ষার মাঝে এসে জড়ো হলো। ঠিক সামনে যে বগিটি থামল আমরা এক ঝাঁক মানুষ তাতে ঢুকে পরলাম। এবং তারপরই টের পেলাম কি ভয়াবহ দূর্গন্ধ সারা বগি জুড়ে। নামতে গেলাম ততক্ষণে ট্রেন ছুটতে শুরু করেছে। বন্ধ বগির ভিতর নরক যন্ত্রনাময় দূর্গন্ধ। আমরা সবাই অন্যপাশে ছুটতে লাগলাম সবাই নাক ঢেকে নিয়েছে তরপরও মনে হচ্ছে বমি করে দিব বুঝি।
একজন হোমল্যাস বসে আছেন সিটে নির্বিকার তার নিজের গায়ের গন্ধ তাকে একটুও বিভ্রান্ত করতে পারছে না। কিন্তু আমরা এত জন দম বন্ধ করে আছি টিকতে পারছি না, তার গায়ের গন্ধে।
এই মানুষটি বাড়ি পরিবার সব ছিল হয় তো খুব বেশিদিন আগে নয়। কিন্তু এখন সব হারানো সে। অর্থনৈতিক অবস্থা কোথায় যাচ্ছে তার একটা চিত্র। শীত রাতে ট্রেনের উষ্ণতায় কাটিয়ে দেয়ার জন্য ঢুকে গেছেন। এমন হোমল্যাসের সংখ্যা বাড়ছে শহর জুড়ে। সব এলাকায়।
মিনিট দুইয়ের মধ্যে পরের স্টেশন আসতেই আমরা সবাই ছুটে বেরিয়ে অন্য বাগিতে আশ্রয় নিলাম।
নানারকম ঘটনা চলে আসে চলার পথে। ঘটনা বিহীন চলা হয় না।
তবে কাজকাম না থাকলে ধূষর দিগন্তে চোখ রেখে কোন কোন বরফপাতের দিন কফির উষ্ণতায় ঠোঁট রেখে জানালায় চোখ রেখে বসে থাকতে বেশ ভালোলাগে।





সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৩৬
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×