প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে আমি কিছু মাছ নিজে শুটকি করি। আগে বাংলা দোকান থেকে কিনতাম। কিন্তু দেখলাম ডিডিটি দেওয়া খেয়েও মজা নাই। প্রায় সময় শখে কিনে অনেক কষ্ট করে রান্না করে ফেলে দিতাম। একসময় ভিয়েতনাম, থাই, চীনের শুটকি কিনেছি সেটাও শুধু পয়সা নষ্ট হয়েছে সময় নষ্ট করে রান্না করেছি কিন্তু খেতে পারিনি। তারপর বেশ কয়েক বছর ধরে নিজে মাছ শুটকি করা শুরু করলাম। ভালো করে লবন পানিতে ধুয়ে কড়া রোদে বেশ কিছুদিন ঝুলিয়ে রাখতাম বাইরে। আর ঢেকে দিতাম, মাছগুলো হালকা নেটের কাপড় দিয়ে যাতে পোকা, মাছি বসতে না পারে।
আমি কুয়াকাটায় দেখেছিলাম সাগরপাড়ে তারে ঝুলিয়ে রাখা সারি সারি হাজার হাজার মাছ শুটকি হচ্ছে রোদে পুড়ে। কিন্তু সে সব মাছ খোলা থাকত আর হাজার হাজার মাছি তার মধ্যে বসত। ভালো মাছ বা পচা মাছ শুটকি হচ্ছে কিনা তাও বোঝা যেত না।
ব্যবসায়িক ভিত্তিতে এই শুটকি প্রক্রিয়া যেমন তেমন যখন গুদামজাত করা হতো তখন তাতে পোকা লেগে যেত। আর এই পোকা থেকে রক্ষা করতে ডিডিটির মতন মারাত্মক মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর পাউডার ব্যবহার করা হতো শুটকি সুরক্ষা করতে। এই সব শুটকি প্যাকেটজাত হয়ে চলে আসে বিদেশের বাজারেও নানারকম ব্রান্ডের নামে।
আমি শুটকি খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছিলাম অনেক বছর।
তারপর নিজের বানানো শুটকি বেশ মজা করে খেতাম। তাজা মাছ কিনে এনে গ্রীষ্মে বানিয়ে রাখলে সারা বছর মোটামুটি চলে যেত।
কিন্তু এ বছর গ্রীষ্মটা কেটে গেল বর্ষাকালের মতন এত বৃষ্টির ভিতর যদিও এখানে বর্ষাকাল নাই কিন্তু এবছর আকাশ কালো করা মেঘ ঝুম বৃষ্টি বজ্রপাত সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে বর্ষাকাল চলছে।
কদিন আগে প্রখররোদের আলোয় গ্রোসারী করতে গেলাম কিন্তু পনের বিশ মিনিটের মধ্যে প্রকৃতি পুরো বদলে গেলো । এমন ঝুম বৃষ্টি দোকান থেকে বেরিয়ে গাড়ি পর্যন্ত যেতে পারছিলাম না। অনেকটা সময় অপেক্ষা করে থামার কোন নাম গন্ধ নেই তখন বৃষ্টির মধ্যেই দৌড় দিলাম গাড়িতে চড়ার জন্য।
ভালোই ভিজে গেলাম । যা হোক বাড়ি গিয়ে গোসল করে নেব। কিছুটা চলার পরে শুরু হলো শিলাবৃষ্টি। হাইওয়ের মধ্যে ধুমধাম শিলা পরছে গাড়িতে। আর এত জোড় বৃষ্টি যে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না খানিক দূরে। ওয়াইপার ফুল স্পিডে চলেও কাঁচ পরিস্কার করতে পারছিল না।
প্রতিদিনের এই বৃষ্টি ভেজা মেঘলা দিনের মাঝে গ্রীষ্মকাল শেষ হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে না এবার একটানা সাতদিন আর কড়া রোদের প্রচণ্ড গরম দিন পাবো। যা আমার শুটকি বানাতে সাহায্য করবে।
এখন দিনে বিশ বাইশ তাপমাত্রার গরম থাকলেও রাতে বারো তের তাপমাত্রা হয়ে যাচ্ছে । আর রাত থেকে সকাল শিশির ভেজা কুয়াশা ডাকা দিগন্ত দেখতে হয় যদি না বৃষ্টি না হয়।
এবছর গ্রীষ্মের শুরু দিকে চলল প্রচণ্ড খড়তাপে বনপোড়া আগুনের প্রভাব যার জন্য ঘরের বাইরে বের হতে পারলাম না ।ধোঁয়া আর পোড়া গন্ধ চারপাশ ঘিরে ছিল অনেক দিন। বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল কিন্তু এমন তুমুল বৃষ্টির মাঝে কিছুই করার উপায় নাই। আর বেড়েছে মশা প্রচণ্ড রকম এ বছর।
বাগান সাফ করতে গিয়ে মশার কামড়ে ঝালাপালা হয়ে গেছি। ভাগ্য এখানে ডেঙ্গি নাই। তবে কোভিট বাড়ছে আবার। সাবধানতা কত রকমের কত দিক থেকে।
গত শনিবার বসেছিলাম খোলা আকাশের নিচে সকালে আমরা কজনে মিলে। হঠাৎ বৃষ্টি নামল। তাড়াতাড়ি টেন্ট টানিয়ে তার ভিতরে কাটিয়ে দিতে হলো ঘন্টা তিনেক সময়। বৃষ্টি আমাদের কিছুই উপভোগ করতে দিচ্ছে না এবার বৃষ্টি ছাড়া।
টেন্টের ভিতর বসে শুনছিলাম ঝুম বৃষ্টির গান। কয়েকটা ফুটো ছিল টণ্টেে সেদিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল অন্ধকার আকাশে তারা। যদিও দুপুর সময়। ভাবতে দোষ কি কল্পনায় নিজের মতন উড়াল দেয়াই যায়।
বড় একটা হা্ইওয়ের মাঝখানে সিঙ্কহোল হয়ে গেছে কদিন আগে। রাস্তা বন্ধ ভাগ্য কেউ ভিতরে পরে যায়নি। আগে এমন ঘটনায় কত রূপকথার গল্প শুনা যেত। বেশ অন্যরকম কিছু ভাবার সুযোগ ছিল সাইন্স যে কি করল কল্পনার জগতে ভেসে যাওয়ার সুযোগটাই রাখল না।
এবার নাকি ভালো শীত পরবে শুনছি আবহাওয়া বার্তায়। যাক অপেক্ষা করি বরফের পাহাড়ে গড়াগড়ি খাওয়ার।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১২:৪৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



