কয়েকমাস আগে এখানে পৌর নির্বাচনী হলো। নির্বাচনের দিনের, মাস দুই আগে একটা কার্ড আসল মেইলে। সেই কার্ডে সমস্ত নির্দেশনা দেওয়া আছে কোন কেন্দ্রে কবে ভোট দিতে যেতে হবে। ভোট দিতে যাওয়ার জন্য নিজের একটা সরকার প্রদত্ত আইডি সাথে নিয়ে যেতে হবে। কোন সময় থেকে কোন সময়ের মধ্যে ভোট গ্রহণ চলবে।
এছাড়া চুড়ান্ত ভোটের আগের দশ দিনের মধ্যে অন লাইনে ভোট দেয়া যাবে। এই সমস্ত নির্দেশনা নির্বাচন অফিস থেকে ভোটারদের বাড়িতে ভোটারদের প্রত্যেকের নামে, মেইল করে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এবং সময়টা হিসাব করলে দেখা যায় কত আগে থেকে তাদের প্রস্তুতি চলছে।
এই সব কাজ নির্বাচনী আফিস তো শেষ করল। কিন্তু আমি আছি শূন্যতায়।
কারা যে ভোটে প্রতিযোগীতা করছে কি তাদের নাম পরিচয় কিছুই জানি না।
ভোটের আগে হয় তো তারা বাড়ি আসবে আনন্ত একবার ভোট চাইতে তখন জানা পরিচয় হয়ে যাবে। কিন্তু সপ্তাহ খানেক বাকি থাকতেও দেখলাম কেউ আসল না ভোট চাইতে। রাস্তার পাশে একটা চেহারা সম্বলিত পোষ্টার থাকে তাও দেখলাম না কোথাও।
কারা কি নাম কি দল, কি তাদের কার্যক্রম কিছুই জানা হলো না।
ভোট কাকে দিব। আর কিছু না জেনে ভোট দেওয়াটাও সমীচীন হবে না। তবে কি ভোট দিব না প্রার্থীদের জানিনা বলে।
নিজের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দেওয়াটা জরুরী মনে করি। নগর উন্নয়নের কাজ গুলো কারা কিভাবে করবে, প্রার্থীর কার্যক্রম এবং যদি তারা দল করে তবে দলের নিয়ম নীতির উপর অনেকটা নির্ভর করে। তাই মানুষটাকে জানা দরকর। পৌর নির্বাচনে মেয়র বাদে বেশ কয়েকজন কমিশনারও নির্বাচিত করতে হয় সাথে স্কুল বোর্ডের সদ্স্যও যে নাকি পড়ালেখাসহ বাচ্চাদের খেলা, এবং অন্যান্য সুবিধা আদায়ে সচেষ্ট থাকবে। যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত না হলে সঠিক ভাবে কাজ করতে পারবে না। নগর উন্নয়ন বা বাচ্চাদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করার জন্য সব জায়গায় যোগ্য প্রাথী বাছাই করা খুব জরুরী।
কি একটা দেশ ভোটে দাঁড়াবে অথচ নিজেদের প্রচার প্রচারণা করবে না এ কেমন কথা। সাতটা উইক এ্যাণ্ড চলে গেলো ভেবেছিলাম কোন এক সপ্তাহান্তে পৌর এলাকায় গিয়ে হয় তো জেনে আসব । হয়তো প্রার্থীরা নিজেদের প্রচার পরিচিতির জন্য জনগণের সাথে কথা টথা বলে। অথচ নিজের কাজের ব্যাস্ততায় সময় কোন দিক দিয়ে যে চলে গেলো, সময়ই করতে পারলাম না। পাঁচ দিনের ব্যাস্ত সময়ের পর বাকি দুইদিন নিজেদের ঘরে কত কাজ। আনন্দ, আহ্লাদ অনুষ্ঠান পরিবার পরিজন নিয়ে ব্যাস্ততা, নিজের পছন্দের অনুষ্ঠানাদি বন্ধুবান্ধবের সাথে সময় কাটানো। এত্ত সবের মধ্যে সময় বের করা কঠিন।
নিজের পছন্দের আঁকা লেখার কাজগুলো করার জন্য রাত জেগে সময় করতে হয়। এত্ত কিছুর ভিতর মিটিং মিছিল দেখতে যাওয়ার সময় কই।
এদেশের মানুষকে এজন্যই মিটিং মিছিল করতে দেখি না তেমন। মাঝে মধ্যে দেখি কিছু প্রতিবাদ হচ্ছে। প্লে কার্ডে নানা কথা লিখে একটা জায়গায় অল্প কিছু মানুষ গোল হয়ে হাঁটাহাঁটি করে দেখি কখনো। সেটা যখন নিজের কাজের উপর ঝামেলা আসে বা নিজের পেটে লাথী পরে। উপায় না পেয়ে মানুষ জড়ো হয় এক সাথে প্রতিবাদ করতে। এছাড়া নানা রকম প্যারেড খেলা ধূলা কনসার্ট, বিভিন্ন দেশের মানুষও জড়ো হয় তাদের দেশের শোকে দুঃখে আনন্দে, ভালোলাগায়, বিপদে। দেশীও এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে দেখা যায় মানুষের ভীড় । মানুষের পছন্দ ভিন্ন সবাই সব কিছুতে যায় না। পছন্দ অনুযায়ী মানুষের সারী দেখা যায় নানা ভীড়ে।
