মেঘ, কুয়াশার ঘন আস্তরণে ঢাকা দিন, এমনদিন যেন বিষন্নতায় জড়িয়ে ধরে। মন খারাপের কথা না ভেবে যদি সুন্দর করে ভাবি রহস্যময় আধো আলো আঁধারীর খেলা চলছে সামনের দৃশ্য জুড়ে। যেন আগামী তিনশ পয়সট্টি দিনের নানা রকম বৈচিত্রের চিত্র দেখাচ্ছে দিনটি। তাহলে মন খারাপ হয় না বরং রহস্য উন্মোচনের ইচ্ছা জাগে। কৌতুহলি হয়ে জানতে ইচ্ছা করে কি আছে সামনে মেঘ, কুয়াশার গভীরে।
রূপালী পর্দার রহস্যময় ঘেরা টোপ উন্মোচনের ইচ্ছা জাগে। দূরে দূরে সারি সারি গাছের বন, ফাঁকা মাঠের ভিতর ঘরবাড়িগুলো রঙিন আলোর সাজে মনমুগ্ধকর, মায়াবী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কখনো একটা দুটো গাড়ির হেডলাইটের আলো দেখা যায় কুয়াশার আভরণের ভিতর দিয়ে। হঠাৎ কিছু বরফের বলও গড়িয়ে পরে। খানিক সময় সাদা হয়ে যায় জমিন। আবার বৃষ্টির ফোঁটা এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় বরফের আস্তরণ। তুমুল বাতাস নেই ধীর শান্ত। বেশ উষ্ণ আবহাওয়া। আর অদ্ভুত ভাবে শীতের মধ্য গগনে এই উষ্ণতা একটি অদ্ভুত আচরণ প্রকৃতির। নতুন বৎসর শুরুর এক সপ্তাহ বেশ উষ্ণতায় কাটবে। গত পঁচাত্তর বছরে এমনটি হয়নি। শীতের সময়ে এতটা উষ্ণতা।
গতকাল বছর শেষের দিন কেটেছে অনেক ব্যস্ততায়। সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা ঘরবাড়ি যেন নতুনের সাথে দেখা হয় সুন্দরের সাথে। সাথে ছিল অনেকরকম খাবার তৈরির আয়োজন যেন ইচ্ছে মতন খাবার দাবার হাতের কাছেই থাকে বছর শুরুর দিনে। কোন কিছুর জন্য যেন আফসোস না হয়। ঘরে তৈরি সুস্বাদু খাবার আর তা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা নিজের জন্য, পরিবারের জন্য।
এমনটা হয় তো সবাই ভবে না। নতুন বছর শুরু করার জন্য বন্ধু বা অনেক মানুষের সাথে শ্যাম্প্ইন খোলা হৈ চৈ মাতাল আনন্দে কাটিয়ে মাঝ দুপুর পর্যন্ত ঘুম। এমনটা অনেক করেছি কখনো এ জীবনে। আতশবাজী দেখতে যাওয়া। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, পরিবার মিলে হৈ চৈ। বাঙালীদের বিদেশী স্টাইলে নাচাগানা দেখে মজা পেয়েছি অনেক ।
তবে এখন নিজের মতন প্রার্থণায় সুস্থতার কামনা করে ধীর স্থির কিছু কাজ করে কাটাতে চাই বছরের প্রথম দিন । যেন সারা বছর সুন্দর সুস্থির এবং আনন্দের হয় প্রথম দিনের মতন। যেমন ছোট বেলায় শিখে ছিলাম সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি। বছরের প্রথম দিনটিও তো সকাল বছরের।
বিশ্ব জুড়ে সবাই ইংরেজি বৎসর ক্যালেন্ডার অনুসরন করে, নিজস্ব বর্ষপুঞ্জি থাকার পরও বিভিন্ন জাতি গুষ্টি। আর্ন্তজাতিক জীবন যাপন এখন আমাদের। তাই এর সাথে সংযোগ স্থাপন করতেই হয়।
একটা প্রশ্ন জাগে আমার মনে, মাঝ রাতে কেন নতুন বৎসর শুরু হয় ইংরেজি বৎসরের। কেউ সন্ধ্যা বেলায় ঘুমিয়ে থাকে, ঘুমের মাঝে নতুন বৎসর শুরু হয়ে যায়। কেউ মাঝরাত পর্যন্ত জেগে থেকে হৈ চৈ আনন্দ করে সকালে ঘুমিয়ে নতুন বছর শুরু করে।
চন্দ্র বৎসর যে ভাবে শুরু হয়, সন্ধ্যাবেলা চাঁদ উঠার সাথে তাতেও আমাকে তেমন ভালোলাগায় জড়ায় না।
আমার সূর্য বৎসর যা বাঙালিরা উজ্জাপন করে সূর্যজাগার সাথে উঠে নতুন বস্ত্র পরে প্রার্থণা সঙ্গীত গেয়ে ভালো খাবার দাবার খেয়ে মেলায় গিয়ে ঘুরে ফিরে শখের জিনিস কিনে। মিঠাই, মন্ডা খেয়ে। চড়কিতে চড়ে। পাতার বাঁশি, মাটির পুতুল কিনে হালখাতার নতুন খাতা খুলে। বিকেলে নানা খেলার প্রতিযোগীতা। এই অতি সাধারন আনন্দ দিনভর করার মজাটাই বেশি ভালোলাগে।
যদিও সব কিছুতেই ফিউশন মিশে গেছে। নববর্ষের সাধারন উজ্জাপন তেমন নাই আর।
আতশবাজির ঝলকানী বাজে রাতদুপুরে পাশ্চাত্য অনুকরণে।
পাশ্চাত্য নিয়মে খোলা হয় শ্যাম্পেনও। তবে পাশ্চাত্য নিয়মে তাদের মতন শহরের আয়োজনে বিশেষ বিশেষ জায়গায় হয় আতশবাজী গণহারে সারা শহর জুড়ে আতশবাজী হয় না। আর ঘরবাড়ি গুলোও সাউন্ড প্রুফ। শব্দ দুষণে কারো ঘুম ভাঙ্গে না। শিশুরা চমকে উঠে ভয় পায় না। যাদের ইচ্ছা হয় দেখে, আনন্দ করে, যাদের ইচ্ছা হয় না তাদের দেখতে হয় না।
সময়ের হিসাবে আমি এখনও বৎসর শুরুর এক তারিখে আছি থাকব আরো অনেক ঘন্টা। অনেকে হয় তো এই সময়ে দ্বিতীয় দিনে ঢুকে পরছেন। তবে এটা আমার বৎসর শুরুর প্রথম তারিখের প্রথম পোষ্ট।
মানুষের জীবন সুন্দর হোক শুভেচ্ছা বন্ধুদের।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৫