সেদিন বাড়ির পিছনে হাঁটছিলাম দুপুর বেলা। লাল জুঁই ফুলে গাছটা ভরে গেছে। পুকুরের জলে তার ছায়া। তার টানেই পায়ে পায়ে সেখানে চলে গেলাম। যেতে যেতে দেখা হলো বয়স্ক কচ্ছপটার সাথে । আপনমনে গা ভাসিয়ে সাঁতার কাটছে। সূর্যের প্রখর আলো উপভোগ করছে বেশ আনন্দে ।
পুকুরের জলে আর যাদের খুঁজছিলাম তাদের দেখা পেলাম না। গত কদিন আবার একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা তাই গহীনে ডুব দিয়ে আছে তারা। কদিন ধরে একবারও দেখতে পেলাম না, তাদের চেহারা। ফড়িঙগুলো কোথা থেকে উড়ে এসেছে এপাড় ওপাড় উড়াউড়ি করছে। জলের মাঝে এক মনে চক্কর দিচ্ছে কালো ছোটছোট পোকা। ভাট ফুলের গাছগুলো বেশ লম্বা হয়ে গেছে। প্রজাপতিগুলো ভাটফুলের ফুল ফোটার অপেক্ষা করছে। আর আমি আছি ঘ্রাণ পাওয়ার। কি দারুণ সুগন্ধ।
কয়েকটা ব্ল্যাক ফ্ল্যাই মাথার চারপাশ দিয়ে ঘুরছে। হুট করে বেরিয়ে পরলাম মাথায় হ্যাট টেট কিচ্ছু নেই। হাতেও কিছু নেই তাদের তাড়াব। হাত নাড়িয়ে যতই সরাই তারা আমার মাথায় বসার চেষ্টা করে। এদের খুব পছন্দ মাথায় বসা। গতবার এমন ভাবে কামড়ে দিয়েছিল, বেশ কদিন বড়বড় চাকা হয়েছিল মাথায়, সাথে প্রচণ্ড ব্যাথা। তবে এবার সতর্কভাবে ওদের কামড় না খাওয়ার চেষ্টা করছি। অর্ধ চন্দ্র পুকুর পাড় মাছিগুলো উড়ল আমার সাথে তারপর একটা আপেল গাছের কাছে দাঁড়িয়ে খুব করে একটা বড় ডাল ধরে নাড়ালাম মাথার কাছে। তখন পাজি মাছি গুলো অন্যদিকে উড়ে পালাল। এক এক জায়গায় একএক রকম বন্য গাছ গজাচ্ছ। কোথাও এক ধরনের গাছ হয়েছে যার ডালে জমে আছে পানির ফেনা। বন্য স্ট্রব্যারির সাদা সাদা ফুল অনেক জায়গা জুড়ে। আর অদ্ভুত লাল হলুদ নীল ফুলের বিশাল এক ক্যনেভাস আপন মনে সেজে আছে, আমি দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। কোন জায়গায় শুধুই ঘাস দারুণ সবুজ ।
সবুজ ব্যাঙ গুলো চুপচাপ বসে আছে পুকুরের পাশে, শব্দ পেয়েই কেউ কেউ লাফিয়ে পরছে জলে। অসংখ্য ব্যাঙাচি সাঁতার কাটছে জলের কিনারে, লম্বা একখানা লেজ তাদের।
লাল ফুলের গাছটায় গত শীতের আগে হলুদ ফিজেন্টের বাচ্চা দেখেছিলাম। এবার কোন পাখি বাসা বেঁধেছে কিনা দেখার চেষ্টা করছি। সাথে অজস্র ফুলের মেলা আমাকে ঘিরে ফেলেছে। পাখির কলকাকলি, হালকা বাতাসের বয়ে যাওয়া, রোদের আলো আর অদ্ভুত মাতোয়ারা একটা ঘ্রাণ বয়ে যাচ্ছে কেবলই এমন ঐশ্বর্যময় মূহুর্তে প্রবেশ করছি হঠাৎই শুনলাম কিছু একটা পিছনের পাইন গাছের কাছে যেন হাঁচি দিল।
ঠিক দুক্খুরবেলা ভুতে মারে ঠেলা। ক'দিন ধরে ভুতের গল্প চলছে গ্রুপে। আষাঢ় মাস না এলেও ভুতের গল্পে বেশ জমে উঠেছে আডডা। সেই ভুতের গল্পের ভুত কি আমার পিছনে দাঁড়িয়েছে ঠেলা দিয়ে পানিতে ফেলে দিবে।
আবার হাঁচির মতন শব্দ, সাথে যেন দৌড়ে যাওয়ার শব্দ, তবে একদম যে চলে যায়নি সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু গাছের ঘন পাতার আড়ালে কে আছে তাকে দেখতে পাচ্ছি না। দুপা আগাব নাকি পিছাব ভাবছি। দেখার কৌতুহল অদম্য হয়ে উঠছে। তবে একটু সতর্কও হচ্ছি। অনেক সময় ভালুক চলে আসে ব্যাক ইয়ার্ডে খবরে দেখেছি। আমাকে দেখতে বিয়ার এলো নাকি ডিয়ার। আমি আসা করছি, ডিয়ারই, মাই ডিয়ার হয়ে আসা উচিত। তবে সাথে আরো কিছু সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রেকুন, বিভার বা গ্রাহাউন্ডহ্যাগ, সজারুও হতে পারে। রেকুন গুলো বাচ্চা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর বিশ্রি রকম ফোঁসফোঁস করে, আমাকেই আমার ল্যাণ্ড থেকে তাড়াতে আসে।
