somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রোকসানা লেইস
স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

বদলে যাচ্ছে চেনা শহর

২৩ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন আগে ডাউনটাউনে গিয়েছিলাম। দুটো কাজ ছিল। কাজ শেষে একজনের সাথে দেখা করে তাকে নিয়ে অন্য একটা জায়গায় যাবো, কিছু আনন্দ সময় কাটাব। এমন ছিল পরিকল্পনা। বহুদিন পর পরিচিত একজন মানুষের সাথে কিছু সময় কাটাব।
কিন্তু ইয়াং স্ট্রিটে ঢুকার পর মনে হলে আমি একটা দম বন্ধ গুদামের মধ্যে আটকে গেছি। বাঁক নেয়ার রাস্তাটা অল্প কিছু দূরে। কিন্তু গাদাগাদি করে আর সব গাড়ির সাথে আমি চুপচাপ বসে আছি ঘন্টা ধরে। এই নিচ্ছিদ্র রাস্তার অবস্থার মাঝে তাও ঢুকে পরছে ইর্মাজেন্সি ভিয়াকল গুলো একটু পরপর । ডাউনটাউনের ছোট ছোট ব্লকের এমাথা ওমাথায় যেন ঝামেলা লেগে গেছে, এই মূহুর্তে যখন হাজার হাজার মানুষ সারাদিনের কাজের পর,বাড়ি ফিরার জন্য নেমেছে পথে।
প্রতি পাঁচ দশ মিনিট পরে হয়তো আধা ইঞ্চি আগানো যাচ্ছে।
কেন রাস্তা এমন ব্যাস্ত ছিল সেদিন, নাকি প্রতিদিনই এখন এমন থাকে জানি না। তবে আমার অভিজ্ঞতাটা মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের কোন যানজটে যেন বসে আছি। যেখানে বাড়ি দেখা যাচ্ছে অথচ পৌঁছাতে পারছি না ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে।
এখানে অবশ্য এই গাদাগাদি ভীড়ের ভিতরও জরুরী যানবাহন যাওয়ার জন্য রাস্তা ছেড়ে দিচ্ছে সবাই শব্দ শোনার সাথে সাথে। এটাই নিয়ম। হুমড়াচোমড়া কেউ হলেও তাকে পাশে সরে গিয়ে জরুরী যানবাহনের যাওয়ার সুবিধা দিতে হবে সবার আগে।
জরুরী অবস্থা মানে জরুরী অবস্থা, সে যেই হোক, যার জন্যই এই গাড়ি যাচ্ছে তার কাছে পৌঁছানাো জরুরী এই অবস্থাকে সম্মান করতে হবে। যেতে দিতে হবে জরুরী বাহনকে সবার আগে।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছর দেখেছি। সাইরেন বাজিয়ে জরুরী গাড়ি চলছে পিছনে অনেক্ষকণ ধরে অথচ কোন গাড়ি পাশে সরে যাচ্ছে না। ড্রাইভারকে সরতে বললে সে হাসে। এসব জরুরী গাড়ি না। সবাই এখন এ্যাম্বুলেস ভাড়া করে, তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য।
এ্যাম্বুলেস ভাড়ায় খাটে অথবা এ্যাম্বুলেসের ভিতরে কে আছে সেটা না জেনেই, একটা ধারনার বসে তারা পথ ছাড়ে না।
পুলিশের গাড়িকেও আটকে রাখতে দেখলাম।
এখানেও দেখি পুলিশ হঠাৎ আলো জ্বালিয়ে বা সিগন্যাল দিয়ে দ্রুত রাস্তা পার হয়ে যায় অনেকক্ষণ হয়তো আস্তে ধীরেই পাশে পাশে চলছিল। এই দ্রুত যাওয়ার জন্য তাদের কাছে নিশ্চয় কোন খবর এসেছে। তাদের যাওয়ার পথ দ্রুত সবাই ছেড়ে দেয়। অথচ বাংলাদেশের চালকরা পুলিশকেও আটকে রাখে দ্রুত যেতে দেয় না।