ভাবছিলাম, রাস্তার উপরের পোষ্টার নাই কেন এবার, এক সময় মনে পরল ওটা আসলে জাতীয় নির্বাচনের সময় হয়। পৌর এলাকার জন্য ব্যয়বহুল কিছু থাকে না। আরো মনে পরল। আমার যে প্রতিবেশী সাংবাদিকের মতন নগরের সব খবর আমাকে এতদিন দিয়ে আসছিলেন গত দুই বছর তিনি দূরে চলে যাওয়ার জন্য আগের মতন আর আমাদের দেখা হচ্ছে না, শহরের কোথায় কি ঘটছে, সব রকমের খবর পাওয়া থেকে আমি বঞ্চিত হচ্ছি প্রতিদিন। আমার প্রতিবেশীর থেকেই চাক্ষুষ সব খবর এতদিন পেয়ে এসেছি। কিছু মানুষ যোগাযোগে খুব পারমাঙ্গ।
শহর এলাকায় বাড়ি বাড়ি একা প্রার্থীরা গিয়ে নিজে নির্বাচনে একজন প্রার্থী জনগণের সেবা করতে চান তাকে যেন সে সুযোগ দেয়া হয় তা বলে আসেন। তাদের সাথে গাদা গাদা লোক থাকে না। তারা নিজেরাই নিজেদের প্রচার দেন। প্রায় সময় বাড়ির মানুষের সাথে তাদের দেখাও হয় না। কারণ বাড়ির মানুষ কাজে থাকেন। তখন নিজের একটা লিফল্যাট হয়তো দরজায় বা মেইল বক্সে রেখে আসেন, এসেছিলেন জানাতে। পৌর নির্বাচনের জন্য ছোট শহরে আসলে কেউ বাড়ি বাড়ি আসে না। এতদিন আমার প্রতিবেশী সাংবাদিকের থেকেই খবর পেতাম এবার সেটা মিস করছি ভীষণ ভাবে।
আমাদের দেশে তো কারো কথা না শুনতে চাইলেও না জেনে, না শোনে উপায় নাই। ব্যানার ফ্যাস্টুন, পোষ্টার মাইকিং, মিছিল মিটিং, হৈ চৈ মারামারি, খুম জখম, আনন্দ দুঃখ। কত রকমের লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে যায। কিছু শোনার ইচ্ছা না থাকলেও কর্ণকুহরে প্রবেশ করবেই খবর। বড় ঘটনাগুলো টেলিভিশন, পত্রিকার পাতায় আসে আর এখন তো সোশ্যাল মিডিয়াও ব্যাস্ত হয়ে যায় পক্ষে বিপক্ষের খবরে। চোখে না পরে উপায় নাই।
ভোটের প্রচার দেখেছিলাম জাপানেও। গাড়িতে রঙিন পোষ্টার লাগিয়ে কয়েকজন মাইকে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে ধীর গতিতে। পাশ দিয়ে যেতে আরিগাতো আরিগাতো বলে। জিজ্ঞেস করে জানলাম ভোটের প্রচার চলছে। অনেক সভ্য দেশে সভ্যভাবেই প্রচার হচ্ছে। আমাদের দেশে তো উৎসব আনন্দ লেগে যায়। সাথে বিদ্ধেষ বিরোধীতায় কত প্রাণ হয় বলিদান।
চায়ের কাপে ঝড় উঠে।
এই সব দেশে কান ফাটানো মাইক বাজিয়ে হট্টোগোল করা কখনো দেখলাম না।
আর এখানে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগেও শুনশান নিরবতার ভিতর দিয়ে সব কাজ হয়ে যাচ্ছে। আরে নির্বাচন নিয়ে উৎসব উৎসব ভাব না হলে কি জমে। আজকাল অবশ্য জাতীয় ভোটে এশিয় অনেককে দেখি আজেবাজে মন্তব্য দিয়ে দেশীয় স্টাইলে আক্রমণাত্মক হতে, সোশ্যাল মিডিয়া কাঁপাতে। গত জাতীয় ভোটের আগে প্রধান পত্রিকাগুলো এবং টিভির লিঙ্কগুলো পরে মন্তব্য নেয়া বন্ধ করে দিয়ে ছিল। এটা হয় তো সাউথ এশিয়া ক্যালচার এখনও রয়ে গেছে সমাজে ভোট নিয়ে মারামারি করা।
আমার কাছে এখন পশ্চিমা ক্যালচারে নিরবে প্রচার প্রচারণাই ভালোলাগে।
