গত এক সপ্তাহের আবহাওয়া সতর্কতা ছিল আজ স্নো স্টর্ম হবে ।
দক্ষিণ থেকে এক একটা শহর ডুবিয়ে এগিয়ে আসছিল উত্তরে।
আজ যাওয়ার কথা ছিল শহরে। একটা কাজের মিটিং অনেক দিন থেকে নির্ধারিত হয়ে আছে আজকের তারিখে।
গতরাতে আবহাওয়ার সাবধানতা জেনে ভাবছিলাম পথে নামব কি না।
মিটিং দুপুরে সকালে অবস্থা বুঝে ব্যাবস্থা নেয়া যাবে।
খুব ভোরে জেগে দেখলাম চারপাশ আরও শুভ্রতা ছড়ানো। এমনিতেই গত কদিন রাত না দিন বুঝতে পারি না এত আলোর বিচ্ছুরণ দেখে। চারপাশে মোহময় আলোর ছড়াছড়ি। চাঁদের আলো বরফের মাখামাখি মুগ্ধ আলোর দিন যেন ঘরের বাইরে।বাতি নিভানো ঘরও আলোয় ভরপুর থাকে সারারাত ধরে।
খানিক অপার্থিব সৌন্দর্য উপভোগ করে আবার ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম ভাঙলো ফোন রিং এর শব্দে।
জরুরী মিটিং অন্য দিন নির্ধারণ করে আমাকে সেইফলি ঘরে থাকার অনুরোধ করল।
আজ স্নো খুব পরবে। বলা যায় বছরের প্রথম তুষারপাত। এত তুষার এখনও একদিনও পরে নাই। শহরের সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। অনেকদিন পর বাচ্চাদের স্কুল আজ খোলার কথা ছিল তুষারপাতে জন্য আবার বন্ধ দেয়া হয়েছে। আজ কোন কাজ নেই আজ ঘরে থাকা দিন।
যেন রেইনি ডের ছুটি। তবে রেইনি ডের ভিজে চুপসানোর সাথে তুষারপাতের কোন তুলনা করা ঠিক না। এমন তুষারপাত হলে অচল হয়ে যায় জীবন যাপন। এক হাঁটু সমান বরফ যখন ঘরের সামনে শুয়ে থাকে তা ঠেলে পরিস্কার করে ঘরের বাইরে বের হতে হয়। ঠাণ্ডায় অনেকের হার্ট এ্যাটাকও হয়ে যায়। হাত আঙ্গুল হয়ে যায় অষাঢ়। আর পিছলে পেরে হাত পা কোমর ভাঙ্গাও খুব সাধারন ঘটনা।
তবে এমন বরফ দিনের অপেক্ষায় থাকে অনেকেই। আমিও থাকি সেই চাতক অপেক্ষায় বরফের সাথে খেলাধূলা করার জন্য। সে আলাদা মজা।
ফোনে কথা শেষে বাইরে দেখলাম সকালের হালকা সাদা হওয়া গাছগুলো পুরোই খটখটে আর বরফপাতের কোন চিহ্ন নেই কোথাও। বরং আকাশে মেঘের ঘোমটার ফাঁকে সূর্যের মুখখানী দেখা যাচ্ছে। কোথায় অস্বাভাবিক কোন অবস্থা নেই।
তবে অনলাইনে দেখলাম অনেক বরফের নিচে তলানো শহর। হাইওয়েতে থেমে গেছে বহু গাড়ি। এমন বরফপাতের সাথে দেখা হয়েছিল দু হাজার উনিশে একবার। সে রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে পনের মিনিটের রাস্তা পেরিয়েছিলাম আড়াই ঘন্টায় ।
ঘর থেকে বেরুনো হলো না আমার তবে সারাদিন অপেক্ষা করেও পেলাম না তুমুল বরফপাতের দেখা। বরং সন্ধ্যায় সূর্যটা ডুবে যাওয়ার আগে গায়ে হলুদের আযোজন করল যেন মাঠ জুড়ে। তারপর ছড়াল মেহদি রঙ। অবশেষে রোজগোল্ডর গর্জিয়াস অলঙ্করনে ধরাকে সাজিয়ে সূর্য বিদায় নিল। বরফপাত না পেলাম। রঙের ছটায় মুগ্ধ হয়ে রইলাম।