এখন ডাউনটাউনে সব সময়ই একটা না একটা ঘটনা লেগে থাকে অবশ্য। সাবওয়েতে হামলা, ধাক্কা দিয়ে রেল লাইনে ফেলে দেওয়া, ছুড়ি বসিয়ে দেওয়া বা গুলি করা, কাউকে আক্রমণ করে আহত, নিহত করা যেন নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা, ডাল ভাত হয়ে গেছে। দিনে কয়েকটা এমন ঘটনা ঘটেছে, জানা যায় প্রভিন্স জুড়ে। আগে বছরে দু একটা এমন ঘটনা ঘটত না। আরো আছে হিট এণ্ড রান। নিয়ম হলো কাউকে ধাক্কা দিলে ড্রাইভার থেমে গিয়ে তার খবর নিবে। ইমারজেন্সিতে খবর দিবে। অথচ ড্রাইভারের মানসিকতা এখন পালিয়ে যাওয়ার যদিও এখানের উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ঠিক তাদের খুঁজে বের করে ফেলে তারপরও এই অসাধু, অনৈতিক মনোভাবের মানুষদের সাথে রাস্তায় চলতে হয় এখন। দূর্ঘটনা ঘটতেই পারে কিন্তু দূর্ঘটনার দায় এড়ানোর জন্য পালিয়ে যাওয়া বড় অপরাধ। কদিন আগে শুনলাম হাঁটতে থাকা পথচারীর গায়ে সুঁচ ঢুকিয়ে দিয়েছে একজন। যাকে সুঁচ দিয়ে খোঁচা দেয়া হয়েছে সে বুঝতে পারেনি তবে অন্য একজন দেখেছে। তার কথা শোনে সে জরুরী বিভাগে যায়। সেখানে বিষাক্ত কিছু থেকে এইডস ভাইরাস পর্যন্ত কিছু তার শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে কিনা তার সব রকম পরীক্ষা করা হয়। অদ্ভুত মানুষের এই হেইট এণ্ড ক্রাইম মানসিকতা অসম্ভব ভাবে বেড়ে গেছে। পরিচিত বা যার সাথে শত্রুতা তাকে নয় যে কাউকে আক্রমণ করা হচ্ছে।
বিশেষ পরিকল্পনার হত্যাগুলোও খুব কম হতো। তবে যেগুলো হতো তা ছিল ভয়াবহ রকমের নৃশংস।
কিন্তু এখন যেন কথার আগে মানুষকে মেরে ফেলার মানসিকতা পেয়ে বসেছে।
কিছুদিন আগে তের থেকে ষোল বছরের কয়েকটি মেয়ে মিলে একজন হোমলেস মানুষকে চাকু দিয়ে মেরে ফেলেছে। এরা কেন চাকু নিয়ে ঘুরছিল, আর হোমলেস মানুষটা এদের কি ক্ষতি করল, বুঝলাম না। এই মানুষটি নাকি ভালো ছিল বিনয়ী এবং অন্যদের সাহায্য সহযোগীতা করত।
অনেক ভীতিকর ঘটনা ঘটে এখন। হোমলেস মানুষ কাউকে আক্রমণ করেছে এমন শোনা যায় না। তবে পাগলের মতন প্রলাপ বকে অনেক সময়। বছর কয়েক আগে মাঝরাতে কাজ সেরে বাড়ি ফিরার পথে একা যখন সাবওতে নামছিলাম । হঠাৎ দূর থেকে চিৎকার করতে শুনেছিলাম পুসি পুসি পুসি।
লোকটা অনেক দূরে ছিল আমি ভয় পেয়েছিলাম তাড়াতাড়ি সাবওয়ের টিকেট কাউন্টার পেরিয়ে ভিতরে ঢুকে পরেছিলাম।
যদিও মানুষ ছিল না তবে নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম ভিতরে আসতে পারবে না। তবে সে আমাকে ধাওয়া করছিল না। সে নিজের মতনই রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করছিল।
