এ বসন্তের প্রথম ফুল ফুটেছে, ফুলের হাসি মন ভালো করে দেয়। প্রকৃতি আপনমনে সেজে উঠছে। কাল বেশ বাতাস ছিল। অনেক ঠাণ্ডাও তবু অনেকক্ষণ বাগানে কাজ করলাম। ঝরাপাতায় ঢেকে থাকা মাটি সরিয়ে দিলাম। পাতার নিচে চাপা পড়ে থাকা প্রতিবছরে নিজে নিজে জেগে উঠা গাছগুলো এখন দেখলে মনে হবে মরে গেছে। অথচ এরাই নতুন ফুলে পাতায় জেগে উঠবে আর কিছু দিনের মধ্যে।
দু সপ্তাহ আগে বেশ ভালো উত্তাপ ছিল তারপর আবার প্রতিদিন বরফের দেখা পেলাম। পুকুরের গলে যাওয়া বরফ আবার জমাট বেঁধে গেল। গাছগুলো প্রতি সকালে সাদা কম্বল মুড়ি দিয়ে জেগে উঠত। আর কখনো গাছের গায়ে লেগে যেত বরফ আরেকটা পরত হয়ে। উত্তাপের ছোঁয়া পেলে ধীরে ধীরে গলে পরত। বরফের জামার ভাড়ে গাছগুলো নুয়ে পরত। ছোট ছোট ডাল থেকে বড়সর ডালও অনেক সময় ভেঙ্গে পরত। আর ছাদের বরফ গড়িয়ে ঝুলে থাকত সুন্দর বরফের ক্রিস্টাল লাইটের মতন ছাদের চারপাশ ঘিরে।
প্রতিদিন যেন এক নতুন রূপ কখনো ছুটে চলা বরফ জলের নদী তো কখনো স্কেইটিং মাঠ, পা দিলেই কড়মড় করে ভেঙ্গে যায়। কখনো তুমুল বৃষ্টি আবার পরদিন ঝলমলে রােদ। তুমুল হাওয়া। উড়িয়ে নেবে যেন ঘরবাড়ি। দুদিন এমন ভিজে থকথকে ঘরের সমনে পা ডুবে যাচ্ছে যেন নদীর শুকিয়ে যাওয়া জলের মাঝে পা দিয়েছি। সবার গাড়ি আটকে যেতে থাকল। ঠেলাঠেলি করে উঠাতে হলো কাদায় দেবে যাওয়া চাকা। কাদা ছিটকে মাখামাখি সব জায়গায়। হাসাহাসি আর ঝামেলার জন্য সিমেন্ট, পাথর ঢালার পরিকল্পনা। তবে থাকে না কিছু শীত শেষে আবার সাজাতে হয় প্রতি বছর। বরফ সাফ করতে করতে উঠে যায় সব। রাস্তা গুলো যেমন এখন গর্ত ভরা।
তার মাঝে গত সপ্তায় হুট করে বেরিয়ে পরলাম পরিবারের সবাই মিলে ঘুরতে। উদ্দেশ্য বিহীন ঠিকানা বিহীন পথ চলায় এক সময় হাজির হলাম এক পাহাড়ি শহরে। ওখানে বরফের ছড়াছড়ি আরো বেশি কারণ সেখানে তো শীতকালে বরফের খেলাগুলো হয়। এলাকাটার পরিবেশই বেশি বরফ পরার আর ঘন হয়ে জমে থাকার। দিনটা বেশ উষ্ণ ছিল কিন্তু বেশ শীত পরে গেল আমরা যেতে যেতে। গোধূলির আলো ম্লান হয়ে ঝুপ করে নিবে গেল পাহাড়ের আড়ালে। রির্সোট শহর বেশ জমজমাট পর্যটকের ভীড়ে। খাবার দাবার বিভিন্ন দেশের রেস্টুরেন্ট চারপাশে। জমাট গান বাজছে। টুনি লাইটের রঙিন আলোয় সজ্জিত । ভালোলাগল অনেক দিন পর বেরিয়ে পরে। ম্যাক্সিকান ফুডের আনন্দ নিলাম আমরা।
আরো অনেকটা সময় আমরা ঘোরা ফেরা করতে চাইলাম। কিন্তু খুব ছোট একটি মানুষ আমাদের সাথে ওর এত ঠাণ্ডা বাতাস সহ্য হচ্ছে না ওর যদিও বড় বড় চোখ মেলে খুব উপভোগ করছে সে চারপশের নতুন পরিবেশ। তাই তাড়াতাড়ি ফিরার পথ ধরলাম।
অন্ধকার তখন বেশ গাড়। গ্রামীন পথগুলো ডুবে আছে নির্জনতায় বাতিহীন প্রকৃতির সমারোহে। আকাশ জুড়ে অসংখ্য তারা জেগেছে। দূরে দূরে বনভূমির সারি। দিনের বেলা গেলাম এক রকম দেখতে দেখতে, রাতের বেলা ফিরলাম একই পরিবেশের ভিন্ন রূপ উপভোগ করতে করতে।
আজ আকাশটা পাখি আকাশ হয়ে আছে। অসংখ্য পাখি ডানা মেলে উড়ছে ঢেউয়ের মতন। বাড়ির উপর পাখির ছাদ যেন।
বাগানে মুখ তুলেছে নার্সিসাস, টিউলিপ, ভুঁইচাপা, হার্বগুলো আপনমনে। ম্যাগনেলিয়া, চেরি ফার্টিসার ডালগুলো কলিতে ভরে উঠছে । ঘরে থাকা সবজিরা আপন মনে গজিয়ে যাচ্ছে। সময়টা প্রজননের। পাখিরা যেমন আনন্দে নাচছে। ঘুমিয়ে থাকা কীট পতঙ্গ বেরিয়ে আসছে গর্ত থেকে। দেশ থেকে নিয়ে আসা শাপলার প্যাকেট খুলে পেলাম গজিয়েছে লাল শাপলার লতা শিকড় থেকে। আহা যদি বাঁচে। পুকুর ভর্তি লাল শাপলা ফোটে কিযে ভালো লাগবে আমার। সাদা শাপলার পাশাপাশি দেশের লাল শাপলা ভিন্ন পরিবেশে।
আমার ইচ্ছে করছে এখনই গার্ডেন টেবিল চেয়ার সাজিয়ে বাইরে বসে থাকি। কিন্তু অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েকটা দিন। এপ্রিল শাওয়ার ব্রিং মে ফ্লাওয়ার। এপ্রিলের বৃষ্টি শেষ হওয়া পর্যন্ত তাই কখনো বাইরে গিয়ে হাঁটাহাটিঁ করে কাটাতে হবে। বাগান পরিচর্চা করে গাছগুলোকে ঠিক মতন বেড়ে উঠার সুযোগ করে দিতে হবে। মে মাস সব ব্লুম রাঙিয়ে দিবে চারপাশ তার আয়োজন চলছে প্রকৃতির মাঝে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ১:২১