এই শীত শেষ হওয়ার আগে এবার কতজনাকে যে দেখলাম, আপন মনে আমার উঠানে পায়চারি করে বেড়াচ্ছে তারা। সজারুকে আগে দূরে দূরে দেখেছি, এবার প্রথম, দেখি ঘরের বাইরে প্রতি সন্ধ্যায়। এক দিন রাতের আস্থানা করল আপেল গাছে, পরের দিন উইল গাছের বড় ছড়ানো অংশে বেশ বিছানা পেতে শুলো। আরেকদিন ওয়াল নাট গাছের মগ ডালে চড়ে বসল। একটু জেগে উঠা নতুন পাতাগুলো কচকচ করে খেয়ে ডিনার, ব্রেকফাস্ট সেরে দুপুর নাগাদ শুয়ে ঘুমিয়ে, বৈকালিক ভ্রমণ সেরে সন্ধ্যাবেলা তিনি ফিরে আসেন, নতুন গাছের সন্ধানে। যেন প্রতিদিন নতুন বাড়িতে থাকাই তার পছন্দ। এমনটাই বুঝলাম ব্যবহার দেখে।
আর বুনো তিতিরগুলো দল বেঁধে বাসার চারপাশ ঘিরে, ঘুরে বেড়াচ্ছে বরফের মধ্যে গা মেলে দিয়ে শুয়ে থাকছে। আর কখনো বুনো গাছের শেষ ফল গুলো, খুটেখুটে খাচ্ছে। বরফের উপর ওরা যখন লাইন দিয়ে হাঁটে মনে হয় মরুভূমির উপর কাফেলা চলেছে। তবে মাঝে মধ্যেই বরফের ভিতর পা ঢুকে পরে যায়, সেই হাঁটার ভঙ্গি দেখে আমি একাই হাসি।
পড়শিদের কুকুর দুদিন আমার বাড়িতে রাতের বেলায় চলে এলো। রাতের বেলা কুকুরের আওয়াজ শুনে একটু অবাক হয়েছিলাম। সকালবেলা পড়শি, কুকুর খুঁজতে এসে জানাল। তোমার বাড়িতে কায়টি আছে । আমার কুকুর কায়টি শিকারি। তাই তোমার এখানে প্রতিদিন চলে আসে।
কায়টির ডাক শুনি প্রহরে প্রহরে তারা শিয়ালের মতন ডাকে প্রহর গুনে। কিন্তু ওরা তো থাকে দূরে, গাছের জঙ্গলে। ঘরের কাছে কেন এবার। একদিন ঠিক দেখা গেল পেছনের ভাঙ্গা বার্নের ছাদের উপর রাজকীয় ভাবে তারা চলাফেরা করছে দুজন। বাসা বেঁধেছে বাচ্চা করার তাগিদে। একদিন দলেবলে চলে গেল চারখানা বাচ্চা একটু বড় হওয়ার পর তাদের নিয়ে।
কিন্তু এখন কে হাঁচি দিচ্ছে গাছের আড়ালে ভেবে শেষ করার আগেই আবার হাঁচল। মনে হলো যে আছে সে, আমাকে তড়াতে চাইছে। ভয় দেখাচ্ছে শব্দ করে। ও ঐদিকে বাসা করে আছে সেদিকে যেন আমি না যাই কিন্তু আমি তো থাকে দেখতে চাই।
ঠিক তখনই আমার মোবাইল বেজে উঠল। যে ফোন করেছে তার সাথে কথা বলাটা এই মূহুর্তে খুব জরুরী। কদিন ধরে উপর্যপরি এই ফোনের উপর আছি। যখন আমার থাকার কথা ছিল কাছে। কিন্তু থাকতে না পেরে দূর থেকে সমানে গাইড লাইন, হেল্পলাইন, ডিসিশন মেক, সুবিধা অসুবিধার কথা শেয়ার বন্টন করে যাচ্ছি।
আরেকটু এগিয়ে গিয়ে কে ঘোৎঘোৎ করছে,ভুত নাকি জন্তু, না প্রাণী তাকে দেখার জন্য সময় ব্যয় করার সময় পেলাম না। সাথে সতর্ক থাকা, বলা যায় না যদি কোন বিপদ হয়, এ মূহুর্তে আমি বিপদে যেতে চাই না। তাই ফিরে চলে এলাম ঘরে।
আজ তিনি নিজেই দেখা দিলেন, যিনি হাঁচি না আমাকে ভয় দেখিয়ে তাড়াতে চাইছিলেন। ঘরে থেকেই তাকে দূরে দেখতে পেলাম আজ। দুটো কিউট বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে আর সতর্ক চোখ মাথা ঘুরিয়ে পাহারা দিচ্ছে। প্রাণীদের বাচ্চা কি সুন্দর একা একাই হয়ে যায়। নিজেই নিজের টেইককেয়ার করে। বাচ্চা হওয়ার পর বাচ্চাদেরও সামলায়। খাওয়ায়, পাহারা দিয়ে রাখে। আমি বরং এই কয়দিন আপনাদের ঘরসংসার বাচচা মায়ের ছোটাছুটি উপভোগ করি। দুটো কিউট হরিণের বাচ্চা ঘাসের ভিতরই ঢুকে আছে। ওদের দেখা খুব অল্পই পাচ্ছি ।
এবার সবাই বাচ্চা দেয়ার জন্য আমার বাড়ি পছন্দ করছেন বোঝা যাচ্ছে। আচ্ছা থাকুন আপনমনে, ঘাস পাতা খান। বাচ্চা বড় হলে তাদের নিয়ে আনন্দে চলে যাবেন। শুধু আমার গোলাপ গাছে যেন মায়াবী চোখের দৃষ্টি না পরে সেটাই আশা করছি। গাছগুলোতে কলি এসেছে ফুল আমার পছন্দ। আর গোলাপ গাছ খাওয়া আবার হরিণের খুব পছন্দ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