সাবওয়ে চড়া বাদ দিয়েছি অনেক দিন। প্রথম তো করোনার জন্য এখন নিরাপত্তার জন্য। অথচ এক সময় সাবওয়ে চড়ে অকারণ ঘুরে বেড়াতাম। শহর দেখতাম চিনতাম। ইচ্ছে হলে এক একটা স্টেশনে নেমে যেতাম, এলাকার পরিবেশের সাথে পরিচিত হতাম। এত নিরাপত্তা কোথাও কখনো ভয় লাগেনি, খারাপ কিছু মনে হয়নি।
সময় কেমন যেন বদলে দিচেছ সুস্থতা নিরাপত্তা সব কিছু।
ডাউন টাউনের একটা সৌন্দর্য ছিল বড় শহরের মার্জিত রুচির নতুন সুন্দর ডিজাইনের নতুন বিল্ডিংগুলোর সাথে হ্যারিটেজ বিল্ডিং গুলো ফাঁকা ফাঁকা দূরত্ব রেখে সুন্দর ভাবে পাশাপাশি অবস্থানে ছিল। অথচ এখন ঠেলে ঠেলে ভিতরে বস্তির মতন দালন দাঁড়িয়ে যাচ্ছে যাদের আলাদা ভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই । ঐতিহাসিক এবং আধুনিক স্থাপত্যর পাথ্যর্ক দেখার মতন কোন শ্বাস ফেলানোর জায়গা নেই।
শহরের পরিকল্পনা অনুমোদনকারীরদের নিকৃষ্ট ভাবনা চিন্তা একটা সুন্দর শহরকে দিন দিন কাটখোট্ট কুৎসিত দর্শনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে ব্যবসায়ী মনোভাব, সেখানে কোন সৌন্দর্য থাকতে পারে না জনসাধারনের জন্য।
পার্কগুলো আগের মতন সেজে উঠেনা। জলধারা বয়ে যায় না। এখন শহরের সৌন্দর্য দেখারও সুযোগ হয় না কেবল বিশাল বড় বড় আকাশ চুম্বি অট্টালিকা উঠছে সাথে অনেক বড় বড় ক্রেইন আর কন্সট্রাকশনের জন্য রাখা মালামাল আর খানা খন্দক চারপাশের সৌন্দর্য প্রায় সারা বছর জুড়ে দখল করে থাকে। এটা সুন্দর দালানের ছবি তুলতে গেলে দুটো ক্রেনের ছবিও ঢুকে যায় তার মাঝে।
এমন না যে জায়গার অভাব, অথচ ক্রমাগত ঠেলে ঠেলে গাদাগাদি করে অট্টালিকা বানানো চলছে। সাথে দখল করে নেয়া হচ্ছে ফসলী জমি এবং সবুজ রক্ষনাবেক্ষণের জায়গা গুলোও। প্রাণীগুলো এখন আর গ্রামে গ্রীন বেল্টে থাকার সুযোগ পাচ্ছে না। এর মধ্যে কয়েকজন বললেন রাতে কায়টি, দেখেছেন শহরের পার্কিং লটে। ওরা নিজেদের থাকার জায়গা পাচ্ছে না, বন জঙ্গল মাঠ কন্সট্রাকশনের লোকজন দখল করে নিচ্ছে দিনদিন।
পালিয়ে কোথায় যাবে তাই ঘরবাড়ি পাকিং লটের দিকে চলে যাচ্ছে। এক সময় হয় তো বিলোপ হয়ে যাবে প্রাণীগুলো মানুষের তাড়া খেয়ে।
এত ঘরবাড়ির মানুষ যখন রাস্তায় নামছে রাস্তা দখল হয়ে যাচ্ছে আগের চেয়ে বেশি। তাই দীর্ঘ যানযট লেগে থাকছে। রাস্তা তো আগের মতনই আছে, বাড়ে নাই। যতই মানুষকে বলা হোক গাড়ি ব্যবহার না করে পাবলিক যানবাহন ব্যবহার করার জন্য সেটা হচ্ছে না মানুষ নিজের নিরাপত্তাও চিন্তা করে এখন।
মাত্র পাঁচ সাত মিনিটের ড্রাইভ সেদিন আমার দুটো ঘন্টা কেড়ে নিয়েছিল।
আমরা জনগন সব দিক থেকে সব সময় চাপে থাকি।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১২:৩৯
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×