কেউ যখন নিজের কথা বলতে আমার কাছে আসল না। তখন আমিই নিজে নির্বাচনের একদিন আগে প্রার্থীদের চেনার জন্য অনলাইনে তাদের কোন প্রচার আছে কিনা দেখতে বসলাম। এবং পেয়ে গেলাম আধুনিক উপায়ে অনলাইনে সবাই নিজের পরিচয় এবং কাজ করতে চাওয়ার বিবরণ দিয়ে রেখেছেন। লেখার পাশাপাশি ভিডিওতে কথা বলেছেন কয়েক মিনিট ধরে ।
মেয়র পদে আগের মেয়র একাই আছেন। কোন প্রতিযোগী নেই। পুরানোদের সাথে নতুন কিছু প্রার্থী নতুন কথাবার্তা নিয়ে হাজির আছেন। তাদের দু একজনকে আমার বেশ ভালোলাগল।
তাদের সবার কথা শোনার পর কাকে কাকে ভোট দিব সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। অনলাইনেই দুই মিনিটে ভোট দেওয়াও শেষ করে ফেললাম। ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট হবে না নির্বাচনের দিন।
নির্বাচন হওয়ার পর অনলাইনে ফলাফলও দেখে নিলাম ঘন্টা দুইয়ের মধ্যে। জয়ী হওয়া প্রার্থীরা কোন আনন্দ মিছিল বের করল না। মারামারি একজন আরেক জনের লেগ পুলিং এর কোন খবর নাই। জয় পরাজয়ের খবর কোন প্রতিবাদ ছাড়াই সবাই মেনে নেয়। সমর্থকরাও রাস্তায় নামে না। আর মারামারি এসব তো কখনো শুনলাম না এত বছর এত ভোট দেখলাম। এরা কি আসলে জানে কেমন ভাবে নির্বাচন করতে হয় নাকি তাদের প্রতিনীধী পাঠানো দরকার আমাদের দেশে কি ভাবে প্রতিবাদ করতে হয় ভাঙ্গচুড় মারামারি করতে হয় তা শেখার জন্য।
আরেকটা বিষয় খেয়াল করেছি। কোন প্রার্থী যদি আক্রমাণাত্মক কথা বলে অন্য কোন প্রার্থীকে আটকে রাখতে চেষ্টা করে কোন বক্তব্য দেয়। বা শুধু নিজের কমিউনিটি, দল দেশ নিয়ে ভাবে এমন কিছু প্রকাশ পায় তার ব্যবহারে দল থেকে তাকে বাদ করে দেয়া হয়। কারণ একজন প্রতিনীধী হবেন সবার জন্য সমান। তিনি কোন ভাবেই নিজের পছন্দের কিছু করতে পারবেন না। তার কাজ হবে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, সমকামী নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য। নির্বাচনের পরিপন্থি কথা বার্তা একচোখা ব্যবহারের জন্যও প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যায় তাদের। এছাড়া যদি বড় কোন অপরাধের সাথে তারা জড়িত ছিল এমন সত্য উদঘাটিত হয় তবে জনগণের কাছে মাফ চেয়ে নিরব হতে হয় তাদের। তিনি নির্বাচন করার যোগ্য থাকেন না। নারী ঘটিত কোন অপরাধ শোনা গেলে তার রাজনৈতিক জীবন এক্কেবারে শেষ হয়ে যায়। এদিকে অনেক সময় কুকুর বিড়ালকেও নির্বাচনে প্রতিনীধী হিসাবে দাঁড় করিয়ে দেয় কেউ কেউ। দু চারটা ভোট তারাও পায়।
ফি জমা দিয়ে প্রার্থী যে কেউ হতে পারে । কিন্তু অপরাধ করে নির্বাচন করার কথা চিন্তা করার সুযোগ পায় না কেউ। ধরা পরেই যায় হয় তো অনেক আগের ঘটনা নিজেই ভুলে গেছে কখন কি অপরাধ করেছিল কোন নারীকে উত্যাক্ত করেছিল, বা অর্থ এদিক সেদিক করে ছিল এসব বড় অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয় জনগণের সেবা করার জন্য। এবং মনোবৃত্তি থাকতে হবে সেবামূলক। জনগণের মাথায় চড়ে বসা নয়। বরং জনগণের জন্য ভালো কাজ করে নিজের গুডউইল বাড়াতে পারেন চিরস্থায়ী হতে পারেন মানুষের মনে কাজের মাধ্যমে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ২:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



