হাইওয়ে পেরুতে নানা রকম সাইন দেখতে পাই। বেশির ভাগ সাইনই সামনে রাস্তা কেমন। স্টপ করতে হবে। বা পাশে লুকানো রাস্তা আছে যেখান থেকে হঠাৎ অদেখায় গাড়ি চলে আসতে পারে। এছাড়া হরিণের সাইন দেয়া থাকে কোন কোন এলাকায়, কোথাও মুসের সাইনও থাকে। তারমানে এসব এলাকায় সাবধানে গাড়ি চালাত হবে হরিণ বা মুসের সাথে রাস্তায় দেখা হয়ে যেতে পারে। হরিণের সাথে প্রায় দেখা হয়। একবার মুসের সাথেও দেখা হয়ে ছিল। তবে ভাগ্য ভালো মুস রাস্তার মাঝ বরারবর দৌড়ায় নাই বা আমার গাড়িকে তাড়া করে আসে নাই। বরং যেদিক থেকে আসছিল সেদিকেই ফিরে চলে গেছে। মুসের সাথে ধাক্কা লেগে গেলে গাড়ি এক্সিডেন্টের সম্ভাবনা শতভাগ।
এসব সাইন ছাড়া মাঝে মধ্যে কচ্ছপের সাইন দেখেছি। এবং হেসেছি কচ্ছপ রাস্তা পার হয় নাকি? তবে কিছুদিন আগে দুবার কচ্ছপের সাথে রাস্তায় দেখা হলো। হাসাটা যে বোকামি ছিল বুঝতে পারলাম। অর্থ ব্যায় করে এ ধরনের সাইন দিয়ে রাখা হয়েছে ঘটনা ঘটে বলেই, শুধু শুধু না। এবং ভালোলাগল এত যত্নশীল প্রাণীর প্রতি এখানে মানুষ। রাস্তায় চলছো প্রাণীর দিকে খেয়াল রেখো। তাদেরও বাঁচার অধিকার আছে।
কিছুদিন আগে বাড়ির কাছেই একটা রাস্তা দিয়ে আসছিলাম। সেখানে পেলাম কচ্ছপ ধীরে ধীরে চলছেন রাস্তার মাঝ বরাবর। তাকে দুচাকার মাঝে রেখে আস্তে করে পেরিয়ে এলাম যাতে তার গায়ে না লাগে সে ভাবে।
দুদিন আগে আবার যাচ্ছিলাম এক জায়গায় বেশ তাড়া ছিল। রাস্তা বেশ ফাঁকা। হঠাৎ দেখলাম সামনে থেকে আসা, একটা গাড়ি লাইট ফ্ল্যাস করে কিছু সিগন্যাল দিচ্ছে আমাকে। রাস্তায় আর কোন গাড়ি ছিল না। স্বাভাবিক ভাবে একটু সতর্ক হলাম।
একটু এগিয়ে যেতেই দেখতে পেলাম রাস্তার মাঝের হলুদ লাইন জুড়ে কিছু একটা পরে আছে যেন। সাবধানে তাকে কাটিয়ে পেরিয়ে যেতে যেতে দেখলাম বিশাল আকারের একটা সবুজ রঙের কচ্ছপ। যার বয়স শতবছর হবে। এত বড় কচ্ছপ সমুদ্রের নীচে দেখেছি ডাঙ্গায় এই প্রথম দেখলাম।
তাড়া ছিল তাই চলে এসেছিলাম দ্রুত, পরে মনে হলো থেমে এই দূর্লভ দৃশ্যটার ছবি তুলে রাখা রাখা দরকার ছিল। এখন তো সবাই সব কিছুর ছবি তুলে। আমারই শুধু সময় মতন মনে পরল না।
এমন সবুজ রঙের কচ্ছপ আগে কখনো দেখিনি।
আমার বাড়ির কচ্ছপগুলো হলুদ খয়েরি ডোরা কাটা। গ্রীষ্মের দুপুরে তারা ডাকাডাকি করে। কচ্ছপ যে শব্দ করে, ডাকাডাকি করে, আগে জানতাম না। তবে এখন কচ্ছপের ডাকাডাকি বেশ পরিচিত আমার কাছে।
এক শরতে দেখেছি পুকুরপাড়ে একটা কচ্ছপ কি ভাবে যেন উল্টে গেছে সে কিছুতেই সোজা হতে পারছে না। তাকে সোজা করে দিয়েছিলাম।
কাল যখন হাইওয়ে টেন থেকে ফোর ও ওয়ানে উঠলাম হঠাৎ সব গাড়ি ধীরে চলা শুরু করল। হাজার হাজার গাড়ির মাঝে কিভাবে যে দল ছুট হয়ে গীজটা ঢুকে পরেছে। কিন্তু প্রত্যেক চালক তাকে বাঁচিয়ে তাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে কেউ চাইছে না এতটুকু আঘাত লাগুক হাঁসটার গায়ে। সে তার পথে চলে যাক। মানুষ প্রাণীরও যত্ন নেয় রাস্তায় চলার পথে সহজে কেউ তাদের আঘাত করে না। আমিও চলে এলাম হাঁসটা পাশ কাটিয়ে ধীর লয়ে।
অথচ বাংলাদেশে একটা শিশুর জন্ম হয়ে গেলো ট্রাকের ধাক্কায় রাস্তার উপরে আর সুস্থ স্বাভাবিক মায়ের পেটে থাকা শিশুটি ডান হাতটা ভাঙ্গার সাথে জন্মের সাথে হারিয়ে ফেলল পুরো পরিবার। অনাথ এতিম হয়ে এই পৃথিবীতে আসল। একজন অদক্ষ, অবিবেচক চালকের জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